কলকাতা, 16 এপ্রিল: মুর্শিদাবাদ-ভাঙড়ে সাম্প্রতিক অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপিকে সরাসরি আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জেম এবং মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভা থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিএসএফ-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। একই সঙ্গে, ওয়াকফ সংক্রান্ত আন্দোলন বাংলায় নয়, দিল্লিতে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অমিত শাহকে নিশানা করে মমতা বলেন, "সবচেয়ে বেশি দেশের ক্ষতি করেছেন উনি। সমস্ত এজেন্সিকে ওনার হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।" এখানেই থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কটাক্ষ, "উনি কালিদাসের মতো, যে ডালে বসে, সেই ডালই কাটছেন।" তিনি আরও যোগ করেন, "আপনি তো প্রধানমন্ত্রী হবেন না। মোদিজির পরে আপনাকে তো হামাগুড়ি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, ওই লোকটাকে একটু কন্ট্রোল করুন।"
মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, মুর্শিদাবাদের অশান্তি পরিকল্পিত এবং তার পিছনে কেন্দ্রের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, "বিজেপির আইটি সেল থেকে শুরু করে সব প্ল্যান তৈরি হচ্ছে দিল্লিতে। এজেন্সিকে দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি চালানো হচ্ছে।" এদিন মুখ্যমন্ত্রী এও জানান, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট অন্য দেশ থেকে লোক ঢোকানো হয়েছে । এমনটাই সংবাদসংস্থা এএনআইকে বলা হয়েছে ।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "তাহলে বিএসএফ কী করছিল ? বাংলাদেশের লোক যদি এসেই থাকে, তাহলে বিএসএফ কেন ঢুকতে দিল ? সীমান্ত তো কেন্দ্রের হাতে । বিএসএফ কার অনুমতি নিয়ে সীমান্ত পার করাল ?" এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "আমি নিজে ভিডিয়ো দেখেছি, যেখানে বিএসএফ-এর পোশাকে লোক ঢুকেছে, পায়ে চটি পরে।" স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে একহাত নিয়ে মমতা বলেন, "প্লেন, ট্রেন চলছে—কে কোথা থেকে আসছে, কোনও রিপোর্ট আমাদের দেওয়া হয় না। আগে এয়ারপোর্টে রাজ্য পুলিশের নজরদারি ছিল, সেটাও তুলে নিয়েছে।"
পাশাপাশি ওয়াকফ আন্দোলন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করুন। দরকার হলে দিল্লির রাস্তায় বসুন। আমি কথা দিচ্ছি, তৃণমূল কংগ্রেসের সব সাংসদ আপনাদের পাশে থাকবে ৷”
তিনি আরও বলেন, “ওয়াকফ আইন শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়, এটা সংবিধানের বিরুদ্ধেও ।” তাঁর বক্তব্য, এই আইনের মাধ্যমে শুধু একটি সম্প্রদায় নয়, সকলের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ হচ্ছে। তাই এই আন্দোলন শুধু ধর্মীয় নয়, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার লড়াই। সরাসরি কড়া ভাষায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও, মমতার বার্তা ছিল স্পষ্ট—বাংলায় বিভাজনের রাজনীতি চলবে না। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “আমি যতদিন বাঁচব, ততদিন হিন্দু-মুসলমান ভাগ হতে দেব না ৷”