কলকাতা, 18 এপ্রিল: লেডিস স্পেশাল মাতৃভূমি লোকালে এবার সফর করতে পারবেন পুরুষ যাত্রীরাও। পূর্ব রেলের শিয়ালদা বিভাগের মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত মাতৃভূমি লোকালে জেনারেল কামরা করার ভাবনাচিন্তা করছে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।
জনসংখ্যার নিরিখে এখন চিনকে ছাড়িয়েছে ভারত। লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যা প্রভাব বোঝা যায় লোকাল ট্রেনের ভিড় দেখলে। তাই ট্রেনেও মহিলা ও পুরুষ নির্বিশেষে বাড়ছে যাত্রী সংখ্যা। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ শহর থেকে শহরতলীতে যাতায়াত করেন। প্রতিদিন প্রায় 15 থেকে 18 লক্ষ যাত্রী শিয়ালদা স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। রেল বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে দিনের ব্যস্ত সময় প্রতিটি ইএমইউ লোকালে গড়ে প্রায় তিন হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। আর মোট যাত্রী সংখ্যার মধ্যে 25 শতাংশ মহিলা যাত্রী।
তাই মহিলা যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি শিয়ালদা বিভাগে ইএমইউ (ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) আরও একটি কোচ মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে ৷ একটি 12 বগির ট্রেনে প্রথম এবং একেবারে শেষ কামরাটি যথাক্রমে চালক এবং গার্ডের জন্য বরাদ্দ থাকে। তারপরের কামরা অর্থাৎ সামনের এবং পিছনের দিকের দ্বিতীয় কামরা দু'টি মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই নিয়ম প্রথম থেকেই ছিল। কিন্তু এবার নতুন নিয়ম অনুসারে তৃতীয় কামরার তিনটি ভাগে বিভক্ত ৷ তা হল-জেনারেল, ভেন্ডার এবং বিশেষভাবে সক্ষম যাত্রীদের জন্য। এবার এই জেনারেল অংশটিকে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে । অর্থাৎ একবার থেকে মোট তিনটি কামরা মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে।

কিন্তু, এই নতুন নিয়ম লাগু হওয়ার পর ক্ষোভ ছড়িয়েছে পুরুষ যাত্রীদের মধ্যে। এই নিয়ম চালু হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভ এবং অবরোধ চালাচ্ছেন যাত্রীদের একাংশ।
উল্লেখ্য, কেন তৃতীয় কামরার জেনারেলের অংশটিকে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে এই বিষয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন বারুইপুর-লক্ষ্মীকান্তপুর সেকশনের কিছু মানুষজন ৷ তারপরই তাঁরা ট্রেন চলাচল অবরুদ্ধ করেন। অন্যদিকে, বারুইপুর-ডায়মন্ড হারবার সেকশনের বেশ কয়েকটি স্টেশনে ও এই একই ইস্যুতে যাত্রীদের একাংশ ট্রেন অবরোধ করেন।
তবে, গতকাল (বৃহস্পতিবার) শিয়ালদা শাখার DRM দীপক নিগম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, মহিলাদের জন্য যে আরও একটি কোচ সংরক্ষণ করা হয়েছে সেটিকে কোনও মতেই কমানো যাবে না। কারণ বহুদিন ধরেই মহিলা যাত্রীরা বরাবর কোচের আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। তাই এমনটা নয় যে, হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বরং অনেক বিবেচনা এবং বিশ্লেষণের পরেই মহিলাদের জন্য একটি সংরক্ষিত কোচের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । কারণ মোট যাত্রী সংখ্যার 25 শতাংশই মহিলা ৷
তিনি আরও জানান, তাই এই অনুপাতকে মাথায় রেখে তাঁদের জন্য আরেকটি কামরা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল। এছাড়াও ব্যস্ত সময় মহিলা যাত্রীরদের সংখ্যা এতটাই থাকে যে, কোন স্টেশনে ট্রেন থামল, নামা-ওঠার ক্ষেত্রে চরম সমস্যার মুখে পড়তে হয়। ভিড় ঠেলে দরজার কাছেই আসতে পারেন না অনেকেই তাই তাঁরা নিজেদের স্টেশনেও নামতে পারেন না অনেক সময়। ভিড়ের জন্য অনেক সময় একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যায়। অনেকেই আহত হন। এমনকী দু'একজনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।
তাঁর কথায়, "আগে যখন 9 কোচের ট্রেন ছিল তখন দু'টি কোচ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকত এবং 7টি বগিতে পুরুষ যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু, এখন 12 বগি ট্রেন হওয়ার পরে তিনটি বগি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে এবং বাকি 9টি বগিই পুরুষ যাত্রীরা জন্য রাখা হয়েছে।" রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু পুরুষ যাত্রীদের অশালীন ব্যবহারের জন্য জেনারেল কোচ ফাঁকা থাকলেও মহিলারা তাতে উঠতে চান না। ভিড় ঠেলে মহিলা কামরাতেই ওঠেন কোনওরকমে। তাই সবদিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে দীপক নিগম জানান, যে লেডিস স্পেশাল অর্থাৎ মাতৃভূমি লোকালের বেশ কয়েকটি কোচ ফাঁকা থাকে। তাই ওই ট্রেনের একটি বা দুটি কোচকে জেনারেল কোচ হিসেবে চালানো যায় কি না সেই বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও বিষয়টি এখন একেবারেই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে কারণ আগে অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা চালানো হবে এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি যদি অন্য রুটে আরও লোকাল ট্রেন চালানোর প্রয়োজন পড়ে তাহলে সেই রুটে লোকাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে পারে কর্তৃপক্ষ।