দুর্গাপুর, 10 এপ্রিল: নাম লক্ষ্মী সাহানি ৷ নামে লক্ষ্মী থাকলেও, পুলিশের খাতায় তিনি একেবারেই ‘লক্ষ্মী ছেলে’ নন ৷ বরং আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের একাধিক থানায় তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে বহু অভিযোগ ৷ সেই লক্ষ্মীই অবশেষে ধরা পড়েছেন পুলিশের জালে ৷ ধরা পড়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের কোকওভেন থানার আধিকারিকদের হাতে ৷ কিন্তু লক্ষ্মীর গ্রেফতারির খবর পেয়ে স্বস্তিতে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর, অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ-সহ বেশ কিছু থানার আধিকারিকরা ৷
কেন এই স্বস্তি ! আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বহুদিন ধরেই শিল্পাঞ্চলের পুলিশকে নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছেন এই লক্ষ্মী সাহানি ৷ বয়স 51 ৷ আহত হয়ে কোমরে চোট রয়েছে তাঁর ৷ বয়সের ভার এবং কোমরের আঘাত তাঁর ‘অপরাধ জীবনে’ পূর্ণচ্ছেদ দিতে পারেনি । বরং ভাঙা কোমর নিয়েও এখনও বাইক নিয়ে রাস্তায় ঘোরেন তিনি ৷ চোখের পলক ফেলার আগেই ছিনতাই করতে তিনি ‘পারদর্শী’ ৷ এমনকী পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যেতে তাঁর কোনও সমস্যা হতো না ।

ফলে তাঁর বিরুদ্ধে শিল্পাঞ্চলের একের পর এক থানায় জমেছে অভিযোগের পাহাড় ৷ দুর্গাপুর থানাতেই রয়েছে ছ’টি অভিযোগ ৷ এছাড়াও আশপাশের জেলাতেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ৷ অনেক চেষ্টা করেও পুলিশ তাঁর নাগাল পাচ্ছিল না ৷ অবশেষে বুধবার তাঁকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ ৷
স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন লক্ষ্মী সাহানি ? আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, বুধবার দুর্গাপুরের কোকওভেন থানা এলাকার ডিপিএল কলোনিতে বাইক নিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তিকে ঘুরতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয় । পুলিশ তাঁকে ধরতে যায় ৷ সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতিও হয় ৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে থানায় যায় ৷

সেখানে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ ৷ সেই জিজ্ঞাসাবাদ থেকে তদন্তকারীরা জানতে পারেন যে ওই ব্যক্তির নাম মনিরুল মিদ্দা ৷ তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ার বড়জোড়া থানা এলাকায় । ছিনতাই করার উদ্দেশ্যেই ডিপিএল কলোনিতে ঘোরাফেরা করছিলেন ৷ তিনি যে এই কাজে একা নন, সেকথাও পুলিশকে জানান মনিরুল ৷ সেই সূত্রেই উঠে আসে লক্ষ্মী সাহানির নাম ৷ মনিরুল পুলিশকে জানান যে লক্ষ্মী সাহানি বীরভূমের বোলপুরে রয়েছেন ৷
রাতেই পুলিশ বোলপুরে গিয়ে গ্রেফতার করে লক্ষ্মীকে ৷ গ্রেফতার করা হয় মনিরুলকেও ৷ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ যা জানতে পেরেছে, তাতে লক্ষ্মীর এক সময় গরুপাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না ৷ পুলিশ সূত্রে খবর, মনিরুল পুলিশকে জানিয়েছেন যে আগে তিনি লক্ষ্মীর কাছ থেকে চুরি করা গরু কিনে হাটে বেচে দিতেন ৷ পরে লক্ষ্মী ছিনতাইয়ের কাজে যুক্ত হয় ৷ সেই কাজে মনিরুলকে জড়িয়ে নেন ৷

ফলে এই ছিনতাই চক্রে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ ৷ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্তা বলেন, "দু’জন ছিনতাইবাজ গ্রেফতার হয়েছে । তাদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে । তাদের জেরা করে চক্রের আরও অনেক পাণ্ডা গ্রেফতার হবে বলে আমরা আশাবাদী । আমরা চাই এই ছিনতাই চক্রটির সঙ্গে যুক্ত সমস্ত অপরাধীদের খোঁজ পেতে ।"

এদিন মনিরুল মিদ্দা ও লক্ষ্মী সাহানিকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয় । তবে আদালত কী নির্দেশ দিয়েছে, তা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি ৷