ETV Bharat / state

চাঁচলে তৃণমূলের বিধায়ক বনাম ব্লক সভাপতিদের কাজিয়া তুঙ্গে, নীহাররঞ্জনের বিরুদ্ধে লিখিত নালিশ ! - TMC FACTIONALISM IN CHANCHAL

মমতা এবং অভিষেকের কাছে নীহাররঞ্জন ঘোষের নামে লিখিত অভিযোগ ব্লক সভাপতিদের একাংশের ৷ পাল্টা ষড়যন্ত্র অভিযোগ চাঁচলের বিধায়কের ৷

TMC FACTIONALISM IN CHANCHAL
চাঁচলে তৃণমূলের বিধায়ক এবং ব্লক সভাপতিদের মধ্যে বিবাদের অভিযোগ ৷ (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : March 21, 2025 at 6:20 PM IST

7 Min Read

মালদা, 21 মার্চ: নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় সভা হোক বা ভার্চুয়াল বৈঠক ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দু’জনেই তৃণমূলের সব স্তরের নেতানেত্রীদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, 2026 সালের নির্বাচনের আগে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলতে হবে ৷ এমনকি লোকসভা নির্বাচনে মালদা জেলায় তৃণমূলের খারাপ ফলাফলের জন্য তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বিবাদকে দায়ী করেছিলেন অভিষেক ৷ এ নিয়ে সতর্কও করেন তিনি ৷

কিন্তু, কোথায় কি ! সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথার কোনও প্রভাবই মালদা জেলার তৃণমূলের একাংশ নেতাদের মধ্যে পড়েনি ৷ বিধানসভা নির্বাচনের আগে মালদায় ফের গৃহযুদ্ধের অভিযোগ তৃণমূলে ৷ এবার চাঁচল ৷ দলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগে মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়েছেন তৃণমূলের চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের সভাপতি ৷ চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির কাছেও ৷

চাঁচলে তৃণমূলের বিধায়ক বনাম ব্লক সভাপতিদের কাজিয়া তুঙ্গে, নীহাররঞ্জনের বিরুদ্ধে লিখিত নালিশ ! (ইটিভি ভারত)

শুধু চাঁচল 1 নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতিই নন, বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর 1 (বি) সাংগঠনিক ব্লকের সভানেত্রীও ৷ তাঁর বিরুদ্ধে চাঁচল বিধানসভায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলীয় কর্মীদের বাদ দিয়ে নিয়োগের অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা ৷ এমনকি কংগ্রেস ও বিজেপির সমর্থকদের কেন বিভিন্ন কমিটিতে জায়গায় দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাঁচল 1 ও হরিশ্চন্দ্রপুর 1 (বি) সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতিরা ৷

বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেছেন তাঁরা ৷ এই ঘটনায় রাজ্যের শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও একবার প্রকাশ্যে এসেছে ৷ যদিও, দলের একাংশের তোলা কোনও অভিযোগকে কোনও গুরুত্ব দিতে চাননি চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ অন্যদিকে, গোটা ঘটনায় ঘাসফুল শিবিরের দিকে কটাক্ষের তির ছুঁড়ে দিয়েছে বিরোধী বিজেপিও ৷

তৃণমূলের চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের সভাপতি শেখ আফসার আলির বক্তব্য, “গত আড়াই বছর ধরে বিধায়কের অনেক অনৈতিক কাজকর্ম আমরা দেখতে পেয়েছি ৷ তাঁর কাজে দলের কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় বঞ্চিত হয়েছেন ৷ কর্মীদের ক্ষোভ দিনের পর দিন বাড়ছে ৷ এ নিয়ে মুখে বলতে-বলতে আমরা ক্লান্ত ৷ তাই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে আমাদের অভিযোগ জানাচ্ছি ৷ অনুরোধ করছি, আমাদের অভিযোগগুলি যেন যাচাই করে নেওয়া হয় ৷ তাহলে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে, যা আমরা লিখতে পারিনি ৷”

TMC Factionalism in Chanchal
চাঁচলের তৃণমূলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ (নিজস্ব ছবি)

তাঁর অভিযোগ, "স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, কলেজের গভর্নিং কমিটি, আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার, লাইব্রেরি কমিটি, এসএসকে কিংবা এমএসকে তৈরি করা থেকে শুরু করে পিএইচই’র নিয়োগ সংক্রান্ত যা কিছু ঘটছে, সব জায়গায় বিধায়কের স্বৈরতান্ত্রিক কাজ চলছে ৷ ক্ষমতার দম্ভে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন তিনি ৷ দলকে কোনও তোয়াক্কা করছেন না ৷ আদালতের পিপি কিংবা জিপি প্যানেলগুলিতে যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের নাম দেখলেই সবাই জানতে পারবে ৷ তাঁরা সবাই কংগ্রেস ও বিজেপির ৷ বাকি জায়গাগুলিতেও একই পরিস্থিতি ৷ নবরত্ন সবজির মতো অবস্থা ৷"

কেন কংগ্রেস ও বিজেপির লোকজনকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, মূলত তাই নিয়েই ক্ষোভ চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের সভাপতির ৷ তাঁর বক্তব্য, "আমাদের সঙ্গে তো বিজেপি কিংবা কংগ্রেসের জোট নেই ৷ কীভাবে নিয়োগ হচ্ছে, তা বলতে পারব না ৷ কিন্তু যাঁরা দলের পুরোনো কর্মী, তাঁদের পরিবারে 12-15 হাজার টাকা ভীষণ প্রয়োজন ৷ এই পদগুলিতে তাঁদের কেন নেওয়া হবে না ? এর পিছনে টাকা-পয়সার লেনদেন রয়েছে কি না জানি না ৷"

বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর 1 (বি) সাংগঠনিক ব্লকের সভানেত্রী মর্জিনা খাতুনও ৷ তিনি বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলছেন, বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ব্লক সভাপতি এবং এমএলএ একজোট হয়ে কাজ করবেন ৷ ব্লক সভাপতিদের অঞ্চল সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে হবে ৷ এতে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি হবে ৷ আমি যেদিন থেকে ব্লক সভাপতি হয়েছি, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত চাঁচলের বিধায়ক আমাকে ডাকেননি, বা নিজের কর্মসূচি সম্পর্কে জানাননি ৷ সাংগঠনিক বৈঠক একটাও করেননি ৷ করলেও মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে নিয়ে ৷ চাঁচলে বসে কয়েকজনকে নিয়ে কথা বলেই দায়িত্ব সেরেছেন ৷"

গত লোকসভা নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মর্জিনা খাতুন ৷ তিনি বলেন, "লোকসভা নির্বাচনের আগে আমি চারটি অঞ্চল নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেছিলাম ৷ শুনেছি, ওই বৈঠকে যারা অংশ নিয়েছিল, বিধায়ক নাকি তাঁদের হুমকি দিয়েছেন ৷ লাইব্রেরির সভাপতি, কলেজের চেয়ারম্যান পদে বিধায়ক নাকি বিরোধীদের বসিয়েছেন ৷ যাঁরা তাঁকে নির্বাচনে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন, সেই মানুষদের সঙ্গেই তিনি কোনও যোগাযোগ রাখেন না ৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে তিনি মানুষের কাছে কোনও আবেদনও জানাননি ৷"

যদিও, সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ তিনি বলেন, "অভিযোগ করার অধিকার সবার রয়েছে ৷ কিন্তু সেই অভিযোগের সত্যতা কতটা, সেটাই বড় প্রশ্ন ৷ আর যিনি অভিযোগ করছেন, তাঁকে আমিই ব্লক সভাপতি করেছিলাম ৷ গর্ব করে বলতে পারি, ব্লক সভাপতি করার পর তাঁর কাছে এক কাপ চা খেয়েছি কি না সন্দেহ রয়েছে ৷ তিনি ঘরে বসে রাজনীতি করেন ৷ কোনও অঞ্চলকে চেনেন না ৷ কোনও অঞ্চলের নেতৃত্বে কে রয়েছেন, সেটাও জানেন না ৷ তাঁর সঙ্গে কোনও মানুষের যোগাযোগ রয়েছে কি না জানি না ৷"

পাল্টা বিরোধী শিবিরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলেছেন চাঁচলের বিধায়ক ৷ তিনি বলেন, "এঁরা বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলকে দুর্বল করার চক্রান্ত করছে ৷ জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব আছে ৷ যদি আমার চলার পথে কোথাও ভুল হয়, যদি তার সত্যতা প্রমাণ করতে পারেন, দল যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব ৷ আমার চলার পথে কোনও ভুল হয়, তবে তো তাঁরা আমাকে সেটা বলতে পারেন ? আর কোনও সিদ্ধান্ত আমি একা নিই না ৷ যে অঞ্চলে, যে কাজ হবে বা কোনও অঞ্চলে যদি কোনও স্কুল কমিটি গঠন করার প্রশ্ন আসে, অঞ্চল কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে যে নাম আমাকে পাঠায়, সেই নামই অনুমোদন করে আমি নির্দিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দিই ৷"

তৃণমূলের এই কাজিয়া সামনে আসতেই কটাক্ষের তির ছুড়েছে বিজেপি ৷ দলের উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রতাপ সিং বলেন, “শুধু চাঁচল না, সারা পশ্চিমবঙ্গেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে ৷ সর্বস্তরে এই দ্বন্দ্ব চলছে ৷ কোথাও মন্ত্রীর সঙ্গে জেলা সভাপতি, কোথাও বিধায়কের সঙ্গে ব্লক নেতৃত্ব ৷ এটা এদের কাছে নতুন কিছু না ৷ আগামিদিনে এই দ্বন্দ্ব ওদের দলের নীচুস্তরেও ছড়িয়ে পড়বে ৷”

এ নিয়ে তৃণমূলের মালদা জেলা মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর বক্তব্য, “তৃণমূল অনেক বড় পরিবার ৷ ছোটখাটো দূরত্ব, ঝগড়া, এসব থাকতে পারে ৷ বড় সংসারে ভাইয়ে-ভাইয়ে একটু খোটাখুটি থাকে ৷ আমাদের পরিবারের দ্বন্দ্ব আমরা মিটিয়ে নেব ৷ এ নিয়ে বাইরের লোকজনকে হাওয়া দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই ৷ আমাদের বিধায়ক, আমাদের ব্লক সভাপতি, আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ৷ সবই যখন আমাদের, আমরা যখন পরিবারগতভাবে বসব, দেখবেন আমরা সবাই একসঙ্গে হয়ে গিয়েছি ৷ বিজেপি, কংগ্রেস আর সিপিআইএম আঁটির মতো গড়াগড়ি খাবে ৷ বাংলায় তৃণমূল ছাড়া আর কারও কোনও জায়গা নেই ৷”

মালদা, 21 মার্চ: নেতাজি ইন্ডোরে দলীয় সভা হোক বা ভার্চুয়াল বৈঠক ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দু’জনেই তৃণমূলের সব স্তরের নেতানেত্রীদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, 2026 সালের নির্বাচনের আগে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলতে হবে ৷ এমনকি লোকসভা নির্বাচনে মালদা জেলায় তৃণমূলের খারাপ ফলাফলের জন্য তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বিবাদকে দায়ী করেছিলেন অভিষেক ৷ এ নিয়ে সতর্কও করেন তিনি ৷

কিন্তু, কোথায় কি ! সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথার কোনও প্রভাবই মালদা জেলার তৃণমূলের একাংশ নেতাদের মধ্যে পড়েনি ৷ বিধানসভা নির্বাচনের আগে মালদায় ফের গৃহযুদ্ধের অভিযোগ তৃণমূলে ৷ এবার চাঁচল ৷ দলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগে মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়েছেন তৃণমূলের চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের সভাপতি ৷ চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির কাছেও ৷

চাঁচলে তৃণমূলের বিধায়ক বনাম ব্লক সভাপতিদের কাজিয়া তুঙ্গে, নীহাররঞ্জনের বিরুদ্ধে লিখিত নালিশ ! (ইটিভি ভারত)

শুধু চাঁচল 1 নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতিই নন, বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর 1 (বি) সাংগঠনিক ব্লকের সভানেত্রীও ৷ তাঁর বিরুদ্ধে চাঁচল বিধানসভায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলীয় কর্মীদের বাদ দিয়ে নিয়োগের অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা ৷ এমনকি কংগ্রেস ও বিজেপির সমর্থকদের কেন বিভিন্ন কমিটিতে জায়গায় দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চাঁচল 1 ও হরিশ্চন্দ্রপুর 1 (বি) সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতিরা ৷

বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেছেন তাঁরা ৷ এই ঘটনায় রাজ্যের শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও একবার প্রকাশ্যে এসেছে ৷ যদিও, দলের একাংশের তোলা কোনও অভিযোগকে কোনও গুরুত্ব দিতে চাননি চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ অন্যদিকে, গোটা ঘটনায় ঘাসফুল শিবিরের দিকে কটাক্ষের তির ছুঁড়ে দিয়েছে বিরোধী বিজেপিও ৷

তৃণমূলের চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের সভাপতি শেখ আফসার আলির বক্তব্য, “গত আড়াই বছর ধরে বিধায়কের অনেক অনৈতিক কাজকর্ম আমরা দেখতে পেয়েছি ৷ তাঁর কাজে দলের কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় বঞ্চিত হয়েছেন ৷ কর্মীদের ক্ষোভ দিনের পর দিন বাড়ছে ৷ এ নিয়ে মুখে বলতে-বলতে আমরা ক্লান্ত ৷ তাই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে আমাদের অভিযোগ জানাচ্ছি ৷ অনুরোধ করছি, আমাদের অভিযোগগুলি যেন যাচাই করে নেওয়া হয় ৷ তাহলে আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে, যা আমরা লিখতে পারিনি ৷”

TMC Factionalism in Chanchal
চাঁচলের তৃণমূলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ (নিজস্ব ছবি)

তাঁর অভিযোগ, "স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, কলেজের গভর্নিং কমিটি, আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার, লাইব্রেরি কমিটি, এসএসকে কিংবা এমএসকে তৈরি করা থেকে শুরু করে পিএইচই’র নিয়োগ সংক্রান্ত যা কিছু ঘটছে, সব জায়গায় বিধায়কের স্বৈরতান্ত্রিক কাজ চলছে ৷ ক্ষমতার দম্ভে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন তিনি ৷ দলকে কোনও তোয়াক্কা করছেন না ৷ আদালতের পিপি কিংবা জিপি প্যানেলগুলিতে যাঁদের নিয়োগ করা হয়েছে, তাঁদের নাম দেখলেই সবাই জানতে পারবে ৷ তাঁরা সবাই কংগ্রেস ও বিজেপির ৷ বাকি জায়গাগুলিতেও একই পরিস্থিতি ৷ নবরত্ন সবজির মতো অবস্থা ৷"

কেন কংগ্রেস ও বিজেপির লোকজনকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, মূলত তাই নিয়েই ক্ষোভ চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের সভাপতির ৷ তাঁর বক্তব্য, "আমাদের সঙ্গে তো বিজেপি কিংবা কংগ্রেসের জোট নেই ৷ কীভাবে নিয়োগ হচ্ছে, তা বলতে পারব না ৷ কিন্তু যাঁরা দলের পুরোনো কর্মী, তাঁদের পরিবারে 12-15 হাজার টাকা ভীষণ প্রয়োজন ৷ এই পদগুলিতে তাঁদের কেন নেওয়া হবে না ? এর পিছনে টাকা-পয়সার লেনদেন রয়েছে কি না জানি না ৷"

বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর 1 (বি) সাংগঠনিক ব্লকের সভানেত্রী মর্জিনা খাতুনও ৷ তিনি বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলছেন, বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ব্লক সভাপতি এবং এমএলএ একজোট হয়ে কাজ করবেন ৷ ব্লক সভাপতিদের অঞ্চল সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে হবে ৷ এতে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি হবে ৷ আমি যেদিন থেকে ব্লক সভাপতি হয়েছি, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত চাঁচলের বিধায়ক আমাকে ডাকেননি, বা নিজের কর্মসূচি সম্পর্কে জানাননি ৷ সাংগঠনিক বৈঠক একটাও করেননি ৷ করলেও মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে নিয়ে ৷ চাঁচলে বসে কয়েকজনকে নিয়ে কথা বলেই দায়িত্ব সেরেছেন ৷"

গত লোকসভা নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন মর্জিনা খাতুন ৷ তিনি বলেন, "লোকসভা নির্বাচনের আগে আমি চারটি অঞ্চল নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করেছিলাম ৷ শুনেছি, ওই বৈঠকে যারা অংশ নিয়েছিল, বিধায়ক নাকি তাঁদের হুমকি দিয়েছেন ৷ লাইব্রেরির সভাপতি, কলেজের চেয়ারম্যান পদে বিধায়ক নাকি বিরোধীদের বসিয়েছেন ৷ যাঁরা তাঁকে নির্বাচনে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছিলেন, সেই মানুষদের সঙ্গেই তিনি কোনও যোগাযোগ রাখেন না ৷ লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে তিনি মানুষের কাছে কোনও আবেদনও জানাননি ৷"

যদিও, সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ ৷ তিনি বলেন, "অভিযোগ করার অধিকার সবার রয়েছে ৷ কিন্তু সেই অভিযোগের সত্যতা কতটা, সেটাই বড় প্রশ্ন ৷ আর যিনি অভিযোগ করছেন, তাঁকে আমিই ব্লক সভাপতি করেছিলাম ৷ গর্ব করে বলতে পারি, ব্লক সভাপতি করার পর তাঁর কাছে এক কাপ চা খেয়েছি কি না সন্দেহ রয়েছে ৷ তিনি ঘরে বসে রাজনীতি করেন ৷ কোনও অঞ্চলকে চেনেন না ৷ কোনও অঞ্চলের নেতৃত্বে কে রয়েছেন, সেটাও জানেন না ৷ তাঁর সঙ্গে কোনও মানুষের যোগাযোগ রয়েছে কি না জানি না ৷"

পাল্টা বিরোধী শিবিরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলেছেন চাঁচলের বিধায়ক ৷ তিনি বলেন, "এঁরা বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃণমূলকে দুর্বল করার চক্রান্ত করছে ৷ জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব আছে ৷ যদি আমার চলার পথে কোথাও ভুল হয়, যদি তার সত্যতা প্রমাণ করতে পারেন, দল যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব ৷ আমার চলার পথে কোনও ভুল হয়, তবে তো তাঁরা আমাকে সেটা বলতে পারেন ? আর কোনও সিদ্ধান্ত আমি একা নিই না ৷ যে অঞ্চলে, যে কাজ হবে বা কোনও অঞ্চলে যদি কোনও স্কুল কমিটি গঠন করার প্রশ্ন আসে, অঞ্চল কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে যে নাম আমাকে পাঠায়, সেই নামই অনুমোদন করে আমি নির্দিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দিই ৷"

তৃণমূলের এই কাজিয়া সামনে আসতেই কটাক্ষের তির ছুড়েছে বিজেপি ৷ দলের উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি প্রতাপ সিং বলেন, “শুধু চাঁচল না, সারা পশ্চিমবঙ্গেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে ৷ সর্বস্তরে এই দ্বন্দ্ব চলছে ৷ কোথাও মন্ত্রীর সঙ্গে জেলা সভাপতি, কোথাও বিধায়কের সঙ্গে ব্লক নেতৃত্ব ৷ এটা এদের কাছে নতুন কিছু না ৷ আগামিদিনে এই দ্বন্দ্ব ওদের দলের নীচুস্তরেও ছড়িয়ে পড়বে ৷”

এ নিয়ে তৃণমূলের মালদা জেলা মুখপাত্র আশিস কুণ্ডুর বক্তব্য, “তৃণমূল অনেক বড় পরিবার ৷ ছোটখাটো দূরত্ব, ঝগড়া, এসব থাকতে পারে ৷ বড় সংসারে ভাইয়ে-ভাইয়ে একটু খোটাখুটি থাকে ৷ আমাদের পরিবারের দ্বন্দ্ব আমরা মিটিয়ে নেব ৷ এ নিয়ে বাইরের লোকজনকে হাওয়া দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই ৷ আমাদের বিধায়ক, আমাদের ব্লক সভাপতি, আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ৷ সবই যখন আমাদের, আমরা যখন পরিবারগতভাবে বসব, দেখবেন আমরা সবাই একসঙ্গে হয়ে গিয়েছি ৷ বিজেপি, কংগ্রেস আর সিপিআইএম আঁটির মতো গড়াগড়ি খাবে ৷ বাংলায় তৃণমূল ছাড়া আর কারও কোনও জায়গা নেই ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.