কলকাতা, 10 জুন: ভারতীয় সেনার বীরত্বকে সম্মান জানিয়ে রাজ্য বিধানসভায় আনা প্রস্তাব ঘিরে বিতর্ক! পহেলগাঁও হামলার পাল্টা জবাব দিতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিতে সামরিক অভিযান করেছে সেনাবাহিনী ৷ এ নিয়েই প্রস্তাব এসেছিল মঙ্গলবার ৷ বিরোধিতা না করলেও প্রস্তাবে 'অপারশেন সিঁদুর' শব্দটি না থাকায় শাসক শিবিরকে তীব্র আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম উচ্চারণ করতেও তৃণমূল সংকোচ করে বলে মনে করেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক ৷ শেষমেশ অবশ্য সর্বসম্মতভাবেই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে ।
'অপারেশন সিঁদুর' শব্দটির সংযুক্তিকরণ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আপনারা (বিজেপি বিধায়করা) কোনও সংশোধনী দেননি। দিলে সেটা নিয়ে আলোচনা হত। এই প্রস্তাব শুধুই সেনাকে সম্মান জানাতে আনা হয়েছে।" এছাড়া প্রস্তাবের উপর বিরোধী দলনেতার বক্তব্য পেশ করার সময় আরও একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয় ৷ ভাষণের সময় বিরোধী দলনেতা রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন ৷ একটা সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, "পাকিস্তানে চলে যান!" এরপরই শুভেন্দুকে সৌজন্য বজায় রাখার কথা বলেন অধ্যক্ষ।
তার আগে শুভেন্দু বলেন, "অপারেশন সিঁদুর করে মাসুদ আজহার ছাড়া তার গোটা বংশকে খতম করেছে সেনা। একের পর এক জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে সেসব নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। সেনার বীরত্বকে ব্যাখ্যা করতে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। এতকিছুর পরও প্রস্তাবে ‘সিঁদুর’ নেই কেন?” অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে পাওয়া সাফল্যকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে ব্যাখ্যা করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “পাকিস্তানের 100 কিমি ভিতরে ঢুকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত করেছে ভারতীয় সেনা। এটা প্রথমবার ঘটেছে। আর বিধানসভার প্রস্তাবে সেই অপারেশন ‘সিঁদুর’-এর উল্লেখই থাকবে না?”
প্রস্তাবের অস্পূর্ণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধী দলনেতা সরাসরি কটাক্ষ করেন শাসকদলকেও। শাসক দলের নেতারা কেউ কেউ অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিক্ষিপ্ত মন্তব্য করতে থাকেন ৷ এরই মধ্যে এক শাসক বিধায়ক বলেন সবাই কি সিঁদুর পরে! শুভেন্দু পাল্টা বলেন, “মাকুরা সিঁদুর পড়ে না। যাদের ঠাকুরদা চিনে থাকে, তারা সিঁদুর পড়ে না। আমি আবেদন করছি, প্রস্তাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শব্দটি যুক্ত করা হোক।”
অন্য একটি প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, "কাশ্মীরের বৈসরণ উপত্যকায় হওয়া জঙ্গি হামলা টার্গেট কিলিং। 1984 সালে শিখদের বেছে বেছে খুন হতে দেখেছি। এবার হিন্দুদের একইভাবে খুন হতে দেখলাম। কাজেই একে টার্গেট কিলিং ছাড়া কিছু বলা যায় না। যাদবপুর ও বেহালার নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা বলেছেন, তাঁদের কারও স্বামীকে কলমা পড়তে বলা হয়েছিল। কারও স্বামীকে খুন করা হয়েছে হাতের তাগা দেখে। এটা নিছক এলোপাথাড়ি গুলি নয়।"
তিনি আরও বলেন, "দেশের প্রধানমন্ত্রী 24 এপ্রিল বিহারে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, এর বদলা নেব। অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে ভারতীয় মহিলাদের সিঁদুর মোছার বদলা নেওয়া হয়েছে। আর এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বিধানসভায় উচ্চারণে এত কুণ্ঠা কেন?” অন্যদিকে, শুধু মুখ্যমন্ত্রী নয়, শাসকদলের আরও তিন নেতার বিরুদ্ধে কটাক্ষের সুরে আক্রমণ শানিয়ে শুভেন্দু বলেন, “এই হাউসের চার সদস্য— ফিরহাদ হাকিম, উদয়ন গুহ, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবং মুখ্যমন্ত্রী— প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বাইরে নানা কথা বলেছেন। আমি চাই, এঁরা ক্ষমা চান।”