মালদা, 24 মার্চ: গরম এখনও সেভাবে পড়েনি মালদা জেলায় ৷ কিন্তু, শঙ্কার মেঘ স্বাস্থ্য পরিষেবায় ৷ কারণ, রক্তের প্রবল অভাব মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে ৷ বিশেষ করে নেগেটিভ গ্রুপের কোনও রক্তই মজুত নেই ৷ আর তার জেরে চিন্তিত চিকিৎসকরা ৷ চিন্তায় সাধারণ মানুষও ৷ হঠাৎ কোনও আপৎকালীন সমস্যা তৈরি হলে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা ৷
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পর উত্তরবঙ্গের আটটি জেলার মধ্যে মালদা মেডিক্যালেই রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি ৷ শুধু মালদা নয়, পাশে থাকা দুই দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদের একাংশ, এমনকি ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকেও প্রচুর মানুষ এই হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসে ৷ আর এই জেলায় রক্তের মূল ভাণ্ডার বলতে মালদা মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাংক ৷
জেলায় এখনও পর্যন্ত বেসরকারি কোনও ব্লাড ব্যাংক তৈরি হয়নি ৷ সরকারি উদ্যোগে বছর দু’য়েক আগে চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নতুন একটি ব্লাড ব্যাংক গড়ে উঠলেও, সেখানে পর্যাপ্ত রক্ত সংগ্রহ করা যায় না ৷ উল্টে মাঝেমধ্যে মেডিক্যাল থেকেই সেখানে রক্ত পাঠাতে হয় ৷ কিন্তু, এই মুহূর্তে মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাংকে কোনও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত নেই বলে অভিযোগ ৷ হাতে গোনা কয়েকটি পজিটিভ রিজেন্টের রক্তের ইউনিট মজুত রয়েছে ৷
মালদা মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাংকে প্রতিদিন 80-90 ইউনিট রক্তের প্রয়োজন পড়ে ৷ জেলার বিভিন্ন নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালে এখান থেকেই রক্ত যায় ৷ প্রয়োজনে সংলগ্ন জেলাগুলির হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমগুলিও রক্ত নিয়ে যায় ৷
গরমের সময় স্বাভাবিকভাবেই প্রতি বছর রক্তের জোগান কমে যায় ৷ কিন্তু, এবার গরম সেভাবে না-পড়তেই মজুত রক্ত প্রায় শেষ ৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় রক্ত নিতে আসা রোগীর পরিবারের লোকজনকে ডোনার নিয়ে আসতে বলা হচ্ছে ৷ তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা, রমজান মাসের জন্য মালদা জেলায় সেভাবে রক্তদান শিবিরের আয়োজন হচ্ছে না ৷ ফলে চাহিদা আর জোগানের ফারাক তৈরি হচ্ছে ৷ দিন-দিন সেই ফারাক বাড়ছে ৷
ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মজিবুল হক বলেন, "পরিস্থিতি ভালো নয় ৷ ব্লাড ব্যাংকের মজুত প্রায় শেষ ৷ রবিবার সকাল পর্যন্ত নেগেটিভ রক্ত নেই ৷ পজিটিভও কয়েক ইউনিট রয়েছে ৷ মেডিক্যালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরাও এ নিয়ে চিন্তিত ৷ সমস্যা হল, রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য অনেকেই রক্তদান করছেন না ৷ এরপরেই গরম বাড়বে ৷ তখন রক্তের জোগান আরও কমে যাবে ৷ এখানে প্রতিদিন গড়ে 80 থেকে 90 ইউনিট রক্তের চাহিদা থাকে ৷ গরমের সময় চাহিদা আরও বেড়ে যায় ৷ এখন আমরা রোগীর পরিজনদের ডোনার নিয়ে আসতে বলছি ৷ এই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনও রাস্তা খোলা নেই ৷ রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার জন্য আমরা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ক্লাবকে আবেদন জানিয়েছি ৷ গতকাল মালদা শহরে একটি শিবিরের আয়োজন হয়েছে ৷ সেখান থেকে কিছু রক্ত সংগ্রহ করা গিয়েছে ৷"
ব্লাড ব্যাংক সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত বছর এখানে রক্তের চাহিদা ছিল 41 হাজার 621 ইউনিট ৷ 2024 সালে মালদায় রক্তদান শিবির হয়েছে 256টি ৷ 2023 সালে চাহিদা ছিল 37 হাজার 689 ইউনিট ৷ শিবির হয়েছিল 285টি ৷ 2023 সালে চাহিদা ছিল 36 হাজার ইউনিট ৷ সে’বছর শিবিরের সংখ্যা ছিল 317টি ৷
অর্থাৎ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর রক্তের চাহিদা বাড়লেও রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমছে ৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংকট থেকে বাঁচতে হলে রক্তদান সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে ৷ প্রয়োজনে ধর্মগুরুদের সহায়তা নিতে হবে ৷ প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে ৷ সবাইকে মনে রাখতে হবে, রক্ত কোনও কারখানায় তৈরি করা যায় না ৷ মানুষের শরীরেই তৈরি হয় ৷ আর রক্তদান করলে মানবদেহে নতুন রক্তকণিকার জন্ম হয় ৷ এতে শরীর ভালো থাকে ৷ রোগ-জীবাণুর আক্রমণ থেকেও বাঁচা যায় ৷