কলকাতা, 17 এপ্রিল: জগন্নাথ বললেই মনে পড়ে পুরীর মন্দির আর তার পাশে সারি সারি খাজার দোকান। দিঘার মাটিতে যখন জগন্নাথের মন্দির গড়ে উঠছে, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, এখানেও নিশ্চয় মিলবে পুরীর সেই বিখ্যাত খাজা! কিন্তু না, তা হচ্ছে না এখানে। বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে এবার দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে ভোগে থাকবে প্যাঁড়া আর বাংলার গজা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার দিঘা মন্দির উদ্বোধনের আগে এই সংক্রান্ত প্রস্তুতি বৈঠকে বলেন, "আমাদের বাংলার রীতি অনুযায়ী প্যাঁড়া আমরা দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে দেব। সঙ্গে থাকবে বাংলার গজা, যাতে ভক্তরা সহজেই শুকনো মিষ্টি বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন।" এই ঘোষণায় যেমন খাজা-প্রেমীদের মনে খানিক হতাশা, তেমনি বাংলার ঐতিহ্য ও বাংলার মিষ্টি প্রেমীদের মনে নতুন আনন্দ জাগিয়ে তুলেছে।
এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ভোজন রসিকদের রুচির প্রশ্ন নয়, বরং বাংলার শক্তি-সাধনার ধারাকে সম্মান জানানোর দিকেও এক বড় পদক্ষেপ। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, তারাপীঠ— বাংলার শাক্তপীঠগুলিতে প্যাঁড়া শুধু প্রসাদ নয়, এক গর্বের স্মারক। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, পুরীর জগন্নাথের মহাপ্রসাদের সঙ্গেও মা দক্ষিণা কালীর একটা যোগ রয়েছে। বিষয়টি আরও খোলসা করেন পুরীর মন্দিরের সেবায়েত রাজেশ দ্বৈতপতি। তিনি বলেন, জগন্নাথের ভোগ মা দক্ষিণা কালীকে নিবেদন না করলে পূর্ণতা পায় না, তা মহা ভোগ হয় না। মূলত, সেই ঐতিহ্যকেই যেন দিঘার নতুন মন্দিরে বাংলার মিষ্টি দিয়ে মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে।
শুধু প্যাঁড়া-গজাতেই থেমে থাকছে না পরিকল্পনা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পুরীর ধ্বজার স্টলের আদলে দিঘাতেও তৈরি হবে ধ্বজার দোকান। পুরীর কারিগরদের এনে এই স্টলগুলির নির্মাণে জোর দেওয়া হবে। এছাড়াও, ভবিষ্যতে অনলাইনে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে, যাতে রাজ্যের বাইরে থাকা ভক্তরাও যুক্ত হতে পারেন এই নতুন শ্রীক্ষেত্রের সঙ্গে।
দিঘার মাটি এবার শুধু সমুদ্রের নয়, হতে চলেছে জগন্নাথ-ভক্তি, বাংলার স্বাদ ও শাক্ত-সংস্কৃতির এক নতুন মিলনক্ষেত্র। খাজার বদলে গজা-প্যাঁড়া— এ যেন বাংলার মিষ্টি মন, নতুন জগন্নাথ তীর্থে তারই মধুর সূচনা। তবে খাজা প্রেমীদের অবশ্যই মন খারাপ। কারণ, পুরীর কাকাতুয়া বা বিখ্যাত খাজা প্রস্তুতকারকদের সুস্বাদু খাজা মিলবে না দিঘাতে। তার জন্য সেই যেতে হবে পুরীতেই।
কুম্ভ থেকে শিক্ষা, দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে বাড়তি সতর্ক মমতা