ETV Bharat / state

মহিলা সাংসদের সঙ্গে কল্যাণের বিতণ্ডা প্রকাশ্যে, ভিডিয়ো-চ্যাট ফাঁস বিজেপির - TMC INNER CONFLICT

তৃণমূলের এক মহিলা সাংসদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান দলের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এনিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে চলে তুমুল তরজা ৷ তৃণমূলকে আক্রমণ বিজেপির ৷

TMC MP Kalyan Banerjee
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবি সৌজন্য: সাংসদের এক্স হ্যান্ডেল)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : April 8, 2025 at 7:29 PM IST

6 Min Read

কলকাতা, 8 এপ্রিল: হাজার হাজার চাকরি বাতিলের ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্য-রাজনীতি ৷ বিতর্কের এই আবহে ঘি ঢালল তৃণমূল সাংসদদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ৷ মঙ্গলবার বঙ্গ বিজেপি একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্য়াটের অংশবিশেষ সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে ৷ গেরুয়া শিবিরের দাবি, ওই চ্যাটে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কীর্তি আজাদের মধ্যে ৷ যদিও এই চ্যাটের সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷

চ্যাটের পাশাপাশি বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য একটি ভিডিয়ো ফুটেজ সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন ৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দলেরই আরেক সাংসদের উপর চেঁচামেচি করছেন ৷ অন্যদিকে, তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উপস্থিত অন্য সাংসদরা ৷

তৃণমূল সাংসদদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ঘিরে শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে (ইটিভি ভারত)

এদিকে এই গোলমালের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কল্যাণ ৷ এর জন্য তিনি দলেরই এক মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ৷ সংবাদসংস্থা পিটিআই তাঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে ৷ কল্য়াণ বলেছেন, "আমি গত 40 বছর ধরে রাজনীতি করছি ৷ এই মহিলা সাংসদ নির্বাচন কমিশনে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের আমাকে গ্রেফতার করতে বলছেন ৷ ওরা আমায় জেলে পাঠানোর কে ? তিনি আমায় কটূক্তি করেছেন ৷ আমি সংসদে লড়াই করি ৷ বিশেষ কোনও শিল্পপতিকে নিয়ে মাথা ঘামাই না ৷"

কল্যাণ প্রসঙ্গে সৌগত রায়

এই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন লোকসভার আরেক বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় ৷ কিন্তু বিজেপির এই চ্যাট ও ভিডিয়ো ফাঁসের ঘটনার ফলে দলের সম্মানহানি হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি ৷ সৌগত বলেন, "ঠিক কী হয়েছিল, তা আমি জানি না ৷ আমি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় নই ৷ ব্যক্তিগতভাবে জানি না কী ঘটেছিল ৷ যাই হোক না কেন, এটা আমাদের দলের মানহানি করেছে ৷"

এই আবহে তিনি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের মুখ সচেতকের পদ থেকে সরানোর দাবি তুলেছেন ৷ সৌগত বলেন, "তিনি যা করেছেন, তাতে দল কালিমালিপ্ত হয়েছে ৷ অবিলম্বে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ সচেতকের পদ থেকে সরানো উচিত ৷ তিনি দলের প্রত্যেকের সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করেন এবং সবাইকে অপমান করেন ৷"

হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট-ভিডিয়ো নিয়ে বিজেপির কটাক্ষ

এদিন হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের অংশ পোস্ট করে বিজেপি সোশাল মিডিয়ায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করে লিখেছে, "4 এপ্রিল তৃণমূলের সার্কাস নতুন করে আরও একধাপ নীচে নামল ৷ একটা স্মারকলিপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের মধ্যে দলের দুই সাংসদ তুমুল চিৎকার-চেঁচামেচি করছিলেন ৷ তাঁদের মধ্যে একজন সংসদে না গিয়ে সোজা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে পৌঁছন ৷ অন্যজন তাঁকে আক্রমণ করেন ৷ এরপর হইচই হতে থাকে ৷ এই অবস্থায় পুলিশকে নাক গলাতে হয়েছে ৷"

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই সাংসদকেই সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন ৷ তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিজেপি লিখেছে, "মমতা এই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছিলেন ৷ কিন্তু ততক্ষণে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নাটকের ছড়াছড়ি হয়ে গিয়েছে ৷ " এরপর বিজেপির প্রশ্ন, "এই সবকিছুর মধ্যে একটা প্রশ্ন জ্বলজ্বল করছে, ওই 'ভার্সেটাইল ইন্টারন্যাশনাল লেডি' কে ? টলিউডের স্ক্রিপ্টও এর কাছে হার মানবে ৷"

এই চ্যাট ও ভিডিয়ো দলের বাইরে প্রকাশ্যে এনেছে তৃণমূলেরই কেউ ৷ অমিত মালব্য একটি পোস্টে এই দাবি করে জানিয়েছেন, "এটা নিশ্চিত যে, এই চ্যাটের স্ক্রিনশট এবং ভিডিয়ো তৃণমূল সাংসদদের ভিতর থেকেই ফাঁস হয়েছে ৷ কে এইসব ফাঁস করল, তা খুঁজতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাহায্য় করুন ৷"

বিতর্কের নেপথ্যে ঘটনা

সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূলের দুই সাংসদের মতানৈক্য ৷ দু'জনের মধ্যে একজন প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ 4 এপ্রিল দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় নির্বাচন সদনে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল ৷

সেখানে লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য তৃণমূল সাংসদরা নির্বাচন সদনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷ দলের তরফে সাংসদদের প্রথমে সংসদীয় পার্টি কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু দলের এক মহিলা সাংসদ সেখানে না গিয়ে সরাসরি নির্বাচন সদনে হাজির হন ৷

অভিযোগ, ওই মহিলা সাংসদ, সংসদে দলের কার্যালয়ে না-গিয়ে সরাসরি নির্বাচন সদনে যাওয়ায় তাঁর উপর রেগে যান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তখন মহিলা সাংসদকে নিশানা করে প্রকাশ্যে কটূক্তি করেন তিনি ৷ তখন ওই মহিলা সাংসদ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের প্রহরায় থাকা সিআইএসএফ ও বিএসএফ জওয়ানদের ডেকে কল্যাণকে গ্রেফতার করতে বলেন ৷ এই পরিস্থিতিতে জওয়ানরাও অপ্রস্তুতিতে পড়েন ৷

নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকেও সেই গোলমাল চলতে থাকে ৷ সেখানে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে সুর চড়ান ৷ উপস্থিত অন্য় তৃণমূল সাংসদরা তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যান ৷ এরপর এই ঝামেলা নিয়ে তৃণমূল সাংসদদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তুলকালাম গণ্ডগোল হয় ৷ সূত্রের খবর, দুই সাংসদই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ করেছেন ৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, "স্মারকলিপি জমা দিতে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে পৌঁছন ৷ সেখানে কমিশনের কাছে জমা দেওয়ার স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করা নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলেরই এক মহিলা সাংসদের বচসা বাধে ৷ তখন ওই মহিলা সাংসদ অভিযোগ করেন, বর্ষীয়ান সাংসদ একজন মহিলা সাংসদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন ৷ এই অভিযোগে তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের সাংসদকে গ্রেফতার করতে বলেন ৷"

হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট বিতর্ক

বিজেপি যে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটটি প্রকাশ করেছে সেখানে লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরেক সাংসদ কীর্তি আজাদের তর্কাতর্কি ফাঁস হয়েছে ৷ কল্যাণ কারও নাম উল্লেখ না করে লিখছেন, "আমি কলকাতায় পৌঁছেছি ৷ আপনার দিল্লি পুলিশ আর বিএসএফকে বলুন আমায় গ্রেফতার করতে ৷" তিনি মহিলা সাংসদকে 'ইন্টারন্যাশনাল গ্রেট লেডি' বলে উল্লেখ করে লিখেছেন, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে আপনার যোগাযোগ তো বেশ ভালো ৷"

এদিকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন আরেক লোকসভা সাংসদ কীর্তি আজাদ ৷ তিনি লিখেছেন, "একটু শান্ত হও ৷ ছেলেমানুষী করো না ৷ দিদি তোমাকে একটি গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন ৷" এর জবাবে কল্যাণ কীর্তিকে পাল্টা আক্রমণ করে লেখেন, "আমাকে উপদেশ দিও না কীর্তি ৷ তুমি দলের অন্দরে রাজনীতি করেছিলে বলে বিজেপি তোমায় বের করে দিয়েছে ৷ আমি তোমার চেয়ে বয়সে বড় ৷ গতকালই তুমি দলটাকে বিক্রি করতে চেয়েছিলে ৷ এখনও তুমি অন্দরের রাজনীতিতে ক্যাপ্টেন ৷"

বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের আক্রমণ

এই সুযোগে শাসকদলকে আক্রমণ করতে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে বিজেপি ৷ মঙ্গলবার অমিত মালব্যর শেয়ার করা ভিডিয়ো নিয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, "তৃণমূলের চরিত্র কী, তা আমরা সবাই জানি ৷ এবার তা ফাঁস হয়ে গিয়েছে ৷ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কীভাবে কথা বলেন, তাও আমরা দেখতে পাচ্ছি ৷ এমনকী তাঁরা মহিলা সাংসদকেও ছাড়েননি ৷ তৃণমূল নেতাদের নিজেদের মধ্যেই বিশ্বাস নেই ৷ সবাই জানে, তাঁরা একজন মহিলা সাংসদকে অপমান করেছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হওয়া সত্ত্বেও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মহিলাকে অসম্মান করেছেন ৷ ৷"

কলকাতা, 8 এপ্রিল: হাজার হাজার চাকরি বাতিলের ঘটনায় উত্তপ্ত রাজ্য-রাজনীতি ৷ বিতর্কের এই আবহে ঘি ঢালল তৃণমূল সাংসদদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ৷ মঙ্গলবার বঙ্গ বিজেপি একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্য়াটের অংশবিশেষ সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে ৷ গেরুয়া শিবিরের দাবি, ওই চ্যাটে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কীর্তি আজাদের মধ্যে ৷ যদিও এই চ্যাটের সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷

চ্যাটের পাশাপাশি বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য একটি ভিডিয়ো ফুটেজ সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন ৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দলেরই আরেক সাংসদের উপর চেঁচামেচি করছেন ৷ অন্যদিকে, তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উপস্থিত অন্য সাংসদরা ৷

তৃণমূল সাংসদদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ঘিরে শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে (ইটিভি ভারত)

এদিকে এই গোলমালের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন কল্যাণ ৷ এর জন্য তিনি দলেরই এক মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ৷ সংবাদসংস্থা পিটিআই তাঁর বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে ৷ কল্য়াণ বলেছেন, "আমি গত 40 বছর ধরে রাজনীতি করছি ৷ এই মহিলা সাংসদ নির্বাচন কমিশনে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের আমাকে গ্রেফতার করতে বলছেন ৷ ওরা আমায় জেলে পাঠানোর কে ? তিনি আমায় কটূক্তি করেছেন ৷ আমি সংসদে লড়াই করি ৷ বিশেষ কোনও শিল্পপতিকে নিয়ে মাথা ঘামাই না ৷"

কল্যাণ প্রসঙ্গে সৌগত রায়

এই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন লোকসভার আরেক বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় ৷ কিন্তু বিজেপির এই চ্যাট ও ভিডিয়ো ফাঁসের ঘটনার ফলে দলের সম্মানহানি হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি ৷ সৌগত বলেন, "ঠিক কী হয়েছিল, তা আমি জানি না ৷ আমি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় নই ৷ ব্যক্তিগতভাবে জানি না কী ঘটেছিল ৷ যাই হোক না কেন, এটা আমাদের দলের মানহানি করেছে ৷"

এই আবহে তিনি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের মুখ সচেতকের পদ থেকে সরানোর দাবি তুলেছেন ৷ সৌগত বলেন, "তিনি যা করেছেন, তাতে দল কালিমালিপ্ত হয়েছে ৷ অবিলম্বে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ সচেতকের পদ থেকে সরানো উচিত ৷ তিনি দলের প্রত্যেকের সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করেন এবং সবাইকে অপমান করেন ৷"

হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট-ভিডিয়ো নিয়ে বিজেপির কটাক্ষ

এদিন হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের অংশ পোস্ট করে বিজেপি সোশাল মিডিয়ায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করে লিখেছে, "4 এপ্রিল তৃণমূলের সার্কাস নতুন করে আরও একধাপ নীচে নামল ৷ একটা স্মারকলিপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের মধ্যে দলের দুই সাংসদ তুমুল চিৎকার-চেঁচামেচি করছিলেন ৷ তাঁদের মধ্যে একজন সংসদে না গিয়ে সোজা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে পৌঁছন ৷ অন্যজন তাঁকে আক্রমণ করেন ৷ এরপর হইচই হতে থাকে ৷ এই অবস্থায় পুলিশকে নাক গলাতে হয়েছে ৷"

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই সাংসদকেই সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন ৷ তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিজেপি লিখেছে, "মমতা এই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছিলেন ৷ কিন্তু ততক্ষণে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নাটকের ছড়াছড়ি হয়ে গিয়েছে ৷ " এরপর বিজেপির প্রশ্ন, "এই সবকিছুর মধ্যে একটা প্রশ্ন জ্বলজ্বল করছে, ওই 'ভার্সেটাইল ইন্টারন্যাশনাল লেডি' কে ? টলিউডের স্ক্রিপ্টও এর কাছে হার মানবে ৷"

এই চ্যাট ও ভিডিয়ো দলের বাইরে প্রকাশ্যে এনেছে তৃণমূলেরই কেউ ৷ অমিত মালব্য একটি পোস্টে এই দাবি করে জানিয়েছেন, "এটা নিশ্চিত যে, এই চ্যাটের স্ক্রিনশট এবং ভিডিয়ো তৃণমূল সাংসদদের ভিতর থেকেই ফাঁস হয়েছে ৷ কে এইসব ফাঁস করল, তা খুঁজতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাহায্য় করুন ৷"

বিতর্কের নেপথ্যে ঘটনা

সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূলের দুই সাংসদের মতানৈক্য ৷ দু'জনের মধ্যে একজন প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ 4 এপ্রিল দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় নির্বাচন সদনে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল ৷

সেখানে লোকসভার সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য তৃণমূল সাংসদরা নির্বাচন সদনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷ দলের তরফে সাংসদদের প্রথমে সংসদীয় পার্টি কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ কিন্তু দলের এক মহিলা সাংসদ সেখানে না গিয়ে সরাসরি নির্বাচন সদনে হাজির হন ৷

অভিযোগ, ওই মহিলা সাংসদ, সংসদে দলের কার্যালয়ে না-গিয়ে সরাসরি নির্বাচন সদনে যাওয়ায় তাঁর উপর রেগে যান কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তখন মহিলা সাংসদকে নিশানা করে প্রকাশ্যে কটূক্তি করেন তিনি ৷ তখন ওই মহিলা সাংসদ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের প্রহরায় থাকা সিআইএসএফ ও বিএসএফ জওয়ানদের ডেকে কল্যাণকে গ্রেফতার করতে বলেন ৷ এই পরিস্থিতিতে জওয়ানরাও অপ্রস্তুতিতে পড়েন ৷

নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকেও সেই গোলমাল চলতে থাকে ৷ সেখানে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে সুর চড়ান ৷ উপস্থিত অন্য় তৃণমূল সাংসদরা তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যান ৷ এরপর এই ঝামেলা নিয়ে তৃণমূল সাংসদদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তুলকালাম গণ্ডগোল হয় ৷ সূত্রের খবর, দুই সাংসদই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ করেছেন ৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, "স্মারকলিপি জমা দিতে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে পৌঁছন ৷ সেখানে কমিশনের কাছে জমা দেওয়ার স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করা নিয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলেরই এক মহিলা সাংসদের বচসা বাধে ৷ তখন ওই মহিলা সাংসদ অভিযোগ করেন, বর্ষীয়ান সাংসদ একজন মহিলা সাংসদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন ৷ এই অভিযোগে তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের সাংসদকে গ্রেফতার করতে বলেন ৷"

হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট বিতর্ক

বিজেপি যে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটটি প্রকাশ করেছে সেখানে লোকসভা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরেক সাংসদ কীর্তি আজাদের তর্কাতর্কি ফাঁস হয়েছে ৷ কল্যাণ কারও নাম উল্লেখ না করে লিখছেন, "আমি কলকাতায় পৌঁছেছি ৷ আপনার দিল্লি পুলিশ আর বিএসএফকে বলুন আমায় গ্রেফতার করতে ৷" তিনি মহিলা সাংসদকে 'ইন্টারন্যাশনাল গ্রেট লেডি' বলে উল্লেখ করে লিখেছেন, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে আপনার যোগাযোগ তো বেশ ভালো ৷"

এদিকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে শান্ত করার চেষ্টা করেছেন আরেক লোকসভা সাংসদ কীর্তি আজাদ ৷ তিনি লিখেছেন, "একটু শান্ত হও ৷ ছেলেমানুষী করো না ৷ দিদি তোমাকে একটি গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন ৷" এর জবাবে কল্যাণ কীর্তিকে পাল্টা আক্রমণ করে লেখেন, "আমাকে উপদেশ দিও না কীর্তি ৷ তুমি দলের অন্দরে রাজনীতি করেছিলে বলে বিজেপি তোমায় বের করে দিয়েছে ৷ আমি তোমার চেয়ে বয়সে বড় ৷ গতকালই তুমি দলটাকে বিক্রি করতে চেয়েছিলে ৷ এখনও তুমি অন্দরের রাজনীতিতে ক্যাপ্টেন ৷"

বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের আক্রমণ

এই সুযোগে শাসকদলকে আক্রমণ করতে নতুন উদ্যমে মাঠে নেমেছে বিজেপি ৷ মঙ্গলবার অমিত মালব্যর শেয়ার করা ভিডিয়ো নিয়ে লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, "তৃণমূলের চরিত্র কী, তা আমরা সবাই জানি ৷ এবার তা ফাঁস হয়ে গিয়েছে ৷ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কীভাবে কথা বলেন, তাও আমরা দেখতে পাচ্ছি ৷ এমনকী তাঁরা মহিলা সাংসদকেও ছাড়েননি ৷ তৃণমূল নেতাদের নিজেদের মধ্যেই বিশ্বাস নেই ৷ সবাই জানে, তাঁরা একজন মহিলা সাংসদকে অপমান করেছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী মহিলা হওয়া সত্ত্বেও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় একজন মহিলাকে অসম্মান করেছেন ৷ ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.