ETV Bharat / state

নিস্তারি রেশম সুতোর পর এবার মালদার এই মিষ্টির জিআই তকমা দাবি, ভালোবাসতেন ইন্দিরা গান্ধি ! - MALDA KANSAT SWEETS

নিস্তারি রেশম সুতোর পর এবার মালদার কানসাট মিষ্টির জিআই তকমার দাবি উঠল ৷ এই মিষ্টি নাকি ইন্দিরা গান্ধির খুব পছন্দের ছিল ৷

ETV BHARAT
মালদার কানসাট মিষ্টি (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : April 8, 2025 at 5:40 PM IST

3 Min Read

মালদা, 8 এপ্রিল: ক’দিন আগেই সাতটি নতুন পণ্যের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ৷ পণ্যগুলি হল কামারপুকুরের সাদা বোঁদে, মুর্শিবাদের ছানাবড়া, রাঁধুনিপাগল চাল, বারুইপুরের পেয়ারা, বিষ্ণুপুরের মতিচুর লাড্ডু, নলেন গুড়ের সন্দেশ এবং মালদার নিস্তারি রেশম সুতো ৷ এবার মালদা জেলার কানসাট মিষ্টির জিআই তকমার দাবি উঠেছে ৷ এনিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ৷ এই সংগঠনের তরফে ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে ৷

চিনির ঘন রসে ছানার মণ্ডকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং সময় ধরে জাল দেওয়ার পর তৈরি হয় কানসাট মিষ্টি ৷ এটি রসগোল্লার মতোই ৷ তবে আকারে লম্বা ৷ ঠাণ্ডা হওয়ার পর এই মিষ্টির গায়ে লাগানো হয় কাঁচা ক্ষীরের গুঁড়োর প্রলেপ ৷ কাঁচা ক্ষীর খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় বলে অনেক দোকানে ভাজা খোয়ার প্রলেপ লাগানো হয় ৷ তবে কাঁচা ক্ষীরের প্রলেপেই এই মিষ্টির স্বাদ বেশি ৷

ETV BHARAT
ইন্দিরা গান্ধির খুব পছন্দের ছিল মালদার এই মিষ্টি (নিজস্ব চিত্র)

মালদা শহরের মিষ্টি বিক্রেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এই মিষ্টি চালু হয়েছিল 80 থেকে 90 বছর আগে ৷ অবিভক্ত বাংলায় কানসাট এলাকার কোনও ময়রা প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেছিলেন ৷ দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলায় চলে আসেন ৷ তখন থেকেই এই জেলায় কানসাটের রমরমা ৷ বিয়ে কিংবা যে কোনও অনুষ্ঠানে শেষ পাতে কানসাট অবশ্যই লাগবে ৷ তা না-হলে যেন ভোজ অসম্পূর্ণ থেকে যায় ৷ তাই পাস্তা-পিৎজার যুগেও মাথা উঁচু করে বেঁচে রয়েছে মালদাবাসীর প্রাণের কানসাট ৷

মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলছেন, “মালদা জেলার অন্যতম মিষ্টি হল কানসাট ৷ এই মিষ্টির বয়স অন্তত 80 বছর ৷ শুধু জেলা নয়, এখানকার কানসাটের চাহিদা এখন রাজ্য ও দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও ৷ এই মিষ্টি মালদার প্রাচীন ঐতিহ্য ৷ তাই কানসাটের জিআই তকমা পেতে আমরা রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের অধীনস্থ পেটেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট মহুয়া হোম চৌধুরীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি ৷ আশা করছি, নিস্তারি রেশম সুতোর পর এবার আমরা কানসাটেও জিআই তকমা পাব ৷”

ETV BHARAT
মালদার কানসাট মিষ্টির জিআই তকমার দাবি (নিজস্ব চিত্র)

এবিষয়ে জেলার উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়ের জানাচ্ছেন, “মালদার কানসাটের জিআই ট্যাগিং-এর জন্য আমরা গত বছর ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছি ৷ এই মিষ্টির গুণমান পরীক্ষার জন্য খাদ্য সুরক্ষা দফতরের কাছে পাঠিয়েছিলাম ৷ তারা কানসাটের গুণমান পরীক্ষা করেছে ৷ এখন আমরা ধাপে ধাপে সামনের দিকে এগোচ্ছি ৷ আমাদেরও আশা, খুব তাড়াতাড়ি মালদা এই মিষ্টির জিআই ট্যাগিং পাবে ৷”

জেলা খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক প্রশান্ত বৈদিকের বক্তব্য, “মুর্শিদাবাদ অনেক আগে ছানাবড়ার জিআই ট্যাগিং-এর আবেদন জানিয়েছিল ৷ এবার তারা সেই তকমা পেয়েছে ৷ একইভাবে এবছর জিআই ট্যাগিং পেয়েছে কামারপুকুরের সাদা বোঁদে ৷ এবার মালদা কানসাটের জিআই ট্যাগিং পাওয়ার জন্য আবেদন জমা পড়েছে ৷ তবে এই তকমা পেতে অনেক ধাপ পেরোতে হয় ৷ আমাদের কাছে এই মিষ্টির গুণমান পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল ৷ আমরা আমাদের রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি ৷ এই মিষ্টি খাওয়ার উপযোগী ৷ তবে খুব বেশিদিন ভালো রাখা যায় না ৷ সাধারণভাবে দু’দিন পর্যন্ত খাওয়ার যোগ্য থাকে ৷ তবে ফ্রিজিং পদ্ধতি ব্যবহারে আরও কিছু সময় ভালো থাকতে পারে ৷”

মালদা শহরের এক প্রসিদ্ধ কানসাট প্রস্তুতকারক রতন গুহ জানান, “দীর্ঘ বছর ধরে এই মিষ্টি মালদার মানুষের মন জয় করে রেখেছে ৷ এই মিষ্টি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির খুব পছন্দের ছিল ৷ জীবিত থাকাকালীন বরকত গণি খান চৌধুরী আমার দোকান থেকেই প্রতি বছর ইন্দিরাজিকে কানসাট পাঠাতেন ৷”

মালদা, 8 এপ্রিল: ক’দিন আগেই সাতটি নতুন পণ্যের জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ৷ পণ্যগুলি হল কামারপুকুরের সাদা বোঁদে, মুর্শিবাদের ছানাবড়া, রাঁধুনিপাগল চাল, বারুইপুরের পেয়ারা, বিষ্ণুপুরের মতিচুর লাড্ডু, নলেন গুড়ের সন্দেশ এবং মালদার নিস্তারি রেশম সুতো ৷ এবার মালদা জেলার কানসাট মিষ্টির জিআই তকমার দাবি উঠেছে ৷ এনিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ৷ এই সংগঠনের তরফে ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে ৷

চিনির ঘন রসে ছানার মণ্ডকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং সময় ধরে জাল দেওয়ার পর তৈরি হয় কানসাট মিষ্টি ৷ এটি রসগোল্লার মতোই ৷ তবে আকারে লম্বা ৷ ঠাণ্ডা হওয়ার পর এই মিষ্টির গায়ে লাগানো হয় কাঁচা ক্ষীরের গুঁড়োর প্রলেপ ৷ কাঁচা ক্ষীর খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় বলে অনেক দোকানে ভাজা খোয়ার প্রলেপ লাগানো হয় ৷ তবে কাঁচা ক্ষীরের প্রলেপেই এই মিষ্টির স্বাদ বেশি ৷

ETV BHARAT
ইন্দিরা গান্ধির খুব পছন্দের ছিল মালদার এই মিষ্টি (নিজস্ব চিত্র)

মালদা শহরের মিষ্টি বিক্রেতাদের অনেকেই জানিয়েছেন, এই মিষ্টি চালু হয়েছিল 80 থেকে 90 বছর আগে ৷ অবিভক্ত বাংলায় কানসাট এলাকার কোনও ময়রা প্রথম এই মিষ্টি তৈরি করেছিলেন ৷ দেশভাগের সময় তিনি মালদা জেলায় চলে আসেন ৷ তখন থেকেই এই জেলায় কানসাটের রমরমা ৷ বিয়ে কিংবা যে কোনও অনুষ্ঠানে শেষ পাতে কানসাট অবশ্যই লাগবে ৷ তা না-হলে যেন ভোজ অসম্পূর্ণ থেকে যায় ৷ তাই পাস্তা-পিৎজার যুগেও মাথা উঁচু করে বেঁচে রয়েছে মালদাবাসীর প্রাণের কানসাট ৷

মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি উজ্জ্বল সাহা বলছেন, “মালদা জেলার অন্যতম মিষ্টি হল কানসাট ৷ এই মিষ্টির বয়স অন্তত 80 বছর ৷ শুধু জেলা নয়, এখানকার কানসাটের চাহিদা এখন রাজ্য ও দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরেও ৷ এই মিষ্টি মালদার প্রাচীন ঐতিহ্য ৷ তাই কানসাটের জিআই তকমা পেতে আমরা রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের অধীনস্থ পেটেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট মহুয়া হোম চৌধুরীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি ৷ আশা করছি, নিস্তারি রেশম সুতোর পর এবার আমরা কানসাটেও জিআই তকমা পাব ৷”

ETV BHARAT
মালদার কানসাট মিষ্টির জিআই তকমার দাবি (নিজস্ব চিত্র)

এবিষয়ে জেলার উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর সামন্ত লায়ের জানাচ্ছেন, “মালদার কানসাটের জিআই ট্যাগিং-এর জন্য আমরা গত বছর ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছি ৷ এই মিষ্টির গুণমান পরীক্ষার জন্য খাদ্য সুরক্ষা দফতরের কাছে পাঠিয়েছিলাম ৷ তারা কানসাটের গুণমান পরীক্ষা করেছে ৷ এখন আমরা ধাপে ধাপে সামনের দিকে এগোচ্ছি ৷ আমাদেরও আশা, খুব তাড়াতাড়ি মালদা এই মিষ্টির জিআই ট্যাগিং পাবে ৷”

জেলা খাদ্য সুরক্ষা আধিকারিক প্রশান্ত বৈদিকের বক্তব্য, “মুর্শিদাবাদ অনেক আগে ছানাবড়ার জিআই ট্যাগিং-এর আবেদন জানিয়েছিল ৷ এবার তারা সেই তকমা পেয়েছে ৷ একইভাবে এবছর জিআই ট্যাগিং পেয়েছে কামারপুকুরের সাদা বোঁদে ৷ এবার মালদা কানসাটের জিআই ট্যাগিং পাওয়ার জন্য আবেদন জমা পড়েছে ৷ তবে এই তকমা পেতে অনেক ধাপ পেরোতে হয় ৷ আমাদের কাছে এই মিষ্টির গুণমান পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল ৷ আমরা আমাদের রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি ৷ এই মিষ্টি খাওয়ার উপযোগী ৷ তবে খুব বেশিদিন ভালো রাখা যায় না ৷ সাধারণভাবে দু’দিন পর্যন্ত খাওয়ার যোগ্য থাকে ৷ তবে ফ্রিজিং পদ্ধতি ব্যবহারে আরও কিছু সময় ভালো থাকতে পারে ৷”

মালদা শহরের এক প্রসিদ্ধ কানসাট প্রস্তুতকারক রতন গুহ জানান, “দীর্ঘ বছর ধরে এই মিষ্টি মালদার মানুষের মন জয় করে রেখেছে ৷ এই মিষ্টি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির খুব পছন্দের ছিল ৷ জীবিত থাকাকালীন বরকত গণি খান চৌধুরী আমার দোকান থেকেই প্রতি বছর ইন্দিরাজিকে কানসাট পাঠাতেন ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.