কলকাতা, 18 ফেব্রুয়ারি: মহাকুম্ভে একের পর এক দুর্ঘটনা, পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ যোগীরাজ্যে মহাকুম্ভ মেলাকে 'মৃত্যুকুম্ভ' বলে উল্লেখ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ মঙ্গলবার বিধানসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি বলেন, "মহাকুম্ভ আমি নাই বা বললাম ৷ ওটা এখন মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে ৷ মৃত্যুকূপের মতো ৷"
গত 13 জানুয়ারি উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা শুরু হয়েছে ৷ কিন্তু একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে কোটি কোটি মানুষের সমাগমস্থলে ৷ এই প্রসঙ্গেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য করেন ৷ তিনি বলেন, "আমি মহাকুম্ভকে সম্মান করি ৷ আমি শ্রদ্ধা জানাই ৷ পবিত্র গঙ্গা মাকে আমি সম্মান জানাই ৷ কিন্তু, পরিকল্পনা না করে এত প্রচার করা হল ! এত মানুষের মৃত্যু !"
29 জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যার ভোররাতে মহাকুম্ভের ত্রিবেণী সঙ্গমে পুণ্যস্নান করতে প্রচুর মানুষ ভিড় করেছিলেন ৷ সেই ভিড় এতটাই ছিল যে পদপিষ্ট হয়ে কমপক্ষে 30 জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে ৷ এই ঘটনায় বিশাল মহাকুম্ভ মেলার পরিকল্পনা নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ৷ অভিযোগ ওঠে, যোগী প্রশাসন মৃতের সংখ্যা কমিয়ে বলছে ৷
মহাকুম্ভে আটবার আগুন লেগেছে:
এদিন এই প্রসঙ্গ বিধানসভায় উত্থাপন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করে বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "বললেন 30 জন, কথাটা কি সঠিক ? কত মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন ? কত ? হাজার হাজার ৷" মহাকুম্ভে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বার ৷ সেই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আটবার আগুন লেগেছে ৷"
মহাকুম্ভে সাধারণ-ভিআইপি বৈষম্য:
মহাকুম্ভে ধনী-গরিব, সাধারণ-ভিআইপি বৈষম্য হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো ৷ মমতা বলেন, "বড়লোক আর ভিআইপিদের জন্য লক্ষ টাকার ক্যাম্প ৷ আর গরিব-সাধারণ লোকদের জন্য লাইনে 15-20 ঘণ্টা দাঁড়াতে হবে ৷ যদি একটা মাদুরেও বসে, তাহলে দু'হাজার টাকা ৷ এক কাপ লাল চা-ও 500 টাকা থেকে 2 হাজার টাকা ৷ সাধারণ মানুষ যেখানে গিয়ে স্নান করবে, সেই জায়গা আলাদা, ভিআইপিদের জন্য আলাদা ৷"
মহাকুম্ভের জল দূষিত হয়েছে:
মহাকুম্ভ নিয়ে বিজেপিকে কড়া আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মহাকুম্ভের জল আপনারা দূষিত করেছেন ৷ মহাকুম্ভের পবিত্র জায়গাকে বিষাক্ত করেছেন ৷ সব জায়গায় হাইপ তুলে দিয়েছে ৷" বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি দাবি করেন, "মহাকুম্ভ শুরুর দিন পর্যন্ত কোনও পরিকল্পনা করা হয়নি ৷"
মহাকুম্ভে পুণ্যার্থীর মৃত্যু:
মৌনী অমাবস্যার ভোররাতে স্নান করতে গিয়ে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে 30 জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে ৷ তাঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারাও ছিলেন ৷ সেখান থেকে রাজ্যের মৃতদের দেহ ফিরলেও ময়নাতদন্ত হয়নি ৷ মৃত্যু সংশাপত্রও দেওয়া দেয়নি যোগী প্রশাসন ৷ এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে মমতা বলেন, "মহাকুম্ভে এত বড় ঘটনার পর ক'টা কমিশন পাঠিয়েছেন ? ক'টা কমিটি পাঠিয়েছেন ৷ এমনকী আমার রাজ্যে যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের একজনকেও মৃত্যুর সংশাপত্র দেননি ৷ ময়নাতদন্তও হয়নি ৷ যে মেডিক্যাল কলেজ থেকে মৃতদেহ এসেছে, সেখান থেকেও কেউ স্বাক্ষর করেনি ৷ শুধুমাত্র যাঁর হাতে মৃতদেহ তুলে দেওয়া হয়েছে, তাঁকে দিয়ে স্বাক্ষর করানো হয়েছে ৷ আমি দেখেছি কাগজটা ৷"
মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃতদের দেহ রাজ্যে ফিরে আসার পর দেহগুলির সরকারের উদ্যোগে আলাদ করে ময়নাতদন্ত করা হয় ৷ মৃতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে মৃত্যুর সংশাপত্র তুলে দেওয়া হয় বলে বিধানসভায় জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷