কলকাতা, 18 মে: চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারী 'যোগ্য' শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এবার কড়া পদক্ষেপ নিল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট ৷ পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী 21 মে সকাল 11টায় বিধাননগর উত্তর থানায় 15 জন আন্দোলনকারী শিক্ষককে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে ৷ ইতিমধ্যে তাঁদের নামে থানা থেকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে ৷
গত বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের মূল গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকার অভিযোগ ওঠে আন্দোলনকারীরদের বিরুদ্ধে ৷ যে ঘটনাকে ঘিরে সন্ধের পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ পুলিশ আন্দোলনকারীদের হঠাতে লাঠিচার্জ করে ৷ অভিযোগ, গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা ৷ তাঁদের অভিযোগ, লাথি, ঘুষি, এমনকি জুতো দিয়েও মারধর করা হয় ৷
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ অভিযোগের তালিকায় রয়েছে— সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা, এবং হেনস্তার মতো ধারা ৷
অপরদিকে ওই ঘটনা নিয়ে পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা সাজানোর অভিযোগ করলেন আন্দোলনকারী 'যোগ্য' শিক্ষিকা অদিতি বসু ৷ তিনি বলেন, "আসলে উপর মহলের নির্দেশে এই বিষয়টিকে একটা ইস্যু তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে ৷ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় পুলিশ যে নোটিশ পাঠিয়েছে, তাতে যে শিক্ষকের উপস্থিতির কথা বলা হয়েছে, তিনি সেই সময় বিকাশ ভবন চত্বরে ছিলেন না ৷ এর থেকে বোঝা যাচ্ছে সরকার এই আন্দোলনের মুখদের তুলে নিতে চাইছে ৷ তবে, এভাবে আন্দোলনকে দমানো যাবে না ৷ আমরা শিক্ষক, আমরা পড়াতেই চাই ৷ প্রয়োজনে এখানে বসেই পড়াব ৷ তবুও, কোনও দুর্নীতির কাছে মাথা নত করব না ৷"

আন্দোলনকারী শিক্ষকদের নেতা মেহবুব মণ্ডল বলছেন, "আমাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড পরিমাণে দমন-পীড়ন নেমে আসছে ৷ আমাদের টিচারদের মাথা ফেটেছে ৷ আমাদের টিচারের রেটিনা নষ্ট হয়েছে ৷ তারপরেও যখন ওরা দেখছে এখান থেকে উঠিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, তখন পুলিশের লাঠিতে রক্তাক্ত হওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধেই এখন মামলা করা হচ্ছে ৷ ভয় দেখিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না ৷"
তাঁদের দাবি, সরকার আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছে ৷ অথচ রিভিউ পিটিশন সংক্রান্ত বিষয়ে কোর কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসতে বলছে ৷ এ দিন আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে, তাঁরা থানায় গেলেই তাঁদের গ্রেফতার করা হতে পারে ৷ আর না-গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হতে পারে ৷
উল্লেখ্য, শুক্রবার এ নিয়ে এডিজি আইনশৃঙ্খলা (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বলেছিলেন, "গত 10 দিন আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল ৷ কিন্তু, বৃহস্পতিবার আচমকা আন্দোলনকারীরা মূল গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন ৷ সাত ঘণ্টা ধরে ভিতরে থাকা প্রায় 500-700 কর্মী অবরুদ্ধ ছিলেন ৷ এমনকি একজন গর্ভবতী মহিলাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ৷ বারবার মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্ক করার পরেও, আন্দোলনকারীরা অনড় থাকায় বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয় পুলিশ ৷"
এ নিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার পুলিশ প্রশাসন তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছিলেন ৷ তিনি বলেছিলেন, "মমতা রপুলিশ এর থেকে বেশি কিছু পারে না ৷ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে সরকার যা-যা করার সবই করছে ৷ আগামী মঙ্গলবার বিজেপির যুব মোর্চা পুলিশের বিরুদ্ধে পথে নামবে এবং ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে ৷"