শিলিগুড়ি, 27 জুন: সরকারি জমি তো বটেই, ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিও জোর করে দখল করার অভিযোগ। সেই অভিযোগেই বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয় জলপাইগুড়ির জেলা পরিষদ সদস্য তথা ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি অঞ্চলের তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিককে। পাশাপাশি একই অভিযোগে আরও দু'জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে এই দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে নবান্নের এক পর্যালোচনা বৈঠক থেকে এ নিয়ে কড়া বার্তা দেন মমতা ৷ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, কেউ জমি দখল করে রাখলে তাকে কোনওভাবেই ছাড়া হবে না ৷ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে বলতে শোনা যায়, "ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির অঞ্চল সভাপতিকে আমি গ্রেফতার করিয়ে দিয়েছি। ডাল, ভাত মাছ, তরকারি খেয়ে কি সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছে না। আর কত লাগে? বাঁচার অধিকারের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই কাজে লাগান।"
পুলিশ সূত্রে খবর, দেবাশিস প্রামাণিকের পর শিলিগুড়ি সংলগ্ন রাজগঞ্জ ব্লকের পাঘালুপাড়ার বাসিন্দা বিমল রায় ও জলডুমুরের বাসিন্দা মহম্মদ কালামকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ এদের গ্রেফতার করেছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এনজেপি থানা ও স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ। তৃণমূল কংগ্রেসের তাবড় নেতা দেবাশিস প্রামাণিকের গ্রেফতারির পর রাজনৈতিকমহলে হইচই পড়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ধৃত তিনজনকেই জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হয়। ধৃত বাকি দু'জনও শাসকদল তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছে। যদিও ওই ঘটনায় গ্রেফতারি নিয়ে কোনও মন্তব্যই করেননি দেবাশিস প্রামাণিক। কিন্তু ধৃত বিমল রায় বলেন, "আমাকে কেন গ্রেফতার করা হল জানি না। কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। সেই সময় আমাকে গ্রেফতার করা হয়। দেবাশিস প্রামাণিকের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁকে আমি চিনিও না।"
দেবাশিস প্রামাণিককে গ্রেফতারি নিয়ে এদিন মুখ খোলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্নের সভাঘরে শিলিগুড়ির জমি মাফিয়া নিয়ে ফের একবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী। কার্যত এদিন স্পষ্ট করে দিলেন সরকারি দখল করে বিক্রিতে যেসব দলীয় নেতারা জড়িত থাকবেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পিছপা হবেন না তিনি। আর সেইমতো গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিব বিবেক সহায় ও ডিজিকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজগঞ্জ ব্লকের ভোরের আলো সংলগ্ন পাঘালুপাড়ার বাসিন্দা জুলাপি রায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দেবাশিস প্রামাণিক-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। অভিযোগ, দেবাশিস প্রামাণিক এবং ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি যুব তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য গৌতম গোস্বামীর নির্দেশে বিমল রায়, মহম্মদ কালাম, যদু রায়, ঋষিকেশ রায়, দেবাশিষ রায় নামে জমি মাফিয়ারা জুলাপি রায়ের প্রায় 2.6 ডেসিমেল জমি জোর করে দখলের চেষ্টা করেন।
অভিযোগ, জমি দখলের জন্য 2023 সাল থেকে প্রতিনিয়ত ওই পরিবারের উপর অত্যাচার চালানো হত। এমনকী সম্প্রতি অভিযুক্তরা দেবাশিস প্রামাণিক ও গৌতম গোস্বামীর নির্দেশে জুলাপি রায় ও তাঁদের পরিবারের উপর হামলা করে। তাঁকে প্রাণে মারারও চেষ্টা করে। পাশাপাশি তাঁদের সোনা-গয়নাও লুট করা হয়। জমি হস্তান্তর না-করলে আগামীতে এলাকায় থাকতে না-দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল । এরপরই জুলাপি রায় এনজেপি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পরে অভিযানে নামে পুলিশ।
ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি নথি জাল করা, অপরাধমূলক অনুপ্রবেশ, হুমকি, প্রাণনাশের চেষ্টা, ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। দেবাশিস প্রামাণিকের বিরুদ্ধে কাওয়াখালি, পোড়াঝাড় ও ভোরের আলো সংলগ্ন এলাকায় সরকারি জমি, সেচ দফতরের জমি ও মহানন্দা নদীর চর দখল করে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও জমি দখল করতে হুমকি, প্রাণনাশের চেষ্টার মতো অভিযোগও উঠে এসেছে0।
এদিন নবান্ন সভাঘরে রিভিউ মিটিং চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির অঞ্চল সভাপতিকে আমি গ্রেফতার করিয়ে দিয়েছি। ডাল, ভাত মাছ, তরকারি খেয়ে কি সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছে না। আর কত লাগে? বাঁচার অধিকারের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই কাজে লাগান। লোভ ত্যাগ করুন।" এরপর স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি।
পাশাপাশি তিনি সচিব বিবেক সহায়কে নির্দেশ দেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। গত 7 বছরে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যত জমি হস্তান্তর হয়েছে তার তথ্য খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। কতটা জমি আইনত এবং কতটা জমি আইন বহির্ভূতভাবে হস্তান্তর হয়েছে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। পাশাপাশি সেচ দফতরের জমির উপরে যাঁরা বসে রয়েছেন তাঁদের উচ্ছেদ না-করে বুঝিয়ে পুনর্বাসন দিয়ে সরানোরও নির্দেশ দেন তিনি।
- জমি দখলের অভিযোগ, গ্রেফতার মেয়র 'ঘনিষ্ঠ' জেলা পরিষদ সদস্য