কলকাতা, 9 জুন: দাঁড়িভিট স্কুলে দুই ছাত্রমৃত্যুর মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে এনআইএ । হাইকোর্টের নির্দেশ না মানায় সোমবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-কে ভর্ৎসনা করলেন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ।
এদিন বিচারপতি চক্রবর্তী বলেন, "তদন্তকারী অফিসার কি মনে করছে যে হাইকোর্ট তাকে কিছু করতে পারবে না ? তাহলে সে ভুল করছে । এটা আদালত অবমাননার সামিল । 9 জুলাইয়ের মধ্যে তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করতে হবে কলকাতা হাইকোর্টে । না হলে তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কলকাতা হাইকোর্ট ।"
2018 সালে দাঁড়িভিটে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয় । পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে, পুলিশ শূন্যে গুলি চালায় । দুর্ভাগ্যবশত সেই গুলিতে দুই যুবকের মৃত্যু হয় । ঘটনার পাঁচ বছর বাদে 2023 সালে কলকাতা হাইকোর্ট এনআইএ তদন্তের নির্দেশ দেয় । কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এখনও পর্যন্ত রিপোর্ট দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি ।
মৃত দুই যুবকের পরিবারের আইনজীবী পার্থ ঘোষ এদিন আদালতে জানান, সেদিন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এক যুবক তথা ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তার বোনকে উদ্ধার করতে যায় । সেখানেই পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তার । অন্যদিকে, ওই ঘটনায় সংলগ্ন একটি মিষ্টির দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকেরও মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে । ঘটনার সঙ্গে পুলিশ আধিকারিকরা যুক্ত থাকায় সঠিক তদন্ত হচ্ছে না এই আবেদন জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার ।
পরিবারের পক্ষ থেকে 20 লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয় । সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি সেই ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন । কিন্তু সরকার 2 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলে পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করে । পাশাপাশি সিঙ্গল বেঞ্চ ঘটনার গুরুত্ব বুঝে এনআইএ তদন্তের নির্দেশিকা জারি করেছিল ।
রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানায় রাজ্য । সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ 3 এপ্রিল 2024 সালে নির্দেশ জারি করেছিল তিন সপ্তাহের মধ্যে এনআইএকে তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করতে হবে হাইকোর্টে ।
এনআইএর আইনজীবী অরুণ কুমার মাইতি এদিন আদালতের কাছে ফের তিন সপ্তাহ সময় দেওয়ার আর্জি জানান তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে পেশ করতে ।
তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারপতি বলেন, "প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এক বছরের উপর হয়ে গেল এখনও তদন্তের রিপোর্টের জন্য কেন সময় চাওয়া হবে ? আপনার তদন্তকারী অফিসার কী করছে ? তদন্তকারী অফিসার কি মনে করছে যে হাইকোর্ট তাকে কিছু করতে পারবে না ? তাহলে সে ভুল করছে এটা আদালত অবমাননার সামিল । 9 জুলাই মামলার শুনানি গ্রহণ করা হবে তার মধ্যে যদি তদন্তকারী অফিসার তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ না করে তাহলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে হাইকোর্ট ।"