ETV Bharat / state

20 ফুট উপরে জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি বাঁশের ঘর, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে সুন্দরবনকে

এই বাড়ি তৈরিতে ব্যবহার হয়নি একটাও পেরেক ৷ দড়ি দিয়ে টেনে বাঁধা বাড়িটি ৷ রয়েছে খড় ও বাঁশের ব্যবহার ৷

BAMBOO HOUSE IN SUNDARBANS
জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি বাঁশের ঘর (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : October 9, 2025 at 4:59 PM IST

3 Min Read
Choose ETV Bharat

পাথরপ্রতিমা (দক্ষিণ 24 পরগনা), 9 অক্টোবর: এবার সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে তৈরি হল লোহাবিহীন বাঁশের উপর ঢালাই ঘর । জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই ঘরগুলি ৷ মাটি থেকে 20 ফুট উঁচুতে বানানো হচ্ছে অত্যাধুনিক খড়ের ছাউনির বিশালঘর । আর এটি তৈরি করে তাক লাগিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ।

এটা কোনও ঘর নাকি ফ্ল্যাটবাড়ি, তা দেখে বোঝার উপায় নেই । ঘরটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৷ রয়েছে বিদ্যুৎ থেকে যাবতীয় আধুনিক ব্যবস্থা । এই ঘরটির তৈরি করতে শুধু ব্যবহার করা হয়েছে বাঁশ, খড় এবং দড়ি । ঘরের নিচের অংশে ইট এবং সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে ৷ তবে ব্যবহার করা হয়নি রড বা একটাও পেরেক ৷ বাঁশের উপরে সিমেন্ট বালি স্টোন দিয়ে ঢালাই করা হয়েছে ঘরটি ৷ কমপক্ষে 100 বছর এই ঘরটি মানুষকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করবে বলে দাবি সংস্থার ।

20 ফুট উপরে জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি বাঁশের ঘর, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে সুন্দরবনকে (ইটিভি ভারত)

অত্যাধুনিক বাড়ি

সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুঃস্থ-দরিদ্র অসহায় মানুষ নিজেরা অর্থের অভাবে ঘর করতে পারছে না । অথচ বিগত দিনের ইয়াস, বুলবুল, আমফান, ফনি-র মতো বিধ্বংসী ঝড় অনেকে সর্বস্বহারা হয়েছে ৷ পরিবারের লোকজনকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন । তাদের কাছে সুখবর এনেছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা । তাদের আর্থিক সাহায্যে এলাকার মানুষের জন্য তৈরি হচ্ছে জাপানি প্রযুক্তিতে এই অত্যাধুনিক বাড়ি । ইতিমধ্যে একটি বাড়ি তৈরি হয়েছে এবং 100-রও বেশি ঘর পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হচ্ছে । যেখানে দুই কামরা থেকে শুরু করে আট কামরা পর্যন্ত ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে ।

ডোমের ঘর

এই ঘর তৈরির ফলে খুশি এলাকার মানুষ । এলাকাবাসী বাদল রায় বলেন, "আধুনিক প্রযুক্তি এবং গ্রাম বাংলার উপকরণ দিয়ে এই ঘরটি তৈরি করা হয়েছে । এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এই বাড়িটিকে সহজে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে । ডোমের ঘর হিসাবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছে এই বাড়িগুলি ।"

BAMBOO HOUSE IN SUNDARBANS
সুন্দরবনে জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি বাঁশের ঘর (নিজস্ব ছবি)

বিজ্ঞানসম্মতভাবে তৈরি ঘর

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য তথা অধ্যাপক শান্তনুকুমার মণ্ডল বলেন, "প্রতিবছর একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় সুন্দরবনের উপর আঘাত হানে । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচতে জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে । এখানে বাঁশ এবং দড়ি দিয়ে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে ৷ পেরেকের ব্যবহার করা হয়নি । সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে ৷ এই ঘর নির্মাণ করার জন্য এলাকাবাসীরা বাঁশের ব্যবহার করেছে ।"

BAMBOO HOUSE IN SUNDARBANS
সুন্দরবনে জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি বাঁশের ঘর (নিজস্ব ছবি)

তিনি আরও বলেন, "এই বাড়িতে দীর্ঘায়ু বহু বছর । প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বাড়ি । ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তি গ্রামবাসীদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে । বহু গ্রামবাসী এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার জন্য আগ্রহী হয়েছে । আগামিদিনে যাতে সুন্দরবনে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে এলাকাবাসীদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি না-হয়, সেকথা মাথায় রেখে জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘর তৈরি করা হয়েছে ।"

বাঁশের ঘর

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আরেক সদস্য বিশ্বনাথ মণ্ডল বলেন, "গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া শিল্প বাঁশ । আমরা বাঁশ দিয়ে এবং জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ঘরটি নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছি ৷ ঘরটি নির্মাণ করেছে এলাকারই মানুষজনেরা । এই ঘরটির সহজে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নষ্ট হবে না এবং এই ঘরটির বহুবছর টিকে থাকবে । আগামিদিনে এলাকাবাসী এই ঘর নির্মাণ করার জন্য আরও আগ্রহ প্রকাশ করেছে । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে এলাকাবাসীদের রক্ষা করার জন্য জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপকূল তীরবর্তী এলাকায় এই ঘর তৈরি করা হচ্ছে ।"