সাত সকালে কলকাতা ও জেলায় ইডির অভিযান
ঝাড়গ্রাম, উত্তর 24 পরগনা, নদিয়া এবং কলকাতার একাধিক ঠিকানায় চলছে তল্লাশি অভিযান । বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ।

Published : September 8, 2025 at 10:55 AM IST
কলকাতা, 8 সেপ্টেম্বর: বালি পাচার মামলায় নামমাত্র নয়, এবার জোরকদমে তদন্তে নামল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) । সোমবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে তল্লাশির ঝড় । কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় একযোগে এদিন অভিযান চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা । তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা । জানা গিয়েছে, তদন্তকারীদের এই অভিযানের লক্ষ্য, বালি কারবারের সঙ্গে জড়িত আর্থিক অনিয়ম ও সম্ভাব্য অর্থপাচারের সূত্র খুঁজে বের করা ৷
ইডি সূত্রে খবর, রবিবার গভীর রাতে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অভিযানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তদন্তকারীরা । তাঁদের সঙ্গে মোতায়েন ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী । সোমবার ভোর হতেই প্রায় একই সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় একযোগে ইডির অভিযান শুরু হয় । এই মুহূর্তে ঝাড়গ্রাম, উত্তর 24 পরগনা, নদিয়া এবং কলকাতার একাধিক ঠিকানায় চলছে তল্লাশি অভিযান ।
কলকাতায় বেহালার সখেরবাজারের জেমস লং সরণিতে একটি সংস্থার অফিসে ও রিজেন্ট কলোনিতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার এক কর্মীর বাড়িতে বিশেষ নজর দিয়েছেন তদন্তকারীরা । সকাল ছ'টার আগে থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ইডির তদন্তকারী অফিসাররা ওই বাড়ি ঘিরে রেখে তল্লাশি চালাচ্ছেন ৷ এখনও পর্যন্ত ফ্ল্যাটের ভিতর তদন্তকারী অফিসাররা রয়েছেন ৷ তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন বাড়ির সদস্যদের ৷ ঘটনাস্থলে রয়েছে হরিদেবপুর থানার পুলিশও । তবে সঠিক কার ঠিকানায় এই অভিযান চলছে, তা নিয়ে এখনও কোনও সরকারি তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি ।
জানা গিয়েছে, সবচেয়ে বড়সড় তল্লাশি চলছে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরে । সেখানে জহিরুল শেখ নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে ভোর থেকে চলছে ইডির অভিযান । একসময় তিনি ভিলেজ পুলিশ হিসেবে কাজ করতেন । তবে পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বালির কারবারে জড়িয়ে পড়েন । সুবর্ণরেখা নদীর পাড়ে অবস্থিত তাঁর তিনতলা বাড়িতে তল্লাশি চলছে । শুধু বাড়ি নয়, তাঁর গাড়িতেও চলছে খুঁটিনাটি অনুসন্ধান । বিভিন্ন নথি ও কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে ।
এদিন ঝাড়গ্রাম জেলাজুড়ে মোট ছয়টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি । ভোর থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় চলছে এই অভিযান । অভিযানস্থলের আশেপাশের বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ এত সংখ্যক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিক ও বাহিনী এলাকায় আসায় তাঁরা চমকে গিয়েছেন । যদিও ইডি-র তরফে এদিনের অভিযানের বিষয়ে কোনও সরকারি বিবৃতি এখনও পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি ।

ইডি সূত্রে খবর যে তদন্তকারীরা মনে করছেন, বালি পাচারের সঙ্গে যুক্ত এই নেটওয়ার্ক শুধু ঝাড়গ্রাম বা সীমান্তবর্তী এলাকা নয়, কলকাতা এবং অন্যান্য জেলায়ও ছড়িয়ে আছে । অর্থ পাচারের একাধিক সূত্র জড়িত থাকতে পারে । তাই বিভিন্ন জেলায় একযোগে অভিযান চালানো হচ্ছে ।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় দীর্ঘদিন ধরেই বালি পাচার নিয়ে অভিযোগ উঠছে । নদীপথে বালি উত্তোলন ও পাচারের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার কারবার গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ । এই কারবারের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলেরও যোগ থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা করছে তদন্তকারী সংস্থা । ফলে ইডি-র এই তল্লাশি অভিযান যে আগামিদিনে আরও বড়সড় পরিসরে বিস্তৃত হবে, তা বলাই বাহুল্য ।

সোমবার দিনভর ইডির অভিযান চলবে বলে জানা গিয়েছে । ইতিমধ্যেই তল্লাশি চলাকালীন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি । সেগুলি খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর । তবে কারা কারা এই পাচারচক্রের সঙ্গে যুক্ত, তার পূর্ণাঙ্গ ছবি এখনও পরিষ্কার নয় । তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ ইডি কর্তারা ।

