কলকাতা, 30 এপ্রিল: বড়বাজার অগ্নিকাণ্ডে মৃতদের পরিবারপিছু 2 লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পাশাপাশি আহতদের প্রত্যেককে রাজ্য সরকার 50 হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য় করবে বলে জানিয়েছেন তিনি ৷
এদিন সোশাল মিডিয়া এক্স হ্যান্ডেলে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, "বড়বাজার এলাকার একটি বেসরকারি হোটেল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি আমি সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি এবং প্রায় 99 জনকে সবচেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ৷ তার জন্য দমকল এবং পুলিশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি । উদ্ধারকাজে স্থানীয় জনগণকে সহযোগিতার জন্যও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি । প্রাথমিকভাবে আমাকে জানানো হয়েছে যে, নিহতদের শ্বাস রুদ্ধ হয়ে বা ঝাঁপ দেওয়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে । ঘটনার তদন্ত চলছে । রাজ্য সরকার প্রতিটি নিহতের নিকটাত্মীয়কে 2 লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করবে ৷ আহতদের প্রত্যেককে 50 হাজার টাকা করে দেওয়া হবে ।"
মঙ্গলবার রাতে বড়বাজারের মেছুয়া ফলপট্টির একটি বেসরকারি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ৷ তাতে মৃত কমপক্ষে 15 জন । দমকলের প্রাথমিক অনুমান, ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে একের পর এক মৃত্যু হয়েছে । ঘটনার পরেই রাজ্যজুড়ে শোকের ছায়া । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন উপলক্ষে দিঘায় রয়েছেন ৷ সেখান থেকে তিনি রাতভর পরিস্থিতির উপর নজর রাখেন । ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী । পাশাপাশি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি ।
Continuing to monitor the fallout of the unfortunate fire incident at a private hotel (Rituraj) in the Burra Bazar area and appreciate the Fire Services' and police efforts in rescuing around 99 persons from out of most adverse circumstances.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) April 30, 2025
Also thankful to the local people…
এদিন সোশাল মিডিয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একটি পোস্ট করেন । সেখানে তিনি লেখেন, "বড়বাজার এলাকার একটি বেসরকারি হোটেলে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা জানাই । আমি সারা রাত ঘটনাটির উপর নজর রেখেছি । ভিতরে দাহ্য বস্তু মজুত থাকায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে । তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।"
My heart goes out to the victims of the fire incident that took place at a private hotel (Rituraj) in Burra Bazar area.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) April 30, 2025
I monitored the rescue and fire fight operations throughout the night and mobilised maximal fire brigade services in the area. 14 died eventually in total…
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী দিঘা থেকে সারা রাত জেগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন । প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ ও দমকলকে । ঘটনাস্থলে গিয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, ফিরহাদ হাকিম ও শশী পাঁজা । পুলিশ ও দমকল যৌথভাবে বহু মানুষকে উদ্ধার করেছে । স্কাইল্যাডার দিয়ে ছাদ থেকে নামানো হয়েছে অনেককে ।"

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালেই এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ মৃতদের পরিবারপিছু 2 লক্ষ টাকা ও আহতদের জন্য 50 হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেন তিনিও । এর ফলে রাজ্য ও কেন্দ্র দুই স্তর থেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার আশ্বাস মিলেছে । আপাতত আগুনের কারণ ও হোটেলের ভিতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত চলছে । প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
এদিকে মেছুয়া বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ, বিজয় উপাধ্যায় ও তাপস রায় । তাঁদের ঘটনাস্থলে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে ।

বিজেপি নেতা তাপস রায় বলেন, "সজল, বিজয়দের বাধা তো দেবেই ৷ তাদের বাধা দেওয়ার কারণ ওখানের সত্যটা মানুষের সামনে যেন না-চলে আসে ৷ বাম জমানায় এইরকম ঘটনা ঘটলে কোনও জায়গায় বিরোধীদের আটকানো হত না ৷ তৃণমূলের সময়কালে এই 14 বছর ধরে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলে আসছে প্রতি মুহূর্তে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জগন্নাথদেবের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে যাননি, তিনি রাজনৈতিক প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্য দিঘায় গিয়েছেন । আর এখানে প্রাণ গিয়েছে মানুষের ৷"

তিনি আরও বলেন, "এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন নানাভাবে মানুষের প্রাণ যাবে ৷ এর আগেও বহুবার জতুগৃহে প্রাণ গিয়েছে ৷ সজল ঘোষ, বিজয় উপাধ্যায়ারা কর্পোরেশনের অভ্যন্তরে মানুষদের কথা একাধিকবার বলে ৷ ভবিষ্যতেও বলবে ৷ কিন্তু বর্তমানের পুর প্রশাসন তার কোনও ভ্রূক্ষেপ করে না । কীসের লালসায় পুলিশ, পুরনিগম থেকে দমকল মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে বুঝতে পারছি না ।"
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার হঠাৎ আগুন লাগে বড়বাজারের মেছুয়া ফলপট্টির একটি বহু পুরনো বহুতল হোটেলে । ঘিঞ্জি এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন । খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের 10টি ইঞ্জিন । প্রায় আট ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে । কিন্তু হোটেলের ভিতরে ততক্ষণে জমেছে বিষাক্ত ধোঁয়া । আগুনের তাপে এবং ধোঁয়ায় হোটেলটি কার্যত 'গ্যাস চেম্বারে' পরিণত হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা ।
প্রাণ বাঁচাতে অনেকে জানলা ভেঙে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেন । এক ব্যক্তি উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান । অনেকেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে । চার ও পাঁচতলার জানলা ভেঙে মই লাগিয়ে উদ্ধারকাজ চালান দমকল কর্মীরা । আতঙ্কে কেউ কেউ হোটেলের কার্নিশে চলে আসেন, তাঁদেরও উদ্ধার করা হয়েছে ।
হোটেলটিতে মোট 47টি ঘর ছিল । অধিকাংশ ঘরেই ছিলেন রাজ্য ও ভিনরাজ্য থেকে আসা অতিথিরা । এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে বহু আহত । তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ।
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে রাতভর ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, নগরপাল মনোজ ভার্মা ও নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা । নগরপাল জানিয়েছেন, একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে । ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে । ধোঁয়া এখনও পুরোপুরি সরেনি, চলছে উদ্ধারকাজ।