রিষড়া, 25 এপ্রিল: কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পরিবারের সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানালেন পাকিস্তানে আটক বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউয়ের পরিবার ৷ স্বামী কবে ফিরবেন সেই চিন্তায় বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন পূর্ণমের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ৷ একই অবস্থা মায়েরও। পরিবারের একটাই কথা, বাড়ি ফিরে আসুক ছেলে ৷ আবার লড়াই করুক দেশের হয়ে ৷
22 এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলায় প্রাণ গিয়েছে 26 জনের ৷ তাঁদের মধ্যে বাঙালি ছিলেন 3 জন ৷ এরই মধ্যে খবর আসে পাকিস্তানের হাতে আটকে হয়েছেন হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা বিএসএফের জওয়ান পূর্ণম ৷ তাঁর বাড়ি ফিরে আসার খবরের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে পরিবার। 3 দিন ধরে রান্না বন্ধ ৷ দিন কাটছে জল খেয়ে।
দল-মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতারাও পাশে থাকছেন এই পরিবারের। ইতিমধ্যেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এরপর শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের তরফে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
যদিও এখনও কোনও খোঁজ-খবর পাচ্ছে না জওয়ানের পরিবার। ছেলে কেমন আছে, কোথায় আছে এবং কীভাবে আছে-কিছুই জানা নেই তাদের। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে জওয়ানের পরিবারে দাবি, দ্রুত ফিরিয়ে আনা হোক ছেলেকে। এদিকে স্বামী এই দুঃসংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী।
রিষড়া পুরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের হরিসভার বাসিন্দা বছর 40-এর পূর্ণম কুমার সাউ পাক সেনার হাতে আটক হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভুল করে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন তিনি ৷ পঞ্জাবের পাঠানকোটের ফিরোজপুর বর্ডারে পোস্টিং ছিল বিএসএফ কনস্টেবল পূর্ণমের। সেখানে ডিউটি করার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লে গাছের নীচে আশ্রয় নেন তিনি। ভুল করে বর্ডার পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁকে পাকিস্তানের সেনা বাহিনী আটক করে নিয়ে যায়। কীভাবে তিনি এদেশে ফিরে আসবেন সেই ব্যাপারে কোনও খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার।

বাবা ভোলানাথ সাউ বলেন, "ছেলের ছাড়া পাওয়া সংক্রান্ত কোনও খবর পাইনি। বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান । আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে আবেদন করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক। রাজ্যও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যেন সহযোগিতা করে আমি তারও আবেদন জানাই। তিন দিন ধরে রান্না হয়নি ৷ জল খেয়ে দিন কাটছে। আমার বউমা অন্তঃসত্ত্বা ৷ সে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেকে যে কোনও উপায়ে ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হোক। ফের দেশের হয়ে লড়ুক এটাই চাই।"
এদিন প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, "সারা ভারত প্রার্থনা করছে ৷ পূর্ণমের জন্য সবাই দোয়া করছে। আমি কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব রাহুল গান্ধিকে চিঠি লিখেছি, সরকারের সঙ্গে কথা বলার জন্য। আমার মনে হয় ভারতীয় ও পাকিস্তান দুই সেনাবাহিনীর আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। অবশ্যই বাড়ি ফিরে আসবেন পূর্ণম কুমার সাউ।" এদিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইনও পূর্ণমের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন ৷ তিনিও পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ৷