কলকাতা, 20 জানুয়ারি: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সঞ্জয় রায় যে দোষী, তা জানা গিয়েছে শনিবার ৷ আজ, সোমবার ছিল সঞ্জয়ের সাজা ঘোষণার দিন ৷ বেলা 12টা 35 মিনিট নাগাদ শিয়ালদা আদালতের নির্ধারিত সময়ে এজলাসে পৌঁছান বিচারক ৷ তার কিছুক্ষণ পরই কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়কে কাঁদতে দেখা যায় ৷
শনিবার আদালত যখন এই মামলার রায়দান করে, সেই সময় সঞ্জয় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছিল ৷ বিচারককে বলতে চেয়েছিল যে তাকে ফাঁসানো হয়েছে ৷ সেদিনই বিচারক সঞ্জয়কে জানিয়েছিলেন যে সোমবার তার সবকথা শুনবেন ৷ সেই মোতাবেক এদিন সঞ্জয়ের কথা শোনেন বিচারক ৷
তিনি শুরুতেই রায়ের কথা আরও একবার উল্লেখ করেন ৷ সঞ্জয় রায় যে দোষী, সেটাও জানান আরও একবার ৷ তার পর সঞ্জয়কে প্রশ্ন করেন, ‘‘এই বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য আছে ?’’ উত্তরে সঞ্জয় বিচারককে বলে, আমি কোনোটাই করিনি । আমায় ফাঁসানো হয়েছে । আমায় অত্যাচার করা হয়েছে। যেখানে ইচ্ছে সই করিয়েছে ।’’
এদিন সিবিআইয়ের ঘাড়েও দোষ চাপাতে দেখা যায় সঞ্জয়কে ৷ সে বলে, ‘‘আমাকে সিবিআই নিয়ে গিয়ে কোনও মেডিক্যাল পরীক্ষা করায়নি । আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে । আমি এই অপরাধ করিনি । আমি শুধু কথা শুনেছি ।’’ যদিও বিচারক তাকে জানিয়েছেন যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ যা আদালতে জমা পড়েছিল, তার ভিত্তিতেই তিনি এই রায় দিয়েছেন ৷ তবে সঞ্জয় জানায় যে সে দোষী নয় ৷ সে-ও এই মামলায় ‘ভিকটিম’ ৷ তাই সে বিচারকের কাছে বলে, ‘‘মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কিছু (শাস্তি) দিন ৷’’
এর পর বিচারক সঞ্জয়ের কাছে জানতে চান, ‘‘বাড়িতে কে আছেন ?’’ সঞ্জয় শুধু বলে, ‘‘মা ৷’’ বিচারক জানতে চান, ‘‘কেউ যোগাযোগ করেন ?’’ সঞ্জয় বলে, ‘‘না ৷’’ তবে মায়ের কথা উল্লেখ করে জামিন দেওয়ার আর্জি জানাতে চায় সঞ্জয়কে ৷ তবে বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কিছু বলতে চান ?’’ আর উত্তর দেয়নি সঞ্জয় চুপ করে থাকতে দেখা যায় তাকে ৷
বিচারক বলেন, ‘‘আমি আপনাকে সময় দিয়েছি ৷ কী হয়েছে আপনার থেকে ভালো কেউ জানে না ৷ যা যা প্রমাণ এসেছে, তার উপর বিচার হবে ৷ আপনাকে তিনঘণ্টা সময় দিয়েছি ৷ আমি নিজে আপনার সঙ্গে কথা বলছি ৷ সব শুনে আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছি ৷’’
সিবিআইয়ের তরফে সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ শাস্তির পক্ষেই সওয়াল করা হয় ৷ সিবিআইয়ের তরফে আদালতে জানানো হয় যে এটা এমন ঘটনা, যা সারা বিশ্বে প্রভাব পড়েছে । হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসার জন্য আসে, সেখানে এই ধরনের ঘটনা । বাবা-মা মেয়েকে হারিয়েছেন । বিরলের মধ্য়েও বিরলতম ঘটনা ৷
দুপুর 1টা 12 মিনিটে শিয়ালদা আদালতের 210 নম্বর ঘর খালি করে দিতে বলেন বিচারক ৷ তিনি জানান, দুপুর 2টো 45 মিনিটে রায় দেবেন তিনি ৷ সেই মোতাবেক ঘণ্টা দেড়েক পর আবার সবাই এজলাসে ফেরেন ৷ দুপুর 2টো 47 মিনিট নাগাদ এজলাসে নিয়ে আসা হয় সঞ্জয় রায়কে৷ রায় পড়ে শোনান বিচারক ৷ দুপুর 2টো 51 মিনিট মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ওই চিকিৎসক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে ৷