অশোকনগর, 6 জুন: সাধারণ একটি এফিডেভিটের ফি 10 হাজার টাকা ! আর সেই এফিডেভিটের সূত্র ধরেই মিলল কিডনি পাচার যোগ। গ্রেফতার করা হয়েছে এক আইনজীবীকে। ধৃতের নাম প্রদীপকুমার বর। কিডনি পাচার-কাণ্ডে উত্তর 24 পরগনার অশোকনগর থানার পুলিশ ওই আইনজীবীকে পাকড়াও করে । পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের বাড়ি কলকাতার বাঁশদ্রোণী এলাকায়। তাঁকে জেরা করে এই পাচার চক্রে আর কেউ জড়িত আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
গত মার্চ মাসে অশোকনগরে কিডনি পাচার চক্রের সক্রিয়তা নিয়ে রাজ্যে তোলপার পড়ে গিয়েছিল। ঋণের টাকা শোধ করতে না-পারায় এক মহিলাকে জোর করে কিডনি বিক্রি করায় সুদখোর মহাজন ৷ ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তাঁকে জেরা করে কিডনি পাচার চক্রে জড়িত আরও চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ আদালতের বেশ কিছু এফিডেভিট হাতে পায়। প্রত্যেকটি এফিডেভিটে আইনজীবী প্রদীপকুমার বরের নাম ছিল বলে জানা যায়। তখনই পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তদন্তে কিডনি পাচার চক্রে আইনজীবী প্রদীপকুমার বরের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে পুলিশ । এর পরেই পুলিশ হাতেনাতে পাকড়াও করে তাঁকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আইনজীবী প্রদীপকে অশোকনগর থানার তলব করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল চারটে নাগাদ তিনি হাজিরা দিতে আসেন। রাত তিনটে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ চলে। বেশ কিছু প্রশ্নে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। এর পরেই শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। এ নিয়ে গুপি মজুমদার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "কিডনি পাচার চক্রে আইনজীবী জড়িয়ে পড়ছেন এটা শুনে কিছুটা হলেও অবাক লেগেছে। আমরা জানি, আইনজীবীরা সাধারণ মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়ে থাকেন। কিন্তু, সেই আইনজীবীই যদি টাকার বিনিময়ে এই ঘৃণ্য কাজ করেন তাহলে আর বলার কিছু নেই ৷ আমরা চাই, ওর যেন আইন মোতাবেক শাস্তি হয়। শুনলাম উনি 200 টাকার এফিডেভিটের জন্য 10 হাজার টাকা নিতেন। সমূলে এই পাচার চক্রের কোমর ভেঙে দেওয়া হোক ৷ সেটাই আর্জি পুলিশ প্রশাসনের কাছে।"
এদিকে, এই বিষয়ে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ধৃত প্রদীপ কুমার বর আলিপুর আদালতে প্র্যাকটিস করেন। তিনি হাবড়া ও অশোকনগর-সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কিডনি দাতাদের এফিডেভিট করতেন। আর তার জন্য বিপুল টাকা ফি নিতেন। 2014 সাল থেকে ওই আইনজীবী কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। কিডনি পাচার চক্রে দাতাদের হয়ে কোনও টাকা-পয়সার লেনদেন নেই বলে এফিডেভিটে তিনি লিখে দিতেন।
অন্যদিকে, ঘটনার নেপথ্যে আর বড় কোনও মাথার যোগ রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া। তিনি বলেন, "ধৃত আইনজীবীকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। সেই কারণে আট দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে তাঁকে এদিন পেশ করা হয়েছে বারাসত আদালতে।"