ETV Bharat / state

ভাগাড়ের মাটির নীচে মিথেন গ্যাসের ফাঁদ, প্রবল ধসের মুখে বেলগাছিয়া; ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ বাসিন্দারা - BELGACHIA DUMPING GROUND

ভাগাড় ধসের রেশ কাটেনি ৷ একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে ৷ আতঙ্কের মধ্যেও ঘর ছাড়তে নারাজ বেলগাছিয়ার বাসিন্দারা ৷ যদিও পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ৷

belgachia dumping ground
ভাগাড়ে ধসে জলের পাইপ লাইন ফেটে বিপত্তি (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : March 24, 2025 at 8:08 PM IST

11 Min Read

হাওড়া, 24 মার্চ: ভাগাড় ধসের ফলে তৈরি হওয়া জলসংকট খানিকটা মিটলেও হাওড়ার বেলগাছিয়ায় উদ্বেগের মেঘ এখনও কাটেনি । এলাকা জুড়ে একাধিক বাড়িতে ফাটল লক্ষ্য করা গিয়েছে । মিথেন গ্যাসের ফলে যেকোনও সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন ভূবিজ্ঞানীরা ৷ যদিও এই সম্ভাবনার কথা শুনেও নিজেদের ভিটে ছাড়তে নারাজ ভাগাড়ের আশপাশের বসবাসকারীরা । বরং সোমবার সকাল থেকেই তাঁরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান । পুনর্বাসনের দাবিতে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন তাঁরা ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবারই এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের পুর ও নগরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন তিনি ৷ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বহু বছর ধরে জমে থাকা ভাগাড় সরানোর কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে । তবে এখানকার মাটি একেবারেই ব্যবহারযোগ্য নয় । সোমবার সারাদিন জুড়ে ওই এলাকায় সার্ভে চলেছে । মঙ্গলবার পুর ও নগরন্নয়ন দফতরে বৈঠকে ঠিক হবে ভাগাড় থেকে সরিয়ে বাসিন্দাদের কোথায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে ।

ভাগাড়ের মাটির নীচে মিথেন গ্যাসের ফাঁদ, প্রবল ধসের মুখে বেলগাছিয়া; ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ বাসিন্দারা (ইটিভি ভারত)

এ বিষয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "এখানে পুরো অঞ্চলটাই ভাগাড়, এখানে কোনও মাটি নেই । মানুষ অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলেছিল । তাই খালি জমি চিহ্নিত করে, সেখানেই ওইসব বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে । কেন্দ্রীয় সরকার গ্রাম বা শহরের জন্য কোনও বরাদ্দ দিচ্ছে না । তাই রাজ্য সরকার নিজেদের তহবিল থেকেই পুরো অর্থের ব্যবস্থা করছে । অনেক বছর ধরে এই মাটি পড়ে থাকায় তা শক্ত আর ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে । আমরা যখন এই অংশ কাটছি, তখন দেখা যাচ্ছে, অনেক জায়গা আলগা হয়ে যাচ্ছে, আবার কিছু জায়গায় ভেঙেও পড়ছে । এর ফলে জমির উপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে । তাই দ্রুত প্রসেসিং-এর কাজ শুরু করা দরকার ।"

পাশাপাশি, কেএমডিএ-র তরফে জানানো হয়েছে, বিপজ্জনক অঞ্চলগুলিতে অবিলম্বে শিট পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে । যেসব এলাকায় বর্জ্য জমা হয়েছে, সেগুলি ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে প্রসেসিং-এর ব্যবস্থা করা হবে । যেখানে জায়গা ফাঁকা হবে, আগামী দু’মাসের মধ্যে সেখানে প্রসেসিং ইউনিট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । ফিরহাদ হাকিম জানান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের কাজও মঙ্গলবার থেকেই শুরু করবে কেএমডিএ ।

belgachia dumping ground
পাইপ লাইন ফেটে যাওয়ায় পানীয় জলের সংকট দেখা দেয় (নিজস্ব ছবি)

তিনি আরও বলেন, "নগরোন্নয়ন দফতর এবং কেএমডিএ যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এখানে পোর্টেবল কম্প্যাক্টর বসানোর মতো জায়গা কোথায় পাওয়া যেতে পারে, সেই নিয়ে দ্রুত কর্মসূচি নেওয়া হবে । সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই । শহরের বিভিন্ন ফাঁকা জায়গা চিহ্নিত করে দ্রুত প্রসেসিং এবং পুনর্বাসন দুই-ই শুরু করতে হবে ।"

belgachia dumping ground
বেলগাছিয়ার ভাগাড় (নিজস্ব ছবি)

মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে 2-3 বছর সময় লাগবে । তবে বায়ো-মাইনিং পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলবে । ফিরহাদ হাকিমের কথায়, "মিথেন গ্যাস মানুষের জন্য ক্ষতিকর । আমরা চাই, দ্রুত এই গ্যাস নির্গমন বন্ধ করে পুরো এলাকা পরিষ্কার করে ফেলা হোক । আমরা জাদু করতে পারি না, কিন্তু পরিকল্পনা মতো কাজ চললে কয়েক বছরের মধ্যেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে ।"

belgachia dumping ground
ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ বাসিন্দারা (নিজস্ব ছবি)

এদিকে সোমবার সকালেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছে যান ভাগাড়ের আশেপাশে । মাইকিং করা হয় তাঁদের তরফে ৷ মাটির গুণমান পরীক্ষা করে দেখেন বিশেষজ্ঞরা । রিপোর্ট সন্তোষজনক হলে শুরু হবে বায়ো মাইনিং পদ্ধতিতে ভাগাড় পরিষ্কারের কাজ । সেজন্য দ্রুত এলাকা ফাঁকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে ।

belgachia dumping ground
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফে মাইকিং করা হয় (নিজস্ব ছবি)

পাশের একটি ক্লাবে বাসিন্দাদের অস্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে । তবে এই প্রস্তাব মানতে নারাজ অধিকাংশ পরিবার । তাঁদের আশঙ্কা, একবার এলাকা ছাড়লে আর নিজেদের ঘরে ফেরার উপায় থাকবে না । অনেকেরই প্রশ্ন, বহু কষ্টে ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করেছেন । এখন সেগুলি ভেঙে দেওয়া হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথায় মিলবে ?

বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে ধসে বিপর্যয়

গত 20 মার্চ বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে ধস নামে । মুহূর্তের মধ্যেই তা ভয়াবহ আকার নেয় । ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তর হাওড়া ও শিবপুর কেন্দ্রের প্রধান জল সরবরাহ লাইন । তীব্র জলসংকটে পড়ে যান বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ । কলকাতা পুরনিগম এবং উত্তরপাড়া পুরসভার তরফে জল ট্যাঙ্কার পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয় । তারই মাঝে ভাগাড় সংলগ্ন রাস্তায় দেখা দেয় বড় বড় ফাটল । আশপাশের বহু বাড়ির দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে ৷ শনিবার বিকেল থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে ৷ নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায় । বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন তাঁদের সুরক্ষা নয়, উচ্ছেদেই বেশি আগ্রহী । তাই পুনর্বাসনের লিখিত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত বাড়ি ছাড়তে রাজি নন স্থানীয়রা ।

মাটির তলায় জমা বিপদ

হাওড়ায় বিপদের মেঘ ক্রমশ ঘনাচ্ছে । বেলগাছিয়ার ভাগাড়ের মাটির তলায় জমছে বিপজ্জনক মিথেন গ্যাস । ভূবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভাগাড়ে স্তূপ হয়ে থাকা আবর্জনা ও পশুপাখির মৃতদেহ পচে মিথেন তৈরি হয়েছে । মাটি এত বছর ধরে সেই তরল বর্জ্য শোষণ করে শক্তি হারিয়েছে । মিথেন গ্যাস জমে মাটির তলদেশ ফাঁপা হয়ে পড়ছে । পরিস্থিতি অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণে না আনলে বড়সড় বিপর্যয় যে অনিবার্য, সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা । অতিরিক্ত বিপদ বাড়াচ্ছে গঙ্গা । ভাগাড় সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গার জল মাটির তলায় মিশে গ্যাসের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করছে । তাতে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে মাটির ভিত । ভূবিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, অবিলম্বে ভাগাড় বন্ধ এবং মাটির তলা থেকে মিথেন নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে গোটা এলাকা জুড়ে ধস নেমে আসবে ।

আইন উপেক্ষা

স্থানীয়দের দাবি, 50 বছর ধরে রয়েছে বেলগাছিয়ায় ভাগাড় ৷ দুই-তিন বছর ধরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পুরনো বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে ৷ কত বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত হয়েছে তার হিসাব নেই ৷ পরিবেশবিদরা প্রশ্ন তুলেছেন, পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্ত নিয়মকানুন অগ্রাহ্য করে কীভাবে এত বছর ধরে ভাগাড়ে জৈব ও অজৈব আবর্জনা একসঙ্গে স্তূপীকৃত হল ? প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে এত বড় গাফিলতি এতদিন চলল কী করে ? তবে সেই প্রশ্নের উত্তর আজও অধরা ।

আতঙ্কে দিন কাটছে হাওড়াবাসীর

পর্যাপ্ত জল নেই, বিদ্যুৎ নেই ৷ রাস্তায় ফাটল, বাড়ির দেওয়ালে ফাটল । আতঙ্কে দিন গুনছেন হাওড়াবাসী । এই পরিস্থিতিতে বারবার সতর্ক করে চলেছেন বিশেষজ্ঞরা । ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, এয়ার অ্যান্ড ওয়াটারের সভাপতি সাধনকুমার ঘোষ রবিবার বেলগাছিয়া ভাগাড় পরিদর্শন করে স্পষ্ট জানিয়েছেন, অবিলম্বে ভাগাড় বন্ধ না করলে সামনে বড় বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী । তিনি বলেন, "এলাকার মাটির সহনক্ষমতা শেষ । ভাগাড় বন্ধ না করলে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ধস নামা শুধুই সময়ের অপেক্ষা ।"

চলছে দোষারোপের খেলা

ভাগাড়ের পচা আবর্জনার দুর্গন্ধে ভারী হাওড়ার বাতাস । এই অবস্থায় পর্দার আড়ালে চলছে দোষ চাপানোর পালা । এক পক্ষ অন্য পক্ষের দিকে আঙুল তুলছে ৷ স্থানীয়দের মতে, সমাধান অধরাই । প্রশ্ন উঠছে, এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝেই কি বেলগাছিয়ার মানুষের সমস্যার সমাধান অধরাই রয়ে যাবে ?

নজরদারির অভাবে বিপর্যয় ?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভাগাড়ে পাইপলাইন মেরামতির সময় আচমকা ধস নামে । নতুন করে ফাটল ধরে দেওয়ালে । লিলুয়া থেকে শিবপুর, সি রোড থেকে বি রোড-উত্তর হাওড়া কার্যত জলশূন্য হয়ে পড়ে । স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীত সান্যাল ও জগদীশ হালদারদের অভিযোগ, ভাগাড়ে দীর্ঘদিন কোনও নজরদারি ছিল না । এক সময় ভাগাড়ের মধ্যে গ্যাস নিষ্কাশনের পাইপলাইন থাকলেও তা আজ অবহেলায় চাপা পড়ে রয়েছে । প্রশাসনের নজর এড়িয়ে আবর্জনার পাহাড় এতটাই ভারী হয়েছে যে মাটি তা আর ধারণ করতে পারছে না ।

দায় কার?

এই ঘটনায় উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী সরাসরি পুর প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন । তাঁর বক্তব্য, কেএমডিএ-র নতুন পাইপলাইনের মাত্র 70 মিটার কাজ বাকি ছিল । সেই কাজ শেষ হলেই আজকের জলকষ্ট হত না । মানুষ অকারণে ভুগছেন । কিন্তু এখানেই উঠছে প্রশ্ন ৷ গৌতম নিজেই একাধারে বিধায়ক, আবার পুরনিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য । 2013 সাল থেকে 2018 পর্যন্ত তিনিই ছিলেন জঞ্জাল বিভাগের মেয়র-পরিষদ সদস্য ৷ তাঁর অভিযোগ কি তবে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা, প্রশ্ন বাসিন্দাদের একাংশের ৷

হাওড়া পুরনিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, "উনি (গৌতম চৌধুরী) নিজেও পুরনিগমের দায়িত্বে রয়েছেন । বেনারস রোড সারানোর সময় 70 মিটার পাইপলাইন জুড়ে দেওয়া যেত ।" শনিবার ভাগাড় এলাকা পরিদর্শনে এসে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, "এটা বড় বিপর্যয় । সরকার সহানুভূতিশীল । বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ভাগাড় সরানোর পরিকল্পনা করা হবে । আপাতত ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে ।"

belgachia dumping ground
ধসে ভেঙে পড়ে বাড়ি (নিজস্ব ছবি)

বিরোধী শিবিরও এবিষয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি । ভাগাড়ে ধসের ঘটনায় তৃণমূল প্রশাসনকে একহাত নিয়েছে বিরোধীরা ৷ দ্রুত পুর্নবাসনের দাবি জানিয়েছে তারাও ৷ কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "রক্ষণাবেক্ষণ যে করা হত না ভাগাড়ে ধস তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ৷ পাইপে বিস্ফোরণ ঘটেছে ৷ গোটা এলাকাজুড়ে বাড়িতে ফাটল ও চিড় ধরেছে ৷ সাধারণ মানুষকে জায়গা খালি করে দিতে বলছে ৷ কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি বা দূরবস্থা হল ? হাওড়া পুরনিগমে চুরি ছাড়া কোনও কাজ হয় না ৷ তাই এত বড় বিপদ নেমে এল সাধারণ মানুষের জীবনে ৷ কেউ মারা যায়নি ভাগ্য ভালো ৷ এটা এক ধরনের বিস্ফোরণ ৷ বাংলার মানুষ কবে এই বিস্ফোরণের হাত থেকে রেহাই পাবে ৷ সম্পূর্ণ পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতায় এই ঘটনা ৷"

belgachia dumping ground
ধসে ফাটল রাস্তায় (নিজস্ব ছবি)

এখানকার গরিব মানুষদের আবাস যোজনার ঘর না পাওয়ায় শাসকদলকে নিশানা করেছেন বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ ৷ তাঁর কথায়, "হাওড়াতে অপরাধীদের মাথা অরূপ রায় ৷ তাঁর চোখের সামনে শিক্ষিতরা বেকার হয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা চুরি করেছে অরূপ রায় ও তৃণমূল ৷ গরিব মানুষের টাকা ফেরত দিতে হবে ৷ বিনামূল্যে কেন্দ্রের চাল ডাল পান না এখানকার বাসিন্দারা ৷ তৃণমূল চোখের সামনে এলাকা ধ্বংস করছে ৷ হেরে যাওয়ার ভয়ে তাই পুরমিগমের ভোট করছে না শাসকদল ৷ ভাগাড়ের মধ্যে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়, যা ক্ষতিকারক ৷ আমরা বাসিন্দাদের নিয়ে চিন্তায় রয়েছি ৷"

belgachia dumping ground
ঘটনাস্থলে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (নিজস্ব ছবি)

বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই বলেন, "বিশ্ব জল দিবসে উত্তর হাওড়ার মানুষকে জলের জন্য লাইনে দাঁড় করানো হল । এটাই শাসকদলের চরম ব্যর্থতা । কাটমানির ভাগাভাগি করে নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন ।"

ফ্রেশ ওয়েস্টের বিকল্প ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছে পুরনিগম

ডাম্পিং সাইটে আগে থেকেই জমে থাকা বর্জ্য দ্রুত সরানোর লক্ষ্যে বায়ো মাইনিং-এর কাজ আরও দ্রুততার সঙ্গে চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । ইতিমধ্যেই কিছু অংশে উচ্চতা কমানো সম্ভব হলেও, বিশেষজ্ঞদের মত, একাধিক স্থানে এখনও অতিরিক্ত চাপ রয়ে গিয়েছে । ফ্রেশ ওয়েস্ট ফেলা বন্ধ করে বিকল্প জায়গা নির্ধারণের বিষয়েও আলোচনা চলছে । হাওড়া পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, থার্ড ফেজে এখনও কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে । তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে অন্য কোনও উপযুক্ত স্থান চিহ্নিত করা হচ্ছে ।

পরিকল্পনার স্তরেই প্রশাসন !

রবিবারের বৈঠকে থাকা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, "এখনও পর্যন্ত কোনও স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি । সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে পরিকল্পনার স্তরে আলোচনা চলছে । ডাম্পিং সাইটের অতিরিক্ত চাপ কমানো এবং ফ্রেশ ওয়েস্টের জন্য সঠিক বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য ।" প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে ডাম্পিং সাইট ঘিরে বর্তমান সমস্যাগুলি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । পাশাপাশি, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও স্বস্তি বজায় রাখার দিকেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে ।

ভাগাড় অবিলম্বে বন্ধের দাবি বাসিন্দাদের

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের তৎপরতা দেখানোর মাঝেও ভাগাড়ে এখনও ময়লার গাড়ি ঢুকছে । তাঁরা পরিষ্কার জানিয়েছেন, ভাগাড়ে আর ময়লার গাড়ি ঢুকতে দেওয়া চলবে না । তাঁদের দাবি, ভাগাড়ে পাহাড়সম হয়ে ওঠা ময়লা অবিলম্বে সরাতে হবে । তা না হলে আগামীতে ধস তাঁদের দিকেই আসবে । প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয়, এবার নিজেরাই ময়লার গাড়ি আটকাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।

হাওড়া, 24 মার্চ: ভাগাড় ধসের ফলে তৈরি হওয়া জলসংকট খানিকটা মিটলেও হাওড়ার বেলগাছিয়ায় উদ্বেগের মেঘ এখনও কাটেনি । এলাকা জুড়ে একাধিক বাড়িতে ফাটল লক্ষ্য করা গিয়েছে । মিথেন গ্যাসের ফলে যেকোনও সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে বলে জানিয়েছেন ভূবিজ্ঞানীরা ৷ যদিও এই সম্ভাবনার কথা শুনেও নিজেদের ভিটে ছাড়তে নারাজ ভাগাড়ের আশপাশের বসবাসকারীরা । বরং সোমবার সকাল থেকেই তাঁরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান । পুনর্বাসনের দাবিতে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন তাঁরা ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবারই এলাকা পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের পুর ও নগরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন তিনি ৷ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বহু বছর ধরে জমে থাকা ভাগাড় সরানোর কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে । তবে এখানকার মাটি একেবারেই ব্যবহারযোগ্য নয় । সোমবার সারাদিন জুড়ে ওই এলাকায় সার্ভে চলেছে । মঙ্গলবার পুর ও নগরন্নয়ন দফতরে বৈঠকে ঠিক হবে ভাগাড় থেকে সরিয়ে বাসিন্দাদের কোথায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে ।

ভাগাড়ের মাটির নীচে মিথেন গ্যাসের ফাঁদ, প্রবল ধসের মুখে বেলগাছিয়া; ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ বাসিন্দারা (ইটিভি ভারত)

এ বিষয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "এখানে পুরো অঞ্চলটাই ভাগাড়, এখানে কোনও মাটি নেই । মানুষ অবৈধভাবে বসতি গড়ে তুলেছিল । তাই খালি জমি চিহ্নিত করে, সেখানেই ওইসব বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে । কেন্দ্রীয় সরকার গ্রাম বা শহরের জন্য কোনও বরাদ্দ দিচ্ছে না । তাই রাজ্য সরকার নিজেদের তহবিল থেকেই পুরো অর্থের ব্যবস্থা করছে । অনেক বছর ধরে এই মাটি পড়ে থাকায় তা শক্ত আর ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে । আমরা যখন এই অংশ কাটছি, তখন দেখা যাচ্ছে, অনেক জায়গা আলগা হয়ে যাচ্ছে, আবার কিছু জায়গায় ভেঙেও পড়ছে । এর ফলে জমির উপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে । তাই দ্রুত প্রসেসিং-এর কাজ শুরু করা দরকার ।"

পাশাপাশি, কেএমডিএ-র তরফে জানানো হয়েছে, বিপজ্জনক অঞ্চলগুলিতে অবিলম্বে শিট পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে । যেসব এলাকায় বর্জ্য জমা হয়েছে, সেগুলি ট্রাকে করে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে প্রসেসিং-এর ব্যবস্থা করা হবে । যেখানে জায়গা ফাঁকা হবে, আগামী দু’মাসের মধ্যে সেখানে প্রসেসিং ইউনিট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । ফিরহাদ হাকিম জানান, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের কাজও মঙ্গলবার থেকেই শুরু করবে কেএমডিএ ।

belgachia dumping ground
পাইপ লাইন ফেটে যাওয়ায় পানীয় জলের সংকট দেখা দেয় (নিজস্ব ছবি)

তিনি আরও বলেন, "নগরোন্নয়ন দফতর এবং কেএমডিএ যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এখানে পোর্টেবল কম্প্যাক্টর বসানোর মতো জায়গা কোথায় পাওয়া যেতে পারে, সেই নিয়ে দ্রুত কর্মসূচি নেওয়া হবে । সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই । শহরের বিভিন্ন ফাঁকা জায়গা চিহ্নিত করে দ্রুত প্রসেসিং এবং পুনর্বাসন দুই-ই শুরু করতে হবে ।"

belgachia dumping ground
বেলগাছিয়ার ভাগাড় (নিজস্ব ছবি)

মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে 2-3 বছর সময় লাগবে । তবে বায়ো-মাইনিং পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত ভাগাড় সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলবে । ফিরহাদ হাকিমের কথায়, "মিথেন গ্যাস মানুষের জন্য ক্ষতিকর । আমরা চাই, দ্রুত এই গ্যাস নির্গমন বন্ধ করে পুরো এলাকা পরিষ্কার করে ফেলা হোক । আমরা জাদু করতে পারি না, কিন্তু পরিকল্পনা মতো কাজ চললে কয়েক বছরের মধ্যেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে ।"

belgachia dumping ground
ভিটেমাটি ছাড়তে নারাজ বাসিন্দারা (নিজস্ব ছবি)

এদিকে সোমবার সকালেই বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছে যান ভাগাড়ের আশেপাশে । মাইকিং করা হয় তাঁদের তরফে ৷ মাটির গুণমান পরীক্ষা করে দেখেন বিশেষজ্ঞরা । রিপোর্ট সন্তোষজনক হলে শুরু হবে বায়ো মাইনিং পদ্ধতিতে ভাগাড় পরিষ্কারের কাজ । সেজন্য দ্রুত এলাকা ফাঁকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে ।

belgachia dumping ground
বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফে মাইকিং করা হয় (নিজস্ব ছবি)

পাশের একটি ক্লাবে বাসিন্দাদের অস্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থাও করা হয়েছে । তবে এই প্রস্তাব মানতে নারাজ অধিকাংশ পরিবার । তাঁদের আশঙ্কা, একবার এলাকা ছাড়লে আর নিজেদের ঘরে ফেরার উপায় থাকবে না । অনেকেরই প্রশ্ন, বহু কষ্টে ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করেছেন । এখন সেগুলি ভেঙে দেওয়া হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই কোথায় মিলবে ?

বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে ধসে বিপর্যয়

গত 20 মার্চ বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে ধস নামে । মুহূর্তের মধ্যেই তা ভয়াবহ আকার নেয় । ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উত্তর হাওড়া ও শিবপুর কেন্দ্রের প্রধান জল সরবরাহ লাইন । তীব্র জলসংকটে পড়ে যান বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ । কলকাতা পুরনিগম এবং উত্তরপাড়া পুরসভার তরফে জল ট্যাঙ্কার পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয় । তারই মাঝে ভাগাড় সংলগ্ন রাস্তায় দেখা দেয় বড় বড় ফাটল । আশপাশের বহু বাড়ির দেওয়ালেও ফাটল ধরেছে ৷ শনিবার বিকেল থেকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে ৷ নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায় । বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন তাঁদের সুরক্ষা নয়, উচ্ছেদেই বেশি আগ্রহী । তাই পুনর্বাসনের লিখিত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত বাড়ি ছাড়তে রাজি নন স্থানীয়রা ।

মাটির তলায় জমা বিপদ

হাওড়ায় বিপদের মেঘ ক্রমশ ঘনাচ্ছে । বেলগাছিয়ার ভাগাড়ের মাটির তলায় জমছে বিপজ্জনক মিথেন গ্যাস । ভূবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ভাগাড়ে স্তূপ হয়ে থাকা আবর্জনা ও পশুপাখির মৃতদেহ পচে মিথেন তৈরি হয়েছে । মাটি এত বছর ধরে সেই তরল বর্জ্য শোষণ করে শক্তি হারিয়েছে । মিথেন গ্যাস জমে মাটির তলদেশ ফাঁপা হয়ে পড়ছে । পরিস্থিতি অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণে না আনলে বড়সড় বিপর্যয় যে অনিবার্য, সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা । অতিরিক্ত বিপদ বাড়াচ্ছে গঙ্গা । ভাগাড় সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গার জল মাটির তলায় মিশে গ্যাসের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করছে । তাতে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে মাটির ভিত । ভূবিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, অবিলম্বে ভাগাড় বন্ধ এবং মাটির তলা থেকে মিথেন নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে গোটা এলাকা জুড়ে ধস নেমে আসবে ।

আইন উপেক্ষা

স্থানীয়দের দাবি, 50 বছর ধরে রয়েছে বেলগাছিয়ায় ভাগাড় ৷ দুই-তিন বছর ধরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে পুরনো বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়েছে ৷ কত বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত হয়েছে তার হিসাব নেই ৷ পরিবেশবিদরা প্রশ্ন তুলেছেন, পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্ত নিয়মকানুন অগ্রাহ্য করে কীভাবে এত বছর ধরে ভাগাড়ে জৈব ও অজৈব আবর্জনা একসঙ্গে স্তূপীকৃত হল ? প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে এত বড় গাফিলতি এতদিন চলল কী করে ? তবে সেই প্রশ্নের উত্তর আজও অধরা ।

আতঙ্কে দিন কাটছে হাওড়াবাসীর

পর্যাপ্ত জল নেই, বিদ্যুৎ নেই ৷ রাস্তায় ফাটল, বাড়ির দেওয়ালে ফাটল । আতঙ্কে দিন গুনছেন হাওড়াবাসী । এই পরিস্থিতিতে বারবার সতর্ক করে চলেছেন বিশেষজ্ঞরা । ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, এয়ার অ্যান্ড ওয়াটারের সভাপতি সাধনকুমার ঘোষ রবিবার বেলগাছিয়া ভাগাড় পরিদর্শন করে স্পষ্ট জানিয়েছেন, অবিলম্বে ভাগাড় বন্ধ না করলে সামনে বড় বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী । তিনি বলেন, "এলাকার মাটির সহনক্ষমতা শেষ । ভাগাড় বন্ধ না করলে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ধস নামা শুধুই সময়ের অপেক্ষা ।"

চলছে দোষারোপের খেলা

ভাগাড়ের পচা আবর্জনার দুর্গন্ধে ভারী হাওড়ার বাতাস । এই অবস্থায় পর্দার আড়ালে চলছে দোষ চাপানোর পালা । এক পক্ষ অন্য পক্ষের দিকে আঙুল তুলছে ৷ স্থানীয়দের মতে, সমাধান অধরাই । প্রশ্ন উঠছে, এই রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝেই কি বেলগাছিয়ার মানুষের সমস্যার সমাধান অধরাই রয়ে যাবে ?

নজরদারির অভাবে বিপর্যয় ?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভাগাড়ে পাইপলাইন মেরামতির সময় আচমকা ধস নামে । নতুন করে ফাটল ধরে দেওয়ালে । লিলুয়া থেকে শিবপুর, সি রোড থেকে বি রোড-উত্তর হাওড়া কার্যত জলশূন্য হয়ে পড়ে । স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জীত সান্যাল ও জগদীশ হালদারদের অভিযোগ, ভাগাড়ে দীর্ঘদিন কোনও নজরদারি ছিল না । এক সময় ভাগাড়ের মধ্যে গ্যাস নিষ্কাশনের পাইপলাইন থাকলেও তা আজ অবহেলায় চাপা পড়ে রয়েছে । প্রশাসনের নজর এড়িয়ে আবর্জনার পাহাড় এতটাই ভারী হয়েছে যে মাটি তা আর ধারণ করতে পারছে না ।

দায় কার?

এই ঘটনায় উত্তর হাওড়ার তৃণমূল বিধায়ক গৌতম চৌধুরী সরাসরি পুর প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলেছেন । তাঁর বক্তব্য, কেএমডিএ-র নতুন পাইপলাইনের মাত্র 70 মিটার কাজ বাকি ছিল । সেই কাজ শেষ হলেই আজকের জলকষ্ট হত না । মানুষ অকারণে ভুগছেন । কিন্তু এখানেই উঠছে প্রশ্ন ৷ গৌতম নিজেই একাধারে বিধায়ক, আবার পুরনিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য । 2013 সাল থেকে 2018 পর্যন্ত তিনিই ছিলেন জঞ্জাল বিভাগের মেয়র-পরিষদ সদস্য ৷ তাঁর অভিযোগ কি তবে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা, প্রশ্ন বাসিন্দাদের একাংশের ৷

হাওড়া পুরনিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান সুজয় চক্রবর্তী বলেন, "উনি (গৌতম চৌধুরী) নিজেও পুরনিগমের দায়িত্বে রয়েছেন । বেনারস রোড সারানোর সময় 70 মিটার পাইপলাইন জুড়ে দেওয়া যেত ।" শনিবার ভাগাড় এলাকা পরিদর্শনে এসে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, "এটা বড় বিপর্যয় । সরকার সহানুভূতিশীল । বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ভাগাড় সরানোর পরিকল্পনা করা হবে । আপাতত ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে ।"

belgachia dumping ground
ধসে ভেঙে পড়ে বাড়ি (নিজস্ব ছবি)

বিরোধী শিবিরও এবিষয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি । ভাগাড়ে ধসের ঘটনায় তৃণমূল প্রশাসনকে একহাত নিয়েছে বিরোধীরা ৷ দ্রুত পুর্নবাসনের দাবি জানিয়েছে তারাও ৷ কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "রক্ষণাবেক্ষণ যে করা হত না ভাগাড়ে ধস তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ৷ পাইপে বিস্ফোরণ ঘটেছে ৷ গোটা এলাকাজুড়ে বাড়িতে ফাটল ও চিড় ধরেছে ৷ সাধারণ মানুষকে জায়গা খালি করে দিতে বলছে ৷ কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি বা দূরবস্থা হল ? হাওড়া পুরনিগমে চুরি ছাড়া কোনও কাজ হয় না ৷ তাই এত বড় বিপদ নেমে এল সাধারণ মানুষের জীবনে ৷ কেউ মারা যায়নি ভাগ্য ভালো ৷ এটা এক ধরনের বিস্ফোরণ ৷ বাংলার মানুষ কবে এই বিস্ফোরণের হাত থেকে রেহাই পাবে ৷ সম্পূর্ণ পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যর্থতায় এই ঘটনা ৷"

belgachia dumping ground
ধসে ফাটল রাস্তায় (নিজস্ব ছবি)

এখানকার গরিব মানুষদের আবাস যোজনার ঘর না পাওয়ায় শাসকদলকে নিশানা করেছেন বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষ ৷ তাঁর কথায়, "হাওড়াতে অপরাধীদের মাথা অরূপ রায় ৷ তাঁর চোখের সামনে শিক্ষিতরা বেকার হয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা চুরি করেছে অরূপ রায় ও তৃণমূল ৷ গরিব মানুষের টাকা ফেরত দিতে হবে ৷ বিনামূল্যে কেন্দ্রের চাল ডাল পান না এখানকার বাসিন্দারা ৷ তৃণমূল চোখের সামনে এলাকা ধ্বংস করছে ৷ হেরে যাওয়ার ভয়ে তাই পুরমিগমের ভোট করছে না শাসকদল ৷ ভাগাড়ের মধ্যে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়, যা ক্ষতিকারক ৷ আমরা বাসিন্দাদের নিয়ে চিন্তায় রয়েছি ৷"

belgachia dumping ground
ঘটনাস্থলে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (নিজস্ব ছবি)

বিজেপির রাজ্য সম্পাদক উমেশ রাই বলেন, "বিশ্ব জল দিবসে উত্তর হাওড়ার মানুষকে জলের জন্য লাইনে দাঁড় করানো হল । এটাই শাসকদলের চরম ব্যর্থতা । কাটমানির ভাগাভাগি করে নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন ।"

ফ্রেশ ওয়েস্টের বিকল্প ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছে পুরনিগম

ডাম্পিং সাইটে আগে থেকেই জমে থাকা বর্জ্য দ্রুত সরানোর লক্ষ্যে বায়ো মাইনিং-এর কাজ আরও দ্রুততার সঙ্গে চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । ইতিমধ্যেই কিছু অংশে উচ্চতা কমানো সম্ভব হলেও, বিশেষজ্ঞদের মত, একাধিক স্থানে এখনও অতিরিক্ত চাপ রয়ে গিয়েছে । ফ্রেশ ওয়েস্ট ফেলা বন্ধ করে বিকল্প জায়গা নির্ধারণের বিষয়েও আলোচনা চলছে । হাওড়া পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, থার্ড ফেজে এখনও কিছুটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে । তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে অন্য কোনও উপযুক্ত স্থান চিহ্নিত করা হচ্ছে ।

পরিকল্পনার স্তরেই প্রশাসন !

রবিবারের বৈঠকে থাকা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, "এখনও পর্যন্ত কোনও স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি । সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে পরিকল্পনার স্তরে আলোচনা চলছে । ডাম্পিং সাইটের অতিরিক্ত চাপ কমানো এবং ফ্রেশ ওয়েস্টের জন্য সঠিক বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলাই আমাদের মূল লক্ষ্য ।" প্রশাসনের এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে ডাম্পিং সাইট ঘিরে বর্তমান সমস্যাগুলি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা । পাশাপাশি, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও স্বস্তি বজায় রাখার দিকেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে ।

ভাগাড় অবিলম্বে বন্ধের দাবি বাসিন্দাদের

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনের তৎপরতা দেখানোর মাঝেও ভাগাড়ে এখনও ময়লার গাড়ি ঢুকছে । তাঁরা পরিষ্কার জানিয়েছেন, ভাগাড়ে আর ময়লার গাড়ি ঢুকতে দেওয়া চলবে না । তাঁদের দাবি, ভাগাড়ে পাহাড়সম হয়ে ওঠা ময়লা অবিলম্বে সরাতে হবে । তা না হলে আগামীতে ধস তাঁদের দিকেই আসবে । প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয়, এবার নিজেরাই ময়লার গাড়ি আটকাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.