বোলপুর, 14 মে: এক মাস আগে হয়ে গিয়েছে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ৷ তারপরে খোঁজ এল 24 বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মায়ের ৷ এমনই ঘটনা ঘটেছে বীরভূমের লাভপুরের লাঘাটা আদিবাসী পাড়ায় ৷ মা-কে ফেরাতে বুধবার লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের সঙ্গে রাজস্থানে রওনা দিয়েছেন রূপালির ছেলে ষষ্ঠী হেমব্রম ৷
2001 সালে মেয়েকে নিয়ে দিঘা বেড়াতে গিয়েছিলেন রূপালি হেমব্রম ৷ সেই সময় সেখানে একটি মেলায় ঘুরতে গিয়ে কোনও কারণে মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি ৷ তবে, মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন ৷ তার তিনমাস পর বাড়ির কাছে পুকুরে স্নান করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান মানসিক ভারসাম্যহীন রূপালি ৷ অনেক খোঁজ করেও তাঁর হদিশ পাননি রূপালির স্বামী বিষ্ণু হেমব্রম ৷ দুই ছেলেও তখন অনেক ছোট ৷
মাঝে 24 বছরে অনেক কিছু বদলছে ৷ মাস খানেক আগে বিষ্ণু হেমব্রম মারা গিয়েছেন ৷ তবে, স্ত্রীর শ্রাদ্ধ করতে দেননি এতদিন ৷ ছেলেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি মারা গেলে একসঙ্গে মায়ের শ্রাদ্ধ করতে ৷ ছেলেরা সেই কথা মেনে বাবা ও মায়ের শ্রাদ্ধ একসঙ্গে করেছেন ৷ কিন্তু, তারপরেই খোঁজ মিলল রূপালি হেমব্রমের ৷

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রাজস্থানের একটি হোম থেকে লাভপুরের একটি রেস্তরাঁয় ফোন আসে ৷ খোঁজ করা হয় বিষ্ণু হেমব্রম এবং লাভপুরের লাঘাটা আদিবাসী পাড়ার ৷ বলা হয়, রূপালি হেমব্রমের কথা ৷ বিষয়টি শুনে প্রথমে চমকে ওঠেন রেস্তরাঁ মালিক ৷ তিনি স্থানীয় বিধায়ক অভিজিৎ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ তিনিই ওই হোমে ফের ফোন করেন ৷
পুরো বিষয়টি জেনে বিধায়ক জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ষষ্ঠী হেমব্রমকে খুঁজে বের করেন ৷ বিধায়কের ফোন থেকেই ষষ্ঠী তাঁর মায়ের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলেন 24 বছর পর ৷ মা ও ছেলে একে অপরকে চিনতে পারেন ৷ দু’জনের চোখেই ছিল জল ৷
কিন্তু প্রশ্ন হল, হঠাৎ করে রেস্তরাঁয় কেন ফোন এল ? বিধায়ক জানিয়েছেন, "24 বছর ধরে রাজস্থানের একটি হোমে ছিলেন রূপালি হেমব্রম ৷ নাম, বাড়ির ঠিকানা কিছুই মনে ছিল না ৷ কয়েকদিন আগে ঘুম থেকে উঠে নিজের নাম, স্বামীর পরিচয় ও লাভপুরের লাঘাটের কথা মনে পড়ে তাঁর ৷ হোম কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেটে সার্চ করে জানতে পারে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুরে এই গ্রাম আছে ৷ এরপর তারা নেট থেকেই লাভপুরের ওই রেস্তরাঁর ফোন নম্বর জোগাড় করেন ৷ তাই ওখানেই ফোন করে প্রথম খোঁজ চালায় ৷ আমি এবং লাভপুরের আদিবাসী সেলের সভাপতি নারু মুর্মু, ষষ্ঠী হেমব্রমের সঙ্গে রাজস্থানে যাচ্ছি ৷ সব কাগজপত্র নিয়েছি ৷ ওখানে গিয়ে এক মাকে তাঁর ছেলেদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ৷"
ষষ্ঠী হেমব্রম বলেন, "বাবা বলেছিল আমি মারা গেলে তোর মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করবি ৷ এক মাস আগে বাবার মৃত্যু হয় ৷ তারপরেই এক সঙ্গে দু’জনের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করি ৷ তারপরেই মায়ের খোঁজ পাই ৷ মাকে ফিরে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম ৷ ভিডিয়ো কলে মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে ৷ মা আমাকে চিনতে পেরেছে ৷ আমরা দু’জনেই কাঁদছিলাম ৷"