মালদা, 13 এপ্রিল: এগিয়ে আসছে ছাব্বিশের ভোট ৷ রে রে করে ময়দানে নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবির ৷ বিভিন্ন ইস্যুতে এখন থেকেই রাজ্যের শাসকদলকে কোনঠাসা তারা বদ্ধপরিকর ৷ সম্প্রতি চাকরি বাতিল ও ওয়াকফ প্রতিবাদে হিংসার ঘটনায় বেশকিছুটা ব্যাকফুটে ঘাসফুল শিবির ৷ এই পরিস্থিতিতে শাসকের বড় অস্ত্র প্রশাসন ৷ তাই কি মানুষের সমস্যা সমাধানে হঠাৎ গ্রামের পর গ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন মালদার জেলাশাসক ? বিরোধীরা অন্তত সেটাই বলছে ৷
শনিবার জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া হবিবপুর ব্লকের কানতুর্কা ও জাজৈল গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রাম পরিদর্শন করেন ৷ কখনও স্কুল, কখনও রেশন দোকান, কখনও বা সারের দোকান, মন্দিরে ঢুকে পড়েন ৷ সঙ্গে ছিলেন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা ৷ ছিলেন দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং পুলিশ ৷ জেলাশাসক এদিন দুয়ারে রেশন শিবির, আবাস যোজনায় পাওয়া ঘরের পরিস্থিতি, কালীমন্দির যাওয়ার রাস্তা, পার্কিং, পথবাতি-সহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখেন ৷ কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে ৷ আইসিডিএস সেন্টারে রান্না করা খাবারের মানও পরীক্ষা করে দেখেন তিনি ৷ জেলার প্রশাসনিক প্রধানকে হাতের কাছে পেয়ে এলাকায় সেচ ব্যবস্থা চালু করার আবেদন জানান স্থানীয় মানুষজন ৷ বিভিন্ন সমস্যা খতিয়ে দেখে সঙ্গে থাকা হবিবপুরের বিডিও মনোজ কাঞ্জিলালকে সমস্ত কিছু নোট করে রাখতে বলেন জেলাশাসক ৷

কানতুর্কা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রমেন বর্মন জানান, “আজ জেলাশাসক আমার পঞ্চায়েত এলাকায় এসেছিলেন ৷ তিনি এলাকার স্বাস্থ্যবিধানের পরিস্থিতি, আইসিডিএস সেন্টার, বাংলা আবাস যোজনার বাড়ি, দুয়ারে রেশন ব্যবস্থার চালের মান আর প্রাইমারি স্কুলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন ৷ কাতলাপুকুর এলাকার মানুষজনের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি ৷ মানুষের যা যা সমস্যা রয়েছে তার সুরাহা করার আশ্বাস দিয়েছেন ৷ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি ৷”
অন্যদিকে, জাজৈল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান টুম্পা মণ্ডল রায় বলেন, “আজ জেলাশাসক জেলার প্রসিদ্ধ মানিকোড়া কালীমন্দির পরিদর্শন করেছেন ৷ মন্দিরে যাতায়াতের মূল রাস্তাটির সম্প্রসারণ, মন্দির সংলগ্ন জায়গায় সৌন্দর্যায়নের পদক্ষেপ করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ কালীপুজোয় এই মন্দির সংলগ্ন জায়গায় বড় মেলা বসে ৷ সেই সময় পার্কিং এবং শৌচাগারের সমস্যা দেখা দেয় ৷ সেই সমস্যা মেটাতেও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলার প্রশাসনিক প্রধান ৷”
জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানান, “আজ হবিবপুর ব্লকের কানতুর্কা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করলাম ৷ সেখানে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো হয়েছে কি না এবং চলছে কি না তা খতিয়ে দেখেছি ৷ দুয়ারে রেশন ব্যবস্থা, আইসিডিএস সেন্টার, সুস্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুলের পঠনপাঠন, মিড ডে মিল-সহ সবকিছু খতিয়ে দেখা হয়েছে ৷ কিছু দোকানও আজ পরিদর্শন করেছি ৷ হার্ডওয়্যারের দোকানে নির্মাণ সামগ্রীর দাম ঠিক রয়েছে কি না, সারের দোকানে মালপত্র সঠিক রয়েছে কি না তা দেখা হয়েছে ৷ জাজৈল গ্রাম পঞ্চায়েতের মানিকোড়া কালীমন্দিরে প্রচুর মানুষ সারা বছর ধরে আসেন৷ এখানে বেশকিছু কাজ করতে হবে ৷ তার জন্য প্রশাসন 50 লাখ টাকার প্রকল্প তৈরি করেছে ৷ মানুষের জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা করা হবে ৷”
তবে বিরোধীদের দাবি, বর্তমানে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে রাজ্যের শাসকদলের ৷ তাই মানুষের নজর অন্যদিকে ঘোরাতে প্রশাসনকে মাঠে নামানো হয়েছে ৷ বিজেপির জেলা সভাপতি অজয় গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “চাকরিহারা শিক্ষকদের নিয়ে এখন দিশেহারা রাজ্য সরকার ৷ তারই মধ্যে মুর্শিদাবাদে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে পরিষ্কার হয়েছে, একশ্রেণির মানুষের উপর থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি সরে গিয়েছে ৷ মানুষ এখন তৃণমূলের উপর ক্ষুব্ধ ৷ তাই মানুষের নজর ঘোরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক কর্তাদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছেন ৷ তবে এসব করে কোনও লাভ হবে না ৷ মানুষ সব বোঝে ৷ সবকিছুর জবাব দিয়ে দেবে ৷”