আসানসোল, 8 এপ্রিল: কয়লা উৎপাদনে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা সংস্থা ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড বা ইসিএল তার নিজের সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে দিল । 2024-25 আর্থিক বর্ষে ইসিএল 52.03 মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করেছে । সংস্থার সিএমডি সতীশ ঝা জানিয়েছেন, জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে এই প্রথমবার কয়লা উৎপাদনে সর্বাধিক উৎপাদন করল ইসিএল । সেক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস রচিত হল । যদিও পর্যাপ্ত রেল রেক না-মেলায় কয়লা ডেসপ্যাচে ঘাটতি ছিল বলে জানিয়েছেন সতীশ ঝা ।
উৎপাদনে সেরা ইসিএলের কোন এরিয়া ?
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে 25টি খোলামুখ খনি, 50টি সম্পূর্ণ ভূগর্ভস্থ খনি এবং 10টি খোলামুখ ও ভূগর্ভস্থ মিশ্রিত খনি মিলিয়ে মোট 85টি খনি আছে । মোট 11টি এরিয়ার মধ্যে প্রথম যে তিনটি এলাকায় সবচেয়ে বেশি কয়লা উৎপাদন হয় সেগুলি হল, রাজমহল, শোনপুর বাজারি এবং সালানপুর । রাজমহল এরিয়াতে 18 মিলিয়ন টন, শোনপুর বাজারিতে 12.5 মিলিয়ন টন ও সালানপুরে 5 মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন হয়েছে ।
উৎপাদনে ঘাটতি হল কাদের ?
ইসিএলের সিএমডি সতীশ ঝা জানিয়েছেন, "2024-25 অর্থবর্ষে ইসিএলে কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল 54 মিলিয়ন টন । আমাদের দুটি প্রকল্পে, ঝাঁঝরা এবং সালানপুর এরিয়ার মোহনপুরে, কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা যায় । ঝাঁঝরাতে লং ওয়াল মেশিনের এক প্যানেল থেকে অন্য প্যানেলের শিফটিংয়ের কারণে সেখানে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকার পর জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয় ৷ ফলে সেখানে দুই মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদনের ক্ষতি হয়েছে এবং সালানপুর এরিয়ার মোহনপুর খোলামুখ খনিতে ঠিকা সংস্থার কারণে আমাদের সেখানে দুই মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদনে ক্ষতি হয়েছে । আমরা যদিও অন্যান্য খনি থেকে দুই মিলিয়ন টন কয়লার ঘাটতি পূরণ করতে পেরেছিলাম । কিন্তু বাকি দুই মিলিয়ন টন কয়লার ঘাটতি পূরণ হয়নি । ফলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা 54 মিলিয়ন টনের জায়গায় আমরা 52.3 মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করতে পেরেছি, যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার 96.35 শতাংশ ।"

যদিও এই উৎপাদন ইসিএলের জন্মলগ্ম থেকে কখনও হয়নি বলে ইসিএল সূত্রেই জানা গিয়েছে । আর তাই কয়লা উৎপাদনে সর্বকালীন রেকর্ড করেছে ইসিএল । কোল ইন্ডিয়ার অন্যান্য কয়লা সংস্থার তুলনায় ইসিএল কয়লা উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ।
আগামীর লক্ষ্য
ইসিএলের সিএমডি সতীশ ঝা জানিয়েছেন, "আগামী অর্থবর্ষে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে 49 মিলিয়ন টন । অর্থাৎ আমাদের আরও 7 টন অতিরিক্ত কয়লা উৎপাদন করতে হবে ।" ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাঁঝরা প্রজেক্ট সঠিক অর্থে চালু হয়েছে । আউটসোর্সিং ঠিকা সংস্থাগুলির সমস্যাও মিটে গিয়েছে । শুধু তাই নয়, 23টি ঠিকাদারি সংস্থা নিয়মমফিক কাজ না-করায় তাদের সরানো হয়েছে । ফলে আগামীর এই লক্ষ্যমাত্রা সহজেই পূরণ করা যাবে বলে আধিকারিকদের অভিমত ।

রেল রেক মিলছে না, ডেসপ্যাচে সমস্যা
কিন্তু কয়লা উৎপাদনের ক্ষেত্রে রেকর্ড হলেও সম্পূর্ণ কয়লা ইসিএল ডেসপ্যাচ বা প্রেরণ করতে পারেনি বলে ইসিএলের সিএমডি সতীশ ঝা জানিয়েছেন । কয়লা পড়েই থাকছে খনিতে । ফলে বিভিন্ন কল কারখানা, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র-সহ অন্যান্য জায়গায় কয়লা সঠিক অর্থে পৌঁছচ্ছে না ।
সতীশ ঝা জানান, "আমরা কয়লা ডেসপ্যাচ করতে পেরেছি 49.73 মিলিয়ন টন । অর্থাৎ আমরা কয়লা উৎপাদন করছি, তবে সম্পুর্ণ প্রেরণ করতে পারছি না । আগামী দিনে যেভাবে কোল ইন্ডিয়ার কয়লা উৎপাদন বাড়ছে, সব কোম্পানির জন্য ডেসপ্যাচ একটা বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে । প্রয়োজনমাফিক রেল রেক পাই না আমরা । কয়লামন্ত্রকেও এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে । কোল ইন্ডিয়ার লক্ষ্যমাত্রা 900 মিলিয়ন টন করা হয়েছে ৷ কিন্তু উৎপাদন করলেও তা প্রেরণ করা যাচ্ছে না রেল রেক না-পাওয়ার কারণে । তাই যত রেল রেক পাওয়া যাবে, ততই কয়লার উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে গতি আসবে কয়লা প্রেরণেও ।"