কলকাতা, 16 অগস্ট: আরজি কর হাসপাতালে রাতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্ট ৷ প্রশ্নের মুখে রাজ্য পুলিশ ৷ ক্রুদ্ধ প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, "হাসপাতাল বন্ধ করে দিন ৷" ভাঙচুর-স্থলে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ৷ পরবর্তী শুনানিতে হলফনামা দিয়ে তাদের রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে বলেছেন তিনি ৷ আগামী বুধবার হবে এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৷
পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে মৃত চিকিৎসক ছাত্রীর পরিচয় ও ছবি যাতে সমাজমাধ্যমে প্রচার করা না-হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সবার কাছে অনুরোধ করেছে আদালত ।
আরজি করে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাজ্যের ভূমিকায় প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট । প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এদিন বলেন, "হাসপাতাল বন্ধ করে দিন, আমরা রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করতে বলছি ৷"
উল্লেখ্য, 15 অগস্ট রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ বৃহৎ সংখ্যায় দুষ্কৃতীরা আরজি কর হাসপাতালে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায় । ভাঙচুর করা হয় হাসপাতালের একাধিক সরঞ্জাম ৷ হামলায় একাধিক পুলিশ আধিকারিক আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি । যদিও হাসপাতালের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক ।
এই ঘটনা নিয়ে পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে আজ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ । আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে মামলা দায়ের করার আবেদন জানান । সন্দীপ ঘোষের আইনজীবীর বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ মতো সিবিআই প্রাক্তন অধ্যক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে । তাতে পূর্ণ সহযোগিতা করতে তিনি প্রস্তুত । কিন্তু তার আগে কেন্দ্র বা রাজ্য যেই হোক, হাসপাতালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক বলে আর্জি জানান সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী । এরপরই বিচারপতি নির্দেশ দেন, সন্দীপ ঘোষ যখন সিবিআই দফতরে যাবেন, সেই সময় পুলিশকে প্রয়োজনে তাঁকে নিরাপত্তা দিতে হবে ৷
এরই প্রেক্ষিতে রাজ্যের আইনজীবী অমিতেষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গতকাল আরজি করে দুষ্কৃতীদের হামলার ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে । প্রায় সাত হাজার লোক জড়ো হয়েছিল । সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে । একথা শুনে তাজ্জব হয়ে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, "7 হাজারের বেশি লোক জড়ো হয়েছিল । পুলিশের ইনটেলিজেন্সের কাছে কোনও খবর ছিল না ? এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় ।"
এই সময় আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "আদালত গত বুধবার তিনটের সময় নির্দেশ দেয় । কিন্তু তারপরই সন্ধে 6টা নাগাদ আরজি কর হাসপাতালে গিয়ে আমি দেখি কিছু জায়গায় ভাঙা হয়েছে । একটা বড় দুষ্কৃতীর দল হাসপাতালে আক্রমণ করে । ইমার্জেন্সি ওয়ার্ড-সহ একাধিক জায়গায় ভাঙচুর করা হয় । পরে পুলিশ কমিশনার হাসপাতালে গিয়ে বলেন, গোটা শহরজুড়ে বিক্ষোভ চলছে ৷ এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিশের পক্ষে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ করার মতো পরিকাঠামো নেই ।"
এ প্রসঙ্গেই কৌস্তভ বাগচী বলেন, এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক আরজি কর হাসপাতালে । তাঁর এই দাবির জবাব দিয়ে রাজ্যের আইনজীবী অমিতেষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, হাসপাতালের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে । একথা শুনে ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি বলেন, "আপনি তাহলে হলফনামা দিন এই মর্মে যে, কিছু হয়নি । কীসের তাড়া ছিল ভাঙচুর করার ? আমরা হাসপাতালের সমস্ত রোগীকে অন্য কোনও হাসপাতালে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিচ্ছি । হাসপাতাল বন্ধ করে দিন সেটাই ভালো হবে ।" রাজ্যের আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতি বলেন, "আপনি হলফনামা দিয়ে বলুন তাহলে যে, কোথাও কিছু হয়নি । সব ঠিক আছে ।"
অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী এদিন জানান, "আদালতের নির্দেশ মতো ইতিমধ্যেই স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে এবং হাসপাতালে 15 অগস্ট রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা ইতিমধ্যেই তাদের জানানো হয়েছে । তাদের টিম সেখানে ভিজিট করবে ।"
একথা শোনার পরই প্রধান বিচারপতি সিবিআইকেও ভাঙচুর-স্থল পরিদর্শনের নির্দেশ দেন । পরবর্তী শুনানিতে হলফনামা জমা দিতে হবে আদালতে ৷