ETV Bharat / state

প্রকৃতির মাঝে শিল্পের বিকাশ, অন্য পুজো সোনাঝুরির হীরালিনী দুর্গোৎসব - Durga Puja 2024

বীরভূমের হীরালিনী দুর্গোৎসব ৷ ঠাকুর গড়া থেকে পুজোর চারদিন, অন্য পরিবেশ হীরালিনীতে ৷ এবছরের পুজো প্রস্তুতি ঘুরে দেখল ইটিভি ভারত ৷

Birbhum Durga Puja
সোনাঝুরির হীরালিনী দুর্গোৎসব 2024 (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 4, 2024, 4:51 PM IST

বোলপুর, 4 অক্টোবর: শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গলের মনোরম পরিবেশে হীরালিনী দুর্গোৎসব আর পাঁচটি পুজোর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷ জঙ্গলের নৈসর্গিক পরিবেশ ও শৈল্পিক প্রতিমা এই পুজোর মূল আকর্ষণ । 24 বছরে পা দিল এই পুজো ৷ এবার বাঁশ ও বেত দিয়ে প্রতিমা নির্মিত হয়েছে ।

ইরাকে যুদ্ধ ও আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের পর 2002 সাল থেকে বিশ্বশান্তির বার্তা দিতে প্রতিমার হাতে অস্ত্র থাকে না ৷ তার বদলে থাকে পদ্মফুল ৷ এছাড়া, এই উৎসবের মূল উদ্যোগ নেন স্থানীয় আদিবাসী মানুষজন । এমনকি, প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড থেকেও আদিবাসী শিল্পীরা এসে পুজোর 4 দিন নানান লোক সাংস্কৃতিক উৎসবে মাতেন ৷

সোনাঝুরির হীরালিনী দুর্গোৎসবের পুজো প্রস্তুতি (ইটিভি ভারত)
2001 সালে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গলে শৈল্পিক দুর্গোৎসবের সূচনা করেছিলেন শিল্পী বাঁধন দাস ৷ যা হীরালিনী দুর্গোৎসব বা সোনাঝুরি দুর্গাপুজো নামে খ্যাত । তাঁর প্রয়াণের পর থেকে এই উৎসবের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক তাঁর ছাত্র শিল্পী আশিষ ঘোষ ৷

তবে উৎসবের সূচনার পরে পরেই ইরাকে ভয়াবহ যুদ্ধ, আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস প্রভৃতির মধ্য দিয়ে তখন উত্তাল বিশ্ব । বিশ্ব সন্ত্রাসের নগ্ন রূপ যখন সবার সামনে বেরিয়ে আসে । তখন 2002 সাল থেকে বিশ্বশান্তির বার্তা দিতে শিল্পী বাঁধন দাস সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রতিমার হাতে কোনও অস্ত্র থাকবে না ৷ এই শৈল্পিক দুর্গার হাতে থাকবে পদ্মফুল ৷ সে বছরই তিনি প্রয়াত হন ৷ তারপর থেকে সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন তাঁর ছাত্র আশিষ ঘোষ ৷

Sonajhuri Hiralini Durgotsav 2024
সোনাঝুরির হীরালিনী দুর্গোৎসবের মাতৃ প্রতিমা (ইটিভি ভারত)

পুজোর 4 দিন জঙ্গলের মধ্যেই একটি উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা হয় ৷ সেখানে স্থানীয় শিল্পী থেকে শুরু করে আদিবাসী শিল্পীরা তাদের লোকাচার পরিবেশন করেন । এখানে আর পাঁচটা পুজোর মতো নেই ঝলমলে আলোকসজ্জা ও মণ্ডপের জাঁকজমক । হয় না কোনও রীতি মেনে পুজো ৷ নেই বলি প্রথা বা বৈদিক রীতি রেওয়াজ । প্রকৃতির মাঝে শুধুই শিল্প বিকশিত হয় ৷

তবে এই দুর্গোৎসবে আশেপাশের আদিবাসী অধ্যুষিত বনেরপুকুর ডাঙা, সরপুকুর ডাঙা, বল্লভপুরডাঙা, ফুলডাঙা প্রভৃতি গ্রামের মানুষজন অংশ নেন ৷ শুধু অংশ নেন বলা ভুল, পুজোর উদ্যোক্তাও তাঁরাই ৷ প্রতিমায় তুলির টান থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কার্যত তাদেরই দখলে ৷ এছাড়া, প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকেও আদিবাসী শিল্পীরা পুজোর 4 দিন এখানে থেকেই লোকাচার মঞ্চস্থ করেন ৷

শিল্পী আশিষ ঘোষ বলেন, "আমার মাস্টারমশাই বাঁধন দাসের হাত ধরে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল ৷ আমরা চেয়েছিলাম একটা শিল্পের উৎসবে মাতব সকলে ৷ পুজোর সমস্ত কাজকর্মে হাত লাগান আশেপাশের আদিবাসী গ্রামগুলির মানুষজন । পুজোর 4 দিন তারাই নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন ৷ এই সময় আদিবাসীদের বেলবরণ উৎসব হয় ৷ একই সঙ্গে তা উদযাপন করি আমরা ৷ বলতে গেলে এই দুর্গোৎসব একটা শিল্পের কর্মশালা ৷ তাই বহু মানুষ আকৃষ্ট হয়ে আসেন এখানে ।"

স্থানীয় আদিবাসী শিল্পী রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম বলেন, "এই পুজোর কোনও থিম নেই ৷ প্রতি বছর এক এক রকমের শৈল্পিক প্রতিমা তৈরি হয় ৷ এবার বেতের প্রতিমা ৷ পুজোর 4 দিন আদিবাসী লোক সাংস্কৃতিক উৎসব চলে ৷ এখানের পুজোর আমেজটাই আলাদা ৷ যারা আসেন তাদের মন ভরে যায় ৷"

বোলপুর, 4 অক্টোবর: শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গলের মনোরম পরিবেশে হীরালিনী দুর্গোৎসব আর পাঁচটি পুজোর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ৷ জঙ্গলের নৈসর্গিক পরিবেশ ও শৈল্পিক প্রতিমা এই পুজোর মূল আকর্ষণ । 24 বছরে পা দিল এই পুজো ৷ এবার বাঁশ ও বেত দিয়ে প্রতিমা নির্মিত হয়েছে ।

ইরাকে যুদ্ধ ও আমেরিকায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের পর 2002 সাল থেকে বিশ্বশান্তির বার্তা দিতে প্রতিমার হাতে অস্ত্র থাকে না ৷ তার বদলে থাকে পদ্মফুল ৷ এছাড়া, এই উৎসবের মূল উদ্যোগ নেন স্থানীয় আদিবাসী মানুষজন । এমনকি, প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড থেকেও আদিবাসী শিল্পীরা এসে পুজোর 4 দিন নানান লোক সাংস্কৃতিক উৎসবে মাতেন ৷

সোনাঝুরির হীরালিনী দুর্গোৎসবের পুজো প্রস্তুতি (ইটিভি ভারত)
2001 সালে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গলে শৈল্পিক দুর্গোৎসবের সূচনা করেছিলেন শিল্পী বাঁধন দাস ৷ যা হীরালিনী দুর্গোৎসব বা সোনাঝুরি দুর্গাপুজো নামে খ্যাত । তাঁর প্রয়াণের পর থেকে এই উৎসবের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক তাঁর ছাত্র শিল্পী আশিষ ঘোষ ৷

তবে উৎসবের সূচনার পরে পরেই ইরাকে ভয়াবহ যুদ্ধ, আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংস প্রভৃতির মধ্য দিয়ে তখন উত্তাল বিশ্ব । বিশ্ব সন্ত্রাসের নগ্ন রূপ যখন সবার সামনে বেরিয়ে আসে । তখন 2002 সাল থেকে বিশ্বশান্তির বার্তা দিতে শিল্পী বাঁধন দাস সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রতিমার হাতে কোনও অস্ত্র থাকবে না ৷ এই শৈল্পিক দুর্গার হাতে থাকবে পদ্মফুল ৷ সে বছরই তিনি প্রয়াত হন ৷ তারপর থেকে সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন তাঁর ছাত্র আশিষ ঘোষ ৷

Sonajhuri Hiralini Durgotsav 2024
সোনাঝুরির হীরালিনী দুর্গোৎসবের মাতৃ প্রতিমা (ইটিভি ভারত)

পুজোর 4 দিন জঙ্গলের মধ্যেই একটি উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা হয় ৷ সেখানে স্থানীয় শিল্পী থেকে শুরু করে আদিবাসী শিল্পীরা তাদের লোকাচার পরিবেশন করেন । এখানে আর পাঁচটা পুজোর মতো নেই ঝলমলে আলোকসজ্জা ও মণ্ডপের জাঁকজমক । হয় না কোনও রীতি মেনে পুজো ৷ নেই বলি প্রথা বা বৈদিক রীতি রেওয়াজ । প্রকৃতির মাঝে শুধুই শিল্প বিকশিত হয় ৷

তবে এই দুর্গোৎসবে আশেপাশের আদিবাসী অধ্যুষিত বনেরপুকুর ডাঙা, সরপুকুর ডাঙা, বল্লভপুরডাঙা, ফুলডাঙা প্রভৃতি গ্রামের মানুষজন অংশ নেন ৷ শুধু অংশ নেন বলা ভুল, পুজোর উদ্যোক্তাও তাঁরাই ৷ প্রতিমায় তুলির টান থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কার্যত তাদেরই দখলে ৷ এছাড়া, প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকেও আদিবাসী শিল্পীরা পুজোর 4 দিন এখানে থেকেই লোকাচার মঞ্চস্থ করেন ৷

শিল্পী আশিষ ঘোষ বলেন, "আমার মাস্টারমশাই বাঁধন দাসের হাত ধরে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল ৷ আমরা চেয়েছিলাম একটা শিল্পের উৎসবে মাতব সকলে ৷ পুজোর সমস্ত কাজকর্মে হাত লাগান আশেপাশের আদিবাসী গ্রামগুলির মানুষজন । পুজোর 4 দিন তারাই নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন ৷ এই সময় আদিবাসীদের বেলবরণ উৎসব হয় ৷ একই সঙ্গে তা উদযাপন করি আমরা ৷ বলতে গেলে এই দুর্গোৎসব একটা শিল্পের কর্মশালা ৷ তাই বহু মানুষ আকৃষ্ট হয়ে আসেন এখানে ।"

স্থানীয় আদিবাসী শিল্পী রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম বলেন, "এই পুজোর কোনও থিম নেই ৷ প্রতি বছর এক এক রকমের শৈল্পিক প্রতিমা তৈরি হয় ৷ এবার বেতের প্রতিমা ৷ পুজোর 4 দিন আদিবাসী লোক সাংস্কৃতিক উৎসব চলে ৷ এখানের পুজোর আমেজটাই আলাদা ৷ যারা আসেন তাদের মন ভরে যায় ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.