গঙ্গাসাগর, 30 নভেম্বর: সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার পাশের গ্রাম পঞ্চায়েতে জোড়া বাল্যবিবাহের অভিযোগ ৷ নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নাবালক-নাবালিকাদের উদ্ধার করেছে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ 24 পরগনার সাগর কোস্টাল থানা এলাকায় ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, মাস দু’য়েক আগে গঙ্গাসাগরের ধবলাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নাবালিকাকে বিয়ে করেন এক যুবক ৷ গ্রামেরই একটি মন্দিরে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা ৷ বিয়ের প্রথম একমাস নাবালিকাকে নিয়ে তাঁরা মাসির বাড়িতে আশ্রয় নেন ৷ সেখান থেকে মাসখানেক আগে নাবালিকাকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন যুবক ৷ সম্প্রতি এই নিয়ে একটি অভিযোগ পায় সাগর কোস্টাল থানা ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা অভিযান চালায় শুক্রবার ৷
এ নিয়ে সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, "আমরা একটি নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়েছিলাম ৷ সেই মতো চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করি ৷ চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যৌথ অভিযানে পুলিশ ওই গ্রামে যায় এবং নাবালিকাকে উদ্ধার করে ৷ আমরা অভিযুক্ত যুবক বা তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করিনি ৷ হতদরিদ্র পরিবার ও অভিযুক্তের বাবা অসুস্থ হওয়ায় সতর্ক করা হয়েছে ৷ সেই সঙ্গে ওই গ্রাম ও তার আশেপাশের এলাকায় বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা অভিযান চালাচ্ছি ৷"
অন্যদিকে, সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরার এলাকায় এই ঘটনা হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি করে চর্চা শুরু হয়েছে ৷ এই নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে কথা বলতে চাননি ৷ অভিযুক্ত যুবকের বক্তব্য, "আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম দু’মাস আগে ৷ নাবালিকা বিয়ে করা অন্যায় জানতাম ৷ ওর বয়স 15 বছর ৷ আমার 21 বছর ৷ বাড়িতে কেউ জানত না ৷" আর নাবালিকার দাবি, তারা প্রেম করে বিয়ে করেছে ৷ তাকে কেউ জোর করেনি ৷
এই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের বাবা বলেন, "নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে করেছে শুনে আগে আমি গ্রামের সবাইকে জানিয়েছিলাম ৷ ছেলেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়েছি ৷ কিন্তু, এই কাজ করবে ভাবিনি ৷ আমি অসুস্থ, সুগারের রোগী ৷ বাবা ও ভাই মারা গিয়েছে ৷ একা সংসার চালাই ৷ তাই মেনে নিয়ে ছেলেকে বাড়িতে তুলেছিলাম ৷ আমি জানার পর সবার আগে মেয়ের মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম ৷ উনি মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে চাননি ৷ তাই বাধ্য হয়েই ঘরে তুলেছি ৷"
প্রায়ই একই ঘটনা ঘটেছে ধবলাট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্য একটি গ্রামে ৷ আর সেই ঘটনা ছেলে ও মেয়ে দু’জনেই অপ্রাপ্তবয়স্ক ৷ মাস চারেক আগে তারা বিয়ে করেছিলেন ৷ সেই ঘটনায় নাবালক-নাবালিকাকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে চাইল্ড লাইনের কর্মীরা ৷ তাদের সরকারি হোমে রাখা হবে ৷ এক্ষেত্রেও দুই পরিবার হতদরিদ্র এবং শিক্ষার আলো সেভাবে পৌঁছায়নি ৷ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনে তরফে তাই সচেতন করা হয়েছে ৷ ওই এলাকায় বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হবে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট ৷