আলিপুরদুয়ার, 14 সেপ্টেম্বর: দুর্গাপুজো মানে আপামর বাঙালির কাছে আনন্দ উৎসব। কাশ ফুল, শিউলি ফুল আর নতুন জামার গন্ধ মিলেমিশে একাকার। কিন্তু এই দুর্গোৎসবে যোগ দেন না এমন পরিবারও আছে এই বাংলার বুকে! কারণ তাঁরা যে অসুর ৷ মা দুর্গার পুজো তে তাই হয় না সামিল ৷ কথিত আছে, এই পরিবারগুলি অসুর সম্প্রদায়ের জনজাতি অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু অসুরকে বধ করেছেন মা দুর্গা। তাই এই পরিবারগুলি পুজোর ক'টা দিন সবার সঙ্গে আনন্দ করেন না।
কারা এই অসুর? আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবড়ি চা-বাগানের অসুর লাইন এলাকায় 30 থেকে 35টি 'অসুর' সম্প্রদায়ের পরিবার বসবাস করে। পাশাপাশি জলপাইগুড়ি ক্যারন চা-বাগানেও তাঁদের বাস। চা-বাগানের শ্রমিক হিসেবেই অসুর সম্প্রদায়ের মানুষরা জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁরা দুর্গাপুজোর পাঁচটা দিন নিজেদের ঘরবন্দি করে রাখেন। এই রীতি চলে আসছিল বহুদিন ধরে।
অসুরদের সঙ্গে সময়ের বদল- এবার দিন বদলেছে। পুরনো বিশ্বাস থেকে ক্রমে বেরিয়ে আসছেন তাঁরাও। ওই সব পরিবারের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নাতি-নাতিরা বর্তমানে ঠাকুর দেখে। পুজোর মেলায় যায়, নতুন জামা কাপড়ও কেনে। অসুর সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রাচীন নিয়ম মেনে মা দুর্গার মুখ দর্শন করবেন না, এই নিয়ম আঁকড়ে ধরেছিলেন তাঁরা দিনের পর দিন ধরে। এখনও বয়স্ক মানুষজন বরাবরই পুজোর ক'টা দিন ঘরবন্দি থাকেন। কিন্তু বর্তমানে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তাঁরা সকলের সঙ্গে মিলে মিশে পুজোর কয়েকটা দিন উপভোগ করেন।
কী বলছেন তাঁরা-
- বৃদ্ধ নন্দু অসুর বলেন, "আমার বয়স এখন 70 ৷ আমরা দুর্গাপুজো দেখি না। আমাদের বাবা, মা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা আমাদের না করে দিয়েছে। আমাদের পুজোয় যাওয়া বারণ। আমরা পুজোর কয়েকটা দিন বাড়িতেই থাকি। কারণ অসুরকে দুর্গা মেরেছে তাই যেতে ইচ্ছে করে না। বয়স্কদের মধ্যে বর্তমানে আমরা দুই তিন জন রয়েছি। কিন্তু এই প্রজন্মের ছেলে, মেয়ে নাতি-নাতনিরা পুজোতে নতুন জামা কাপড় কেনে মা দুর্গার দর্শন করে ৷
- মাঝেরডাবড়ি চা-বাগানের ম্যানেজার চিন্ময় ধর বলেন, "আমি এই বাগানে বহুদিন ধরে আছি এটা আমাদের চোখে পড়েছে ৷ এখানকার বয়স্করা গত হয়েছেন ৷ তবে এই প্রজন্ম পুজো উপভোগ করেন। এখানে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।"