কলকাতা, 7 এপ্রিল: 26 হাজার চাকরি বাতিলের পর এবার জিটিএ এলাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি প্রসঙ্গে আদালতের তোপের মুখে পড়ল রাজ্য ৷ বেআইনিভাবে নিযুক্ত 313 জন শিক্ষকের বেতন রাজ্য বন্ধ করবে কি না তা জানতে চাইলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ।
বিচারপতি রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের কাছে জানতে চান, "রাজ্য বন্ধ করবে, নাকি আমি বেতন বন্ধের নির্দেশ দেব ?" এই বিষয়টি নিয়ে নির্দেশের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল । বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি হবে বলে জানান বিচারপতি ।
জিটিএ এরিয়াতে কোনও পরীক্ষা ছাড়াই প্রাথমিক স্তরে 700 জনেরও বেশি শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছিল । যদিও এই বিষয়ে রাজ্যের বক্তব্য ছিল, "দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে পড়াচ্ছিলেন এই রকম শিক্ষকদের স্থায়ী করা হয়েছিল । এখানে পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকতে পারে । কিন্তু দুর্নীতি হয়নি।"
এই ঘটনায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন । তদন্তের পর সিআইডি হাইকোর্টে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়ে জানায় 313 নিয়মের বাইরে গিয়ে নিয়োগ করা হয়েছে । এই নিয়োগে নাম জড়িয়েছিল প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তূণমূলের যুবনেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য, পাহাড়ের নেতা বিনয় তামাং-সহ একাধিক নেতার । এঁরা টাকার বিনিময়ে এই নিয়োগ করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে ।
বিচারপতি শুনানিতে সিআইডির ডিআইজিকে আদালতে তলব করেছিলেন । বিচারপতি জানতে চান, অভিযোগ দায়েরের পর কেন অভিযুক্তদের
41/এ ধারার নোটিশ পাঠিয়ে ডাকা হল না ? পুরো ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে । অভিযুক্ত হিসেবে কয়েকটি নাম সামনে এসেছে ৷ তবু তাঁদের একবার ও ডাকা হল না কেন ? ডিআই থেকে শুরু করে বিনয় তামাংদের নোটিশও পাঠানো হল না কেন ?
পালটা রাজ্যের আইনজীবী রুদ্র নন্দী আদালতে বলেন, "সিআইডি এখনও তদন্তের সেই পর্যায় পৌঁছয়নি । তাই নোটিশের প্রয়োজন হয়নি । একটা বেনামী চিঠির ভিত্তিতে এফআইআর করে তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত চলছে ।"
এই বিষয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুং বলেন, "এতগুলো ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যেতে বসেছে । দুর্নীতি হয়ে থাকলে তদন্ত হোক । কিন্তু এই ছেলে-মেয়েগুলোর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র সরকার হস্তক্ষেপ করুক ।"
এই বিষয়ে জিটিএ'র মুখপাত্র এসপি শর্মা বলেন, "এটি একটি আদালতের পর্যবেক্ষণ । রায় নয় । এখনই আমরা এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না । পাহাড়ে কোনও নিয়োগ ব্যবস্থাই নেই । অনিত থাপা ক্ষমতায় আসার পর আমরা আঞ্চলিক স্কুল সার্ভিস কমিশনের দাবি জানিয়েছি ।"
উল্লেখ্য, নিজের নাম প্রকাশ না করে বিচারপতি বসুকে পাঠানো চিঠিতে জিটিএ এলাকায় নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন এক সরকারি আধিকারিক ।