কলকাতা, 30 এপ্রিল: মেট্রো রেলের ভিতরে কখনও নাচ, তো কখনও বা গলা ছেড়ে গান ৷ আবার যুগলের চুম্বন ৷ এমন নানা ঘটনা বারেবারে উঠে এসেছে ৷ যা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে প্রচুর ৷ আর তা শুধুমাত্র একটি শহরে সীমাবদ্ধ নেই ৷ দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা থেকে শুরু করে দেশের একাধিক মেট্রোয় এই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে ৷
কিন্তু, তাই বলে মেট্রো রেলের ভিতরে ভিক্ষাবৃত্তি ও নেশা ! এমনই দু’টি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে (ভিডিয়োর সত্যতা ইটিভি ভারত যাচাই করেনি) ৷ আর সেই নিয়েই শুরু হয়েছে আলোচনা ৷ প্রশ্ন উঠছে মেট্রোর নিরাপত্তা নিয়ে ৷ কীভাবে নিরাপত্তাবাহিনীর নজর এড়িয়ে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িতরা মেট্রোর ভিতরে প্রবেশ করছেন ? কীভাবেই বা নেশার দ্রব্য নিয়ে মেট্রোর পরিসরে পৌঁছে যাচ্ছে লোকজন ? এমন নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷
সম্প্রতি দু’টি ভিডিয়ো লোকজনের মোবাইলে ঘুরছে ৷ যার একটিতে দেখা যাচ্ছে, এক মহিলা, তাঁর কোলে একটি বাচ্চা ৷ খালি পায়ে মেট্রোর ভিতরে ঘুরছেন ৷ আর লোকজনের কাছে গিয়ে ভিক্ষা চাইছেন ৷ যদিও, কেউই তাঁর দিকে তাকাচ্ছেন না ৷ এই ভিডিয়োটি যিনি করেছেন, তিনি মেট্রোর নিত্যযাত্রী ৷
অতনু রায় নামে ওই ব্যক্তি ইটিভি ভারতকে বলেন, "আমি কাজের জন্য সেইদিন মেট্রোয় সফর করছিলাম ৷ হঠাৎ করে দেখি একজন শাড়ি পড়া মহিলা পায় কোনও জুতো ছিল না ৷ পোশাকও খুব একটা পরিচ্ছন্ন নয় ৷ কোলে বাচ্চা নিয়ে ভিক্ষা করছে ৷ যদিও ওই মহিলার উপস্থিতি নিয়ে কোনও যাত্রীর মধ্যে হেলদোল ছিল না ৷ কিন্তু, মেট্রোর ভিতরে ভিক্ষা করছেন তিনি ৷ এতো পুরোপুরি মেট্রো স্টেশনে ও ট্রেনের ভিতরের নিরাপত্তায় গাফিলতি ৷ এমন অবস্থা থাকলে তো, যে কেউ ছোট অস্ত্র বা দাহ্য পদার্থ নিয়ে মেট্রোয় ঢুকে যেতে পারে ৷"
ওই ব্যক্তি মেট্রো নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরপিএফের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ৷ তিনি বলেন, "বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করার আগে যে ব্যাগ স্ক্যান করার ব্যবস্থা রয়েছে, নয় সেটা বন্ধ থাকে ৷ নয় তো ব্যাগ যখন স্ক্যানারের বেল্টের উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে, ওখানে উপস্থিত পুলিশ বা আরপিএফের কর্মীরা কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়েও দেখেন না ৷ তাঁরা নিজেদের মোবাইলেই ব্যস্ত থাকেন ৷ মেট্রো রেলে নিরাপত্তা রয়েছে বলে মনে হয় না ৷"
মেট্রো রেলের আইএনটিটিইউসি’র প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, "এই বিষয় বারেবারে কর্তৃপক্ষের পক্ষের নজরে আনা হলেও কোনও কাজ হয়নি ৷ দিনে-দিনে লাইন বাড়ছে, মেট্রোর সংখ্যা বাড়ছে এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যাত্রী সংখ্যাও ৷ কিন্তু, কর্মীসংখ্যা তার তুলনায় একেবারেই কম ৷ শুধু ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে নয়, মেট্রোরেলের নিরাপত্তা বিভাগেও একই অবস্থা ৷ তাই কর্মীসংখ্যা এবং নিরাপত্তা কর্মী কম থাকলে ভালো করে নজরদারি করবে কে ? তাই যে অল্পসংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে তাদের উপর চাপ বাড়ছে ৷ তাঁরা নিজেদের 100 শতাংশ দিয়ে উঠতে পারছেন না ৷ যে ঘটনাগুলি সামনে উঠে আসছে সেগুলি আগামিদিনে আরও বড় ঘটনায় রূপান্তরিত হবে না, সেটা কে বলতে পারে ! তাই এই ধরনের ছোট ঘটনাগুলির থেকেই শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন ৷"
এই বিষয়টি নিয়ে মেট্রো রেলের এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ইটিভি ভারতের তরফে ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিক ভিডিয়ো দু’টির বিষয়ে অবগত নন বলে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷ তিনি এ-ও বলেন যে, যদি নিরাপত্তারক্ষীদের গাফিলতি কোথাও থেকে থাকে, সেই বিষয়টি তিনি অবশ্যই খোঁজ নেবেন ৷ দেখবেন যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর না-ঘটে ৷ সেই সঙ্গে মেট্রো রেলের নিরাপত্তা আরও আঁটোসাটো করা হয়, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ৷