কলকাতা, 28 এপ্রিল: বালিগঞ্জের বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম বা বিআইটিএম ৷ এই নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে পুরনো রেলগাড়ি, কয়লাখনি কিংবা মহাকাশের রহস্যভেদের বাস্তব গল্প ৷ আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের গল্পমালায় বিশ্বকে উন্মোচিত করা ও মানব সমাজের বিবর্তনের ইতিহাস ৷
এবার সেই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে সমুদ্র তলদেশের ইতিহাস ৷ সমুদ্রতলে কী কী জীবের বসবাস, কত ধরনের জীব আছে ৷ বহু সামুদ্রিক জীব যেগুলি হারিয়ে গিয়েছে, আবার একইভাবে নতুন কোন কোন সামুদ্রিক জীবের 'আবিষ্কার' করতে পারলেন বিজ্ঞানীরা, সেসব প্রযুক্তির মাধ্যমে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চলছে বিআইটিএমে ৷ আর এর জন্য তৈরি করা হচ্ছে 'লস্ট অ্যাট দ্য সি' শীর্ষক নতুন গ্যালারি ৷
আগামী 2 মে বালিগঞ্জের বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠা দিবস ৷ ওইদিন 'লস্ট অ্যাট দ্য সি' গ্যালারিটির উদ্বোধন হবে ৷ বহু বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের উপস্থিতিতে এই গ্যালারির উদ্বোধন করা হবে বলে সংস্থার আধিকারিকরা জানিয়েছেন ৷
কী কী থাকছে এই নতুন গ্যালারিতে ?
বিআইটিএমের ডিরেক্টর অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "গ্যালারিজুড়ে ছয় থেকে সাতটি মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে সমুদ্রের বিলুপ্ত প্রজাতি ও নতুন প্রজাতির সন্ধানের গল্প তুলে ধরা হবে ৷ পৃথিবীর বিরলতম সামুদ্রিক প্রাণী ‘ভ্যাকিউটা’র স্কেলিটন বা কঙ্কাল থাকবে ৷ একই সঙ্গে হকসবিল টার্টল, সি টার্টল, সি লায়নস, গ্রিন টার্টলের মতো মোট 14টি প্রজাতিকে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে ৷ একই সঙ্গে গত কয়েক বছরে যে সমস্ত নতুন সামুদ্রিক প্রজাতির আবিষ্কার হয়েছে সেগুলিও থাকছে ৷"
কীভাবে তৈরি হচ্ছে গ্যালারি 'লস্ট অ্যাট দ্য সি' ?
মূলত তিনটি ভাগে তৈরি হচ্ছে এই গ্যালারি ৷ প্রথমভাগে থাকছে, কোন কোন সামুদ্রিক জীব সমুদ্র বা মহাসাগর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বা ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে ৷ দ্বিতীয় ভাগ হল- সামুদ্রিক অর্থনীতি ৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অষ্টম অর্থনীতির ভিত হল সমুদ্র ৷ এখানে তুলে ধরা হবে, এই সামুদ্রিক অর্থনীতিই কি দায়ী সমুদ্রতলের জীবজগতের বিলুপ্তির জন্য ৷

আর তিন নম্বর ভাগ, যেটি 'লস্ট অ্যাট দ্য সি' গ্যালারির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ৷ বিআইটিএমের ডিরেক্টরের কথায়, "জাপানের পুরনোদিনের একটা শিল্পকলা ছিল, যার নাম হল 'জিওটাকু' ৷ এখানে জাপানিরা সমুদ্র থেকে বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরে তার গায়ে কালি লাগিয়ে ছাপ নিত ৷ বিভিন্ন সেই সামুদ্রিক জীবের ছাপগুলিকে 'জিওটাকু' বলা হয় ৷ বর্তমানে সেই সব ছাপ থেকে পুরনোদিনের হারিয়ে যাওয়া সেই সব সামুদ্রিক জীবের একটা ধারণা তৈরি হয় ৷"

অর্ণব চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, সেই 'জিওটাকু'-র একটি সিন্থেটিক ভিশন বা আর্টিফিশিয়াল ভাবে তুলে ধরছে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ ৷ যেখানে একটি বড় ঘরকে তৈরি করা হচ্ছে ৷ যেখানে ঢুকলে দর্শকদের মনে হবে তাঁরা সমুদ্রের তলায় রয়েছে ৷ এই ঘরেই একটা কিউআর কোড থাকবে ৷ সেই কিউআর কোড স্ক্যান করলে দর্শকদের মোবাইলে অনেকরকমের মাছের আউট লাইন দেওয়া ছবি আসবে ৷ এবার দর্শকরা সেই মাছগুলিকে নিজেদের মনের মতো রং করতে পারবেন ৷ তারপর সেগুলিকে ফোনের মাধ্যমেই ভার্চুয়াল অ্যাকোরিয়ামে ছেড়ে দেওয়া যাবে ৷ তারপর ওই গ্যালারিতে তৈরি করা ডিজিটাল স্ক্রিনে নিজেদের রং করা মাছগুলিকে লাইভ ঘুরতে দেখবেন দর্শকরা ৷

এই পুরো বিষয়টি ইন্টারেক্টিভ ৷ অর্থাৎ, যে মাল্টিমিডিয়াগুলি থাকবে তার সঙ্গে দর্শকরা কমিউনিকেট করতে পারবেন ৷ 2 মে গ্যালারির উদ্বোধনের পর দর্শকরা সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন এবং সমুদ্র তলদেশের জীবজগতের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন ৷ এই পুরো গ্যালারিটি দেখার জন্য আলাদা করে টিকিট কাটতে হবে না ৷ বিআইটিএমে প্রবেশমূল্যেই 'লস্ট অ্যাট দ্য সি' গ্যালারি চাক্ষুস করা যাবে ৷
