কলকাতা, 4 জুন: বিদেশ সফর সেরে দেশে ফিরলেও বুধবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে থাকছেন না তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । কালীগঞ্জে উপনির্বাচন ও পূর্ব নির্ধারিত সাংগঠনিক কর্মসূচির কারণে তাঁর দিল্লি যাওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি ৷ তবে লিখিত ভাবে নিজের মতামত বিদেশ মন্ত্রকে জানাবেন বলেও জানিয়েছেন অভিষেক ।
15 দিনের বিদেশ সফর শেষে মঙ্গলবার গভীর রাতে কলকাতায় ফেরেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক । রাত 12টা 15 মিনিটে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন তিনি । ফিরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানিয়ে দেন, বিদেশমন্ত্রীর ডাকে সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি হাজির থাকতে পারছেন না ৷

যদিও দিল্লির রাজনৈতিক মহলে এই অনুপস্থিতি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে ৷ তবে তৃণমূল শিবির অভিষেকের সিদ্ধান্তকে 'দলীয় দায়িত্ব' বলে ব্যাখ্যা করছে । বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বলেন, "আমি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছি, তৃণমূল কংগ্রেসের নয় । শাসকদলের সঙ্গে মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থে কখনও আপোস হবে না ।"
কূটনৈতিক সফর, কড়া বার্তা
21 মে থেকে শুরু হয় তাঁর বিদেশ সফর ৷ জাপান থেকে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া - এই পাঁচটি দেশে পরিদর্শন করেন সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা । মূল এজেন্ডা ছিল সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও জঙ্গিদের পাকিস্তানের মদত দেওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরা । নেতৃত্বে ছিলেন জেডিইউ সাংসদ সঞ্জয় ঝা । শুরুতে তৃণমূলের তরফে এই প্রতিনিধি দলে ইউসুফ পাঠানের নাম প্রস্তাবিত হলেও, শেষ মুহূর্তে অভিষেককেই বেছে নেওয়া হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে ।

কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ান ইন্ডিয়ান কংগ্রেস (MIC) এবং পিপলস জাস্টিস পার্টির (PKR) সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন অভিষেক । সেখানে তিনি বলেন, "গত 50 বছর ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে । ভবিষ্যতে আলোচনা হলে, তা শুধুই পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার ইস্যুতে হওয়া উচিত ।" আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে মদতদাতা হিসেবে তুলে ধরতে কোনও রাখঢাক করেননি অভিষেক ।
জাতীয়তাবাদ বনাম রাজনৈতিক বিরোধ
এই সফর জুড়ে অভিষেকের বার্তা ছিল, 'ভারতের স্বার্থে কোনও সমঝোতা নয় ।' রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা দলীয় অবস্থান যেমনই হোক, জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে তিনি কোনও ছাড় দিতে নারাজ । সিঙ্গাপুর, টোকিয়ো কিংবা জাকার্তায় - প্রতিটি আলোচনাতেই তৃণমূল সাংসদ ভারতীয় সার্বভৌমত্ব, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আঞ্চলিক শান্তির পক্ষে সওয়াল করেন ।

তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক নিজেও এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন । তাঁর সফরকালীন কার্যকলাপ নিয়মিতভাবে দলীয় সোশ্যাল মিডিয়াতেও তুলে ধরা হয়েছে । তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, "সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের বার্তা অভিষেক স্পষ্ট করে দিয়েছেন । আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের অবস্থান তুলে ধরার ক্ষেত্রে এই সফর ছিল তাৎপর্যপূর্ণ ।"
দিল্লির সভা নয়, বাংলা প্রথম
যদিও বিদেশমন্ত্রকের সর্বদলীয় বৈঠকে অভিষেকের অনুপস্থিতি নিয়ে চর্চা চলছে ৷ তবে তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, এই সিদ্ধান্ত দলের সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা থেকেই নেওয়া হয়েছে । অভিষেক জানিয়েছেন, কালীগঞ্জে 19 তারিখ উপনির্বাচন রয়েছে এবং তাঁর সংসদীয় এলাকা ডায়মন্ডহারবারেও একাধিক কর্মসূচি ঠিক করা রয়েছে । তাই এই মুহূর্তে দিল্লি যাওয়া সম্ভব নয় ।
বিদেশ থেকে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বলেন, "প্রায় 15 দিন ধরে পাঁচটি দেশে ঘুরে নানা বৈঠকে অংশ নিয়েছি । দেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি যেখানে এসেছিল, সেখানে আমি স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছি । তবে এখন দলের কর্মসূচি আমার কাছে অগ্রাধিকার ।"