কলকাতা, 30 এপ্রিল: অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের দ্বার খুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বুধবার দুপুরের মাহেন্দ্রক্ষণে এই মন্দিরের উদ্বোধন করেন তিনি । ঘোষণা করেন, রাজ্যের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাবে মন্দিরের প্রসাদ ও ছবি ।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, "আমি মনে করি, এই মন্দির আগামী হাজার হাজার বছর ধরে তীর্থস্থান ও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে থাকবে । মন্দির সকলের জন্য । আজ থেকেই তার দ্বার খুলে দেওয়া হল । সবারে করি আহ্বান…৷"

এদিন দিঘার মন্দির উদ্বোধনের আগে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়েত রাজেশ দ্বৈতাপতির নেতৃত্বে শুরু হয় বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর্ব । ছিলেন ইসকনের রাধারমণ দাস এবং আরও 57 জন সেবক ও 17 জন সন্ন্যাসী । যজ্ঞে মোট এক কোটিবার নরসিংহ মন্ত্র পাঠ করা হয় । মঙ্গলবার মহাযজ্ঞ ও ধ্বজা উত্তোলনের পর আজই মুখ্যমন্ত্রী মন্দিরের দরজা আনুষ্ঠানিকভাবে খোলেন । আজ অর্থাৎ বুধবার থেকে মন্দির সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ।

উদ্বোধনের দিন মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । সেখানেও ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী । উপস্থিত ছিলেন নচিকেতা চক্রবর্তী, অদিতি মুন্সি-সহ টলিপাড়ার একাধিক বিশিষ্ট শিল্পী । উদ্বোধনের আগে থেকেই দিঘায় ভিড় জমাতে শুরু করেন পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা । স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় নেওয়া হয় কড়া পদক্ষেপ ।
এদিন মন্দির উদ্বোধনের পর সোশাল মিডিয়ায় মন্দির নিয়ে তাঁর হৃদয়ের আবেগকে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, "জগন্নাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে শ্রীজগন্নাথদেবের প্রথম দর্শন হৃদয়ে অমলিন হয়ে থাকবে । মূর্তির পবিত্র জ্যোতিতে আত্মা উদ্বেলিত হয়ে উঠল । আমি আরতি করার সৌভাগ্য লাভ করলাম এবং জগৎপতির আশীর্বাদ আমাদের মা, মাটি ও মানুষের উপর আহ্বান করলাম ।"

প্রসঙ্গত, এদিনই ইসকন কর্তৃপক্ষের হাতে সোনার ঝাড়ু তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী । মন্দিরে আরতি করার পর সেই ঝাড়ুটি তিনি রাধারমণ দাসের হাতে তুলে দেন । পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রার সময় সোনার ঝাড়ু দিয়েই শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের যাত্রাপথ পরিস্কার করার রীতি প্রচলিত । দিঘার মন্দিরের জন্য তৈরি সোনার ঝাড়ু তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রী আগেই নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে পাঁচ লক্ষ এক টাকা দান করেছিলেন ।
উদ্বোধনের আগে মুখ্যমন্ত্রী এটা বলেছিলেন যে, স্থানীয় মানুষজন সাহায্য না-করলে এত বড় কাজ সমাপ্ত হতে না । তিনি বলেন, মন্দিরের শীর্ষে বিষ্ণুর অষ্টধাতুর নীলচক্র । চারটি প্রবেশ দ্বার রয়েছে । এতে গর্ভগৃহ, নাটমন্দির, ভোজমণ্ডপ, অন্যান্য প্রয়োজনীয় মণ্ডপ আছে । এখান পাথরের তৈরি বিগ্রহ যেমন আছে, তেমন নিমকাঠের তৈরি বিগ্রহও আছে । মন্দির চত্বরকে কেন্দ্র করে 500-রও বেশি গাছ লাগানো হয়েছে । এই মন্দির হাজার-হাজার বছর ধরে অপূর্ব সৃষ্টির মর্যাদা পাবে ।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, "দ্বারোদ্ঘাটনের পর অতিথিদের প্রসাদ পাঠানো হবে । ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ মন্দিরে ঢুকবেন । মন্দিরের দ্বার খুললে, যখন খুশি আসবেন । পাশেই গজা-প্যাঁড়া-খাজার দোকান তৈরি হচ্ছে । মেইন মন্দিরে ধ্বজা ওড়ানো হয়েছে । তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভাগকে আমি দায়িত্ব দিচ্ছি, যাতে একটু করে প্রসাদ ও জগন্নাথ দেবের ছবি পশ্চিমবঙ্গের সকলের বাড়ি ও ভারতের বিখ্যাত মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া যায় ।" মমতার কথায়, "জয় জগন্নাথ-জয় বাংলা বলে এই জগন্নাথ দেবের মন্দির মা-মাটি-মানুষকে উৎসর্গ করলাম ।"