মগরাহাট, 23 মার্চ: চলছে রমজান মাস ৷ আর তারপরেই ঈদ । এই উৎসবে সিমুই থেকে লাচ্ছা চাইই চাই । তাই ঈদের আগে থেকেই চাহিদা তুঙ্গে মিষ্টি খাবারগুলির ৷ হাতে বেশি সময় নেই ৷ সময়ের আগে সিমুই-লাচ্ছার যোগান দিতে তাই চরম ব্যস্ততা দক্ষিণ 24 পরগনার মগরাহাটের বেলাড়িয়ার গ্রামে কারাখানাগুলিতে ৷ ভিনরাজ্য থেকেও এসেছেন কারিগররা ৷ দিনরাত এক করে চলছে কাজ ৷
এই সিমুই ও লাচ্ছা তৈরির কারিগররা বিহার ও উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে এরাজ্যে এসেছেন । দক্ষ কারিগররা নাওয়া খাওয়া ভুলে এক নাগাড়ে কাজ করে চলেছেন মগরাহাটের সিমুই তৈরির কারখানাগুলিতে । দক্ষিণ 24 পরগনার ক্যানিং, মগরাহাট, দেউলা এলাকা থেকেও এসেছেন শ্রমিকরা । সকলেই ব্যস্ত সিমুই তৈরিতে ।
তিন-চার বছর ধরে সিমুই তৈরির কারখানায় কাজ করছেন আশিফুল হালদার । তিনি জানান, তাঁদের কারখানায় দিনে প্রায় 500 কেজি লাড্ডু তৈরি হচ্ছে । আর এক কারিগর সোহম হালদার বলেন, "আমাদের এখন প্রচণ্ড ব্যস্ততা । সকাল 5টা থেকে রাত 10টা পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে । কারণ এবছর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সিমুইয়ের । আর লাড্ডু বা লাচ্ছার চাহিদা তো রয়েইছে ।"
মগরাহাটের সব কারখানাতেই একইভাবে তৈরি হচ্ছে মোটা সিমুই, সরু সিমুই, এক নম্বর ও দেড় নম্বর সিমুইয়ের মতো প্রায় পাঁচ রকমের সিমুই, ছোট ও বড় আকারের লাচ্ছা আর লাড্ডু । যদিও সেসব তৈরি হচ্ছে পাইকারি খদ্দেরদের অর্ডার অনুযায়ীই ।
সিমুই তৈরিতে উপকরণ বলতে লাগে, ময়দা, ঘি, পরিশ্রুত জল, তেল ও ডালডা । প্রথমে ময়দা মেখে যন্ত্রের জালিতে ফেলে কাঁচা সিমুই তৈরি করছেন কারখানার শ্রমিকরা । তারপর তেল ও ডালডায় ভাজা হচ্ছে সেই কাঁচা সিমুই । দক্ষ হাতের পাকে প্রস্তুত করা হচ্ছে লাড্ডু এবং লাচ্ছাও । এরপর প্যাকেটবন্দি হয়ে সেসব চলে যাচ্ছে নামখানা, কাকদ্বীপ, সাগর, রায়দিঘি, জয়নগর, ডায়মন্ডহারবার, আমতলা থেকে বারুইপুরের বাজারে ।
এমনই এক সিমুই কারখানার মালিক মহম্মদ সাহাবুদ্দিন মোল্লা বলেন, "ময়দা এবং তেল ও ডালডার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবছর উৎপাদিত দ্রব্য কিলো প্রতি 10-12 টাকা বাড়ানো হয়েছে । আমার কারখানায় তৈরি কাঁচা সিমুই প্রতি কিলো 46 টাকা, ভাজা সিমুই কেজি প্রতি 54 টাকা, লাচ্ছা কেজিতে 105-110 টাকা দরে দেদার বিকোচ্ছে । চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগানের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে ।"
ঈদের দেড়-দু'মাস আগেই কারিগররা এবারও কাজের জন্য মগরাহাটে এসে হাজির হয়েছেন মরশুমী পাখির মতো । উত্তরপ্রদেশের কারিগর সোমু যাদব ও মণীশ পলের কথায়, "আমরা উত্তরপ্রদেশ থেকে মোট 12 জন এসেছি এখানে কাজ করতে ৷ আমরা 50 দিন ধরে কাজ করছি এই কারখানায় ৷ লাচ্ছা ও সিমুই বানাচ্ছি ৷ অন্যসময় চাষবাস করি বাড়িতে ৷ ঈদের আগে প্রতিবছরই ডাক পড়ে আমাদের । তাই এবারও এসে হাজির হয়েছি মগরাহাটের সিমুই কারখানায় ।"
