ETV Bharat / state

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পরিকাঠামো নেই, রাস্তার ধারে বসেই খাবার খাচ্ছে খুদেরা - ICDS CENTRES

আইসিডিএস সেন্টারের ঘর তৈরির দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা ৷ তার জন্য গ্রামে রয়েছে সরকারি খাস জমি ৷ অভিযোগ, তা দখল করে রয়েছেন প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ৷

ICDS centres
রাস্তার ধারে বসেই খাবার খাচ্ছে খুদেরা (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : March 26, 2025 at 6:12 PM IST

8 Min Read

মালদা, 26 মার্চ: গ্রামে পাঁচশোরও বেশি পরিবার ৷ সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে গোটা গ্রামকেই ৷ রয়েছে দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ৷ তাতে রয়েছেন পর্যাপ্ত কর্মী ও রাঁধুনিও ৷ কিন্তু সমস্যার বিষয়, কোনও আইসিডিএস সেন্টারেরই নিজস্ব রান্নাঘর নেই ৷ নেই শিশু ও প্রসূতিদের খাওয়ানোর জায়গাও ৷

অথচ সেন্টার দু’টি তৈরি করার জন্য গ্রামে রয়েছে সরকারি খাস জমি ৷ অভিযোগ, সেই জমি দখল করে বসে রয়েছেন এলাকার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ৷ সমস্যার কথা জানিয়ে গ্রামবাসীরা একাধিকবার স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে প্রশাসনিক মহলে অভিযোগ জানিয়েছেন ৷ কিন্তু প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ সবার ৷ তাহলে কি সরকারি জমি তৃণমূল নেতার দখল থেকে সরাতে পারছে না প্রশাসন? প্রশ্ন গোটা গ্রামে ৷

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পরিকাঠামো নেই, রাস্তার ধারে বসেই খাবার খাচ্ছে খুদেরা (ইটিভি ভারত)

এই ছবি গাজোল ব্লকের দেওতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধাওয়েল গ্রামের ৷ এই গ্রামে রয়েছে 512 ও 514 নম্বর আইসিডিএস সেন্টার ৷ কিন্তু সেন্টারের নিজস্ব ঘর না থাকায় কখনও কারও বাড়ির বারান্দায়, কখনও বা খোলা জায়গায় শিশু ও প্রসূতিদের জন্য খাবার রান্নার ব্যবস্থা হয় ৷ প্রসূতি ও শিশুরা নিয়মিত দুই সেন্টারে আসেন ৷ রান্না করা খাবার নিয়ে বাড়ি চলে যান ৷

অনেক সময় আবার গ্রামের মূল রাস্তার ধারেই খাবার খেতে বসে পড়েন ৷ বাচ্চারা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত ৷ গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী আইসিডিএস সেন্টার নির্মাণের জন্য গ্রামে থাকা সরকারি খাস জমি দেখা হয়েছিল ৷ কিন্তু সেই জমি দখল করে রয়েছেন তৃণমূল নেতা বাদিরুদ্দিন শেখ নামে এক ব্যক্তি ৷ তিনি আবার তৃণমূলের নেতা ৷ তাই তাঁকে সরাতে পারা যাচ্ছে না ৷ এমনকি প্রশাসনও তাঁকে ওই জমি থেকে সরাতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ ৷

এই দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ইনচার্জ কুমকুম দাস অধিকারী বলেন, "আমার দু’টি সেন্টারেই খুব অসুবিধে ৷ আমাকে লোকের বাড়িতে রান্না করতে হয় ৷ তারা আমাকে রান্না করতে দিতে চায় না ৷ এমনকি সেন্টার চালাতে দিতেও চায় না ৷ যখন তখন আমাকে সেন্টার তুলে নেওয়ার কথা বলে ৷ তারা সেন্টারের মালও নামাতে দেয় না ৷ হেল্পারের বাড়িতে মাল থাকে ৷ সেটাতেও অনেকের আপত্তি ৷ অন্য সেন্টারে নামিয়ে সেখান থেকে মাল এনে রান্না করতে বলছে ৷"

ICDS centres
আইসিডিএস সেন্টারেরই নিজস্ব রান্নাঘর নেই (নিজস্ব ছবি)

তিনি আরও বলেন, "এরা আমাদের সেন্টার করতে দেবে না বলছে ৷ বাচ্চাদের পড়াশোনাও করাতে পারছি না ৷ এরা তো রান্না করতেই দিতে চাইছে না, পড়াশোনা কোথায় করাব ? জায়গাই তো নেই ৷ আমাদের ঘরের খুব প্রয়োজন ৷ বাচ্চা-প্রসূতিরা রাস্তায় খাচ্ছে৷ জায়গা না থাকলে ওরাই বা কী করবে ! রাস্তায় ধুলো উড়ছে, সাইকেল-টোটো যাচ্ছে, তার মধ্যেই ওরা খাবার খাচ্ছে ৷ খাবার খাওয়ার সময় গরু-ষাঁড়ও চলে আসছে ৷ এভাবেই সেন্টার চলছে ৷ অনেক সময় বাচ্চাদের মায়েরা খাবার নিয়ে চলে যায় ৷ আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘরের আবেদন করেছি ৷ অফিসেও কাগজপত্র জমা দেওয়া আছে ৷ তবে কবে ঘর পাওয়া যাবে জানি না ৷"

গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি পাহান বলছেন, "সমস্যা যে আছে সেটা তো সবাই দেখতে পাচ্ছে ৷ এতে কোনও লুকোছাপার বিষয় নেই ৷ বাচ্চারা আসছে, খিচুড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে ৷ ওদের দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই ৷ এটা তো রাস্তা ৷ সবসময় সাইকেল, মোটর সাইকেল চলছে ৷ তাহলে বাচ্চাদের কোথায় পড়াবে? আমরা যে দিদিমনিকে এই বিষয়ে কিছু বলব, তার উপায় নেই ৷ দিদিমনিকে কিছু বলতেই পারি না ৷ আমাদের এখন সেন্টারের ঘর দরকার ৷ বাচ্চাদের তো পড়াশোনা করাও প্রয়োজন ৷ শুধু খিচুড়ি খেয়ে কী হবে ৷"

আরেক গ্রামবাসী জ্যোতির্ময় বিশ্বাসের অভিযোগ, "গ্রামে সরকারি জায়গা আছে ৷ কিন্তু সেই জায়গাটি এমন এক ব্যক্তিকে জবরদখলের জন্য দেওয়া হয়েছে যাঁর প্রচুর সম্পত্তি ৷ আমরা বিষয়টি বিএল অ্যান্ড এলআরও থেকে শুরু করে জেলাশাসক পর্যন্ত সবাইকে জানিয়েছি ৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না ৷ এই গ্রামের ছেলেমেয়েরা যে পড়াশোনা করার জন্য একটা সুস্থ পরিবেশ পাবে, ভালো পরিবেশে খাবার খেতে পারবে, ভালো জায়গায় রান্না হবে, তার কোনও সংস্থান নেই ৷ আমরা চাইছি, গ্রামে থাকা সরকারি 20 শতক খাস জমিতেই আইসিডিএস সেন্টারের ঘর তৈরি হোক ৷"

ICDS centres
আইসিডিএস সেন্টারের ঘরের দাবি গ্রামবাসীদের (নিজস্ব ছবি)

সরকারি খাস জমি দখল করার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে, সেই বাদিরুদ্দিন শেখের ছেলে ডালিম শেখ কিন্তু এনিয়ে সরাসরি কোনও উত্তর দিতে চাননি৷ তিনি বলেন, "এই জায়গা বাবার নামে রয়েছে ৷ একজনের কাছ থেকে এই জায়গা কেনা হয়েছে ৷ আপনার বাড়িতে কি আমি ঢুকে যেতে পারব ? আপনার বাড়িতে গেলে আপনি হয়তো আমাকে বসতে দেবেন ৷ থাকতে দেবেন কি ? এখানে যে থাকে তারই এটা জমি ৷ গ্রামের লোকজন যা বলছে তাতে যদি বিশ্বাস করবেন তো করুন !"

গাজোলের বিজেপি বিধায়ক চিন্ময় দেববর্মনের কথায়, "এটা সত্যিই লজ্জাজনক বিষয় ৷ ধাওয়েল গ্রামে দু’টি আইসিডিএস সেন্টার রয়েছে ৷ দু’টির নম্বর 512 এবং 514 ৷ ওই দু’টি সেন্টারে গিয়ে আমি দেখতে পাই, সেখানে কোনও স্থায়ী ঘর নেই ৷ খাবার নেওয়ার জন্য বাচ্চাদের দাঁড়ানোরও জায়গা নেই ৷ গ্রামের এক সহৃদয় ব্যক্তি তাঁর বাড়ির একটি অংশে রান্না করার অনুমতি দিয়েছেন ৷ সেখানে পঠনপাঠনের কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ যিনি দিদিমনি, তিনি 514 নম্বরের দায়িত্বে রয়েছেন ৷ তাঁকেই 512 নম্বরের ইনচার্জ করা হয়েছে ৷ তিনি আসেন ৷ খিচুড়ি বিলি করেন ৷ মায়েরা সেই খিচুড়ি নিয়ে চলে যান ৷ কারণ, বাচ্চাদের খাবার খাওয়ার জায়গা নেই ৷"

তাঁর সংযোজন, "গ্রামবাসীরা একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে ৷ বিএল অ্যান্ড এলআরও থেকে শুরু করে জেলাশাসককে পর্যন্ত চিঠি দিয়েছে ৷ সম্প্রতি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক ওই জমির জবরদখলকারীকে সাতদিনের উচ্ছেদ নোটিশ পাঠিয়েছেন ৷ সাতদিনের মধ্যে জমি খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ কিন্তু সাতদিন পেরিয়ে গেলেও জবরদখলকারী ব্যক্তি সেই জমি খালি করেননি ৷ বিডিও আর আইসি শুধু বলছেন, তাঁরা দেখছেন ৷ প্রশাসনিক কর্তারাই যদি শাসকদলের ভয়ে মেরুদণ্ডহীন হয়ে থাকেন, তবে সাধারণ মানুষ আজ কোথায় যাবে? এই ঘটনায় পশ্চিবঙ্গ সরকারের কঙ্কালসার চেহারার ছবি প্রকাশ পেয়েছে ৷"

ICDS centres
আইসিডিএস সেন্টারের নিজস্ব নিজস্ব ঘর নেই (নিজস্ব ছবি)

সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক খোকন বৈদ্য বলেন, "ঘটনাটি ধাওয়েল আদিবাসী পাড়ার ৷ সেখানে ভাড়া বাড়িতে আমাদের সেন্টার চলে ৷ সেখানে আমাদের নিজস্ব ঘর তৈরির জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো আছে ৷ এনিয়ে বিডিওর সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে ৷ আমরা বলেছি, ধাওয়েলে আমরা একটি ভেস্ট জমির সন্ধান পেয়েছি ৷ সেখানকার মানুষজনও আমাদের লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন ৷ তাঁরা সেখানে সেন্টারের ঘর তৈরির আবেদন করেছেন ৷ আমরা জেলায় প্রকল্প পাঠিয়েছি ৷ কিন্তু সেখান থেকে এখনও আমাদের কাছে নতুন ঘরের তালিকা চায়নি ৷ কিন্তু খাস জমি দখল করে রাখার খবর আমরা এখনও পাইনি ৷ তবে খাস জমি থাকলে তা দখল করা যাবে না ৷ সেখানে আইসিডিএস ভবন হবেই ৷ বিডিও নিজেও সেকথা জানিয়ে দিয়েছেন ৷ আমি এনিয়ে দ্রুত বিডিওকে চিঠি পাঠাব ৷"

যদিও ধাওয়েল গ্রামে খাস জমি থাকার কথাই মানতে চাননি তৃণমূল পরিচালিত গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন ৷ উলটে এতে বিজেপির চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন তিনি ৷ তাঁর সাফ কথা, "যে আইসিডিএস সেন্টার নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সেটি পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনের প্রত্যেকের নজরে রয়েছে ৷ এটা বিরোধীদের অপপ্রচার ৷ যে খাস জমি নিয়ে বিতর্ক, সেই জমি নিয়ে বিএল অ্যান্ড এলআরও, বিডিও এবং গাজোল থানার আইসির তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত শুরু করেছিল ৷ তদন্তে উঠে এসেছে, ওই ভদ্রলোক সরকারি জায়গায় নেই ৷ এই জায়গার সঙ্গে আইসিডিএস সেন্টারের কোনও সম্পর্ক নেই ৷"

তাঁর কথায়, "গ্রামবাসীরা নয়, বিজেপি আশ্রিত ওই এলাকার কিছু স্বার্থাণ্বেষী মানুষ, যাদের এককথায় দুষ্কৃতী বললেই চলে, তারাই এই মিথ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে ৷ তারা এনিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে ৷ আমরা তবু বিএল অ্যান্ড এলআরওকে তদন্ত করতে বলেছি ৷ আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যেই বিরোধীরা আসল তথ্য পেয়ে যাবে ৷ তবে আগামিদিনে ওখানে আইসিডিএস সেন্টার নিয়ে কোনও সমস্যা থাকবে না ৷ আমরা অল্পদিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান করতে চাইছি ৷"

মালদা, 26 মার্চ: গ্রামে পাঁচশোরও বেশি পরিবার ৷ সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে গোটা গ্রামকেই ৷ রয়েছে দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ৷ তাতে রয়েছেন পর্যাপ্ত কর্মী ও রাঁধুনিও ৷ কিন্তু সমস্যার বিষয়, কোনও আইসিডিএস সেন্টারেরই নিজস্ব রান্নাঘর নেই ৷ নেই শিশু ও প্রসূতিদের খাওয়ানোর জায়গাও ৷

অথচ সেন্টার দু’টি তৈরি করার জন্য গ্রামে রয়েছে সরকারি খাস জমি ৷ অভিযোগ, সেই জমি দখল করে বসে রয়েছেন এলাকার এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ৷ সমস্যার কথা জানিয়ে গ্রামবাসীরা একাধিকবার স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে প্রশাসনিক মহলে অভিযোগ জানিয়েছেন ৷ কিন্তু প্রশাসন এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ সবার ৷ তাহলে কি সরকারি জমি তৃণমূল নেতার দখল থেকে সরাতে পারছে না প্রশাসন? প্রশ্ন গোটা গ্রামে ৷

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পরিকাঠামো নেই, রাস্তার ধারে বসেই খাবার খাচ্ছে খুদেরা (ইটিভি ভারত)

এই ছবি গাজোল ব্লকের দেওতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধাওয়েল গ্রামের ৷ এই গ্রামে রয়েছে 512 ও 514 নম্বর আইসিডিএস সেন্টার ৷ কিন্তু সেন্টারের নিজস্ব ঘর না থাকায় কখনও কারও বাড়ির বারান্দায়, কখনও বা খোলা জায়গায় শিশু ও প্রসূতিদের জন্য খাবার রান্নার ব্যবস্থা হয় ৷ প্রসূতি ও শিশুরা নিয়মিত দুই সেন্টারে আসেন ৷ রান্না করা খাবার নিয়ে বাড়ি চলে যান ৷

অনেক সময় আবার গ্রামের মূল রাস্তার ধারেই খাবার খেতে বসে পড়েন ৷ বাচ্চারা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত ৷ গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী আইসিডিএস সেন্টার নির্মাণের জন্য গ্রামে থাকা সরকারি খাস জমি দেখা হয়েছিল ৷ কিন্তু সেই জমি দখল করে রয়েছেন তৃণমূল নেতা বাদিরুদ্দিন শেখ নামে এক ব্যক্তি ৷ তিনি আবার তৃণমূলের নেতা ৷ তাই তাঁকে সরাতে পারা যাচ্ছে না ৷ এমনকি প্রশাসনও তাঁকে ওই জমি থেকে সরাতে ব্যর্থ বলে অভিযোগ ৷

এই দু’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ইনচার্জ কুমকুম দাস অধিকারী বলেন, "আমার দু’টি সেন্টারেই খুব অসুবিধে ৷ আমাকে লোকের বাড়িতে রান্না করতে হয় ৷ তারা আমাকে রান্না করতে দিতে চায় না ৷ এমনকি সেন্টার চালাতে দিতেও চায় না ৷ যখন তখন আমাকে সেন্টার তুলে নেওয়ার কথা বলে ৷ তারা সেন্টারের মালও নামাতে দেয় না ৷ হেল্পারের বাড়িতে মাল থাকে ৷ সেটাতেও অনেকের আপত্তি ৷ অন্য সেন্টারে নামিয়ে সেখান থেকে মাল এনে রান্না করতে বলছে ৷"

ICDS centres
আইসিডিএস সেন্টারেরই নিজস্ব রান্নাঘর নেই (নিজস্ব ছবি)

তিনি আরও বলেন, "এরা আমাদের সেন্টার করতে দেবে না বলছে ৷ বাচ্চাদের পড়াশোনাও করাতে পারছি না ৷ এরা তো রান্না করতেই দিতে চাইছে না, পড়াশোনা কোথায় করাব ? জায়গাই তো নেই ৷ আমাদের ঘরের খুব প্রয়োজন ৷ বাচ্চা-প্রসূতিরা রাস্তায় খাচ্ছে৷ জায়গা না থাকলে ওরাই বা কী করবে ! রাস্তায় ধুলো উড়ছে, সাইকেল-টোটো যাচ্ছে, তার মধ্যেই ওরা খাবার খাচ্ছে ৷ খাবার খাওয়ার সময় গরু-ষাঁড়ও চলে আসছে ৷ এভাবেই সেন্টার চলছে ৷ অনেক সময় বাচ্চাদের মায়েরা খাবার নিয়ে চলে যায় ৷ আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘরের আবেদন করেছি ৷ অফিসেও কাগজপত্র জমা দেওয়া আছে ৷ তবে কবে ঘর পাওয়া যাবে জানি না ৷"

গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি পাহান বলছেন, "সমস্যা যে আছে সেটা তো সবাই দেখতে পাচ্ছে ৷ এতে কোনও লুকোছাপার বিষয় নেই ৷ বাচ্চারা আসছে, খিচুড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে ৷ ওদের দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই ৷ এটা তো রাস্তা ৷ সবসময় সাইকেল, মোটর সাইকেল চলছে ৷ তাহলে বাচ্চাদের কোথায় পড়াবে? আমরা যে দিদিমনিকে এই বিষয়ে কিছু বলব, তার উপায় নেই ৷ দিদিমনিকে কিছু বলতেই পারি না ৷ আমাদের এখন সেন্টারের ঘর দরকার ৷ বাচ্চাদের তো পড়াশোনা করাও প্রয়োজন ৷ শুধু খিচুড়ি খেয়ে কী হবে ৷"

আরেক গ্রামবাসী জ্যোতির্ময় বিশ্বাসের অভিযোগ, "গ্রামে সরকারি জায়গা আছে ৷ কিন্তু সেই জায়গাটি এমন এক ব্যক্তিকে জবরদখলের জন্য দেওয়া হয়েছে যাঁর প্রচুর সম্পত্তি ৷ আমরা বিষয়টি বিএল অ্যান্ড এলআরও থেকে শুরু করে জেলাশাসক পর্যন্ত সবাইকে জানিয়েছি ৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না ৷ এই গ্রামের ছেলেমেয়েরা যে পড়াশোনা করার জন্য একটা সুস্থ পরিবেশ পাবে, ভালো পরিবেশে খাবার খেতে পারবে, ভালো জায়গায় রান্না হবে, তার কোনও সংস্থান নেই ৷ আমরা চাইছি, গ্রামে থাকা সরকারি 20 শতক খাস জমিতেই আইসিডিএস সেন্টারের ঘর তৈরি হোক ৷"

ICDS centres
আইসিডিএস সেন্টারের ঘরের দাবি গ্রামবাসীদের (নিজস্ব ছবি)

সরকারি খাস জমি দখল করার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে, সেই বাদিরুদ্দিন শেখের ছেলে ডালিম শেখ কিন্তু এনিয়ে সরাসরি কোনও উত্তর দিতে চাননি৷ তিনি বলেন, "এই জায়গা বাবার নামে রয়েছে ৷ একজনের কাছ থেকে এই জায়গা কেনা হয়েছে ৷ আপনার বাড়িতে কি আমি ঢুকে যেতে পারব ? আপনার বাড়িতে গেলে আপনি হয়তো আমাকে বসতে দেবেন ৷ থাকতে দেবেন কি ? এখানে যে থাকে তারই এটা জমি ৷ গ্রামের লোকজন যা বলছে তাতে যদি বিশ্বাস করবেন তো করুন !"

গাজোলের বিজেপি বিধায়ক চিন্ময় দেববর্মনের কথায়, "এটা সত্যিই লজ্জাজনক বিষয় ৷ ধাওয়েল গ্রামে দু’টি আইসিডিএস সেন্টার রয়েছে ৷ দু’টির নম্বর 512 এবং 514 ৷ ওই দু’টি সেন্টারে গিয়ে আমি দেখতে পাই, সেখানে কোনও স্থায়ী ঘর নেই ৷ খাবার নেওয়ার জন্য বাচ্চাদের দাঁড়ানোরও জায়গা নেই ৷ গ্রামের এক সহৃদয় ব্যক্তি তাঁর বাড়ির একটি অংশে রান্না করার অনুমতি দিয়েছেন ৷ সেখানে পঠনপাঠনের কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ যিনি দিদিমনি, তিনি 514 নম্বরের দায়িত্বে রয়েছেন ৷ তাঁকেই 512 নম্বরের ইনচার্জ করা হয়েছে ৷ তিনি আসেন ৷ খিচুড়ি বিলি করেন ৷ মায়েরা সেই খিচুড়ি নিয়ে চলে যান ৷ কারণ, বাচ্চাদের খাবার খাওয়ার জায়গা নেই ৷"

তাঁর সংযোজন, "গ্রামবাসীরা একাধিকবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে ৷ বিএল অ্যান্ড এলআরও থেকে শুরু করে জেলাশাসককে পর্যন্ত চিঠি দিয়েছে ৷ সম্প্রতি ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক ওই জমির জবরদখলকারীকে সাতদিনের উচ্ছেদ নোটিশ পাঠিয়েছেন ৷ সাতদিনের মধ্যে জমি খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন ৷ কিন্তু সাতদিন পেরিয়ে গেলেও জবরদখলকারী ব্যক্তি সেই জমি খালি করেননি ৷ বিডিও আর আইসি শুধু বলছেন, তাঁরা দেখছেন ৷ প্রশাসনিক কর্তারাই যদি শাসকদলের ভয়ে মেরুদণ্ডহীন হয়ে থাকেন, তবে সাধারণ মানুষ আজ কোথায় যাবে? এই ঘটনায় পশ্চিবঙ্গ সরকারের কঙ্কালসার চেহারার ছবি প্রকাশ পেয়েছে ৷"

ICDS centres
আইসিডিএস সেন্টারের নিজস্ব নিজস্ব ঘর নেই (নিজস্ব ছবি)

সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক খোকন বৈদ্য বলেন, "ঘটনাটি ধাওয়েল আদিবাসী পাড়ার ৷ সেখানে ভাড়া বাড়িতে আমাদের সেন্টার চলে ৷ সেখানে আমাদের নিজস্ব ঘর তৈরির জন্য ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো আছে ৷ এনিয়ে বিডিওর সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে ৷ আমরা বলেছি, ধাওয়েলে আমরা একটি ভেস্ট জমির সন্ধান পেয়েছি ৷ সেখানকার মানুষজনও আমাদের লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন ৷ তাঁরা সেখানে সেন্টারের ঘর তৈরির আবেদন করেছেন ৷ আমরা জেলায় প্রকল্প পাঠিয়েছি ৷ কিন্তু সেখান থেকে এখনও আমাদের কাছে নতুন ঘরের তালিকা চায়নি ৷ কিন্তু খাস জমি দখল করে রাখার খবর আমরা এখনও পাইনি ৷ তবে খাস জমি থাকলে তা দখল করা যাবে না ৷ সেখানে আইসিডিএস ভবন হবেই ৷ বিডিও নিজেও সেকথা জানিয়ে দিয়েছেন ৷ আমি এনিয়ে দ্রুত বিডিওকে চিঠি পাঠাব ৷"

যদিও ধাওয়েল গ্রামে খাস জমি থাকার কথাই মানতে চাননি তৃণমূল পরিচালিত গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন ৷ উলটে এতে বিজেপির চক্রান্ত দেখতে পাচ্ছেন তিনি ৷ তাঁর সাফ কথা, "যে আইসিডিএস সেন্টার নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সেটি পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনের প্রত্যেকের নজরে রয়েছে ৷ এটা বিরোধীদের অপপ্রচার ৷ যে খাস জমি নিয়ে বিতর্ক, সেই জমি নিয়ে বিএল অ্যান্ড এলআরও, বিডিও এবং গাজোল থানার আইসির তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত শুরু করেছিল ৷ তদন্তে উঠে এসেছে, ওই ভদ্রলোক সরকারি জায়গায় নেই ৷ এই জায়গার সঙ্গে আইসিডিএস সেন্টারের কোনও সম্পর্ক নেই ৷"

তাঁর কথায়, "গ্রামবাসীরা নয়, বিজেপি আশ্রিত ওই এলাকার কিছু স্বার্থাণ্বেষী মানুষ, যাদের এককথায় দুষ্কৃতী বললেই চলে, তারাই এই মিথ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে ৷ তারা এনিয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে ৷ আমরা তবু বিএল অ্যান্ড এলআরওকে তদন্ত করতে বলেছি ৷ আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যেই বিরোধীরা আসল তথ্য পেয়ে যাবে ৷ তবে আগামিদিনে ওখানে আইসিডিএস সেন্টার নিয়ে কোনও সমস্যা থাকবে না ৷ আমরা অল্পদিনের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান করতে চাইছি ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.