ETV Bharat / state

28 জন শিক্ষিকার মধ্যে 12 জনের চাকরি গিয়েছে, স্কুল চালাতে হিমশিম অবস্থা রানিগঞ্জে - WB SSC SCAM

স্কুলে মোট 28 জন শিক্ষিকা ৷ তার মধ্যে 12 জনের চাকরি গিয়েছে ৷ 16 জনকে নিয়ে কীভাবে স্কুল চালাবেন ভেবে উঠতে পারছেন না প্রধান শিক্ষিকা।

BASANTI DEVI GOENKA VIDYA MANDIR
রানিগঞ্জ বাসন্তীদেবী গোয়েঙ্কা বিদ্যা মন্দির। (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : April 12, 2025 at 11:04 AM IST

Updated : April 12, 2025 at 12:00 PM IST

3 Min Read

রানিগঞ্জ, 12 এপ্রিল: শিল্পাঞ্চলের হিন্দি মাধ্যম স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী গোয়েঙ্কা বিদ্যা মন্দির। আর এই বিদ্যালয়ে শিল্পাঞ্চলের সবচেয়ে বেশী সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে ৷ চাকরি খুঁইয়েছেন মোট 12 জন শিক্ষিকা। প্রতিদিনের অভ্যাসে প্রথম প্রথম তাঁদের কয়েকজন নিয়মিত স্কুলে এসেছিলেন। কিন্তু এখন আর আসছেন না। ফলে স্কুল পরিচালন করতে সমস্যায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ ৷

স্কুলে মোট 28 জন শিক্ষিকা ৷ তার মধ্যে 12 জনের চাকরি গিয়েছে ৷ বাকি 16 জনকে নিয়ে কীভাবে স্কুল চালাবেন ভেবে উঠতে পারছেন না প্রধান শিক্ষিকা। অন্যদিকে চাকরি হারানো শিক্ষিকারা নিজেদের যোগ্য বলেই দাবি করেছেন। শুধু তাই নয়, অনেকের দাবি অতীতের ভালো চাকরি ও ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিয়ে শিক্ষকতার পেশা বেছেছিলেন তাঁরা।

28 জন শিক্ষিকার মধ্যে 12 জনের চাকরি গিয়েছে এই স্কুলের (ইটিভি ভারত)

এই স্কুলের শিক্ষিকা খুশবু দাসের চাকরি গিয়েছে ৷ তিনি উত্তর 24 পরগনার বাসিন্দা। ভিনরাজ্যে চাকরি করতে চাননি। শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন এ রাজ্যেই । তাই ছেড়ে দিয়েছিলেন অসমের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের চাকরির সুযোগ। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন তিনি ৷ শিক্ষিকার দাবি, স্কুলের চাকরি পাওয়ার পরে স্বাস্থ্য দফতরের চাকরি হয়েছিল তাঁর। কিন্তু শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন। ছাত্রাছাত্রীদের ইংরেজির পাঠ দিতে চেয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সেই চাকরিতে আগ্রহ দেখাননি ৷

তিনি বলেন, "আমাদের কী দোষ ছিল ? আমরা তো যোগ্য। অযোগ্যদের বাঁচাতে যোগ্যদের বলি দেওয়া হল। ভেবেছিলাম সুপ্রিম কোর্টে ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু যোগ্য হয়েও এটা আমাদের প্রাপ্য ছিল ! বাড়ি থেকে 250 কিলোমিটার দূরে ভিন শহরে পড়ে থেকে স্কুলে চাকরি করছি 2029 সাল থেকে। আজ হঠাৎ কিছু দোষ না-করেই আমাদের চাকরি চলে গেল ?"

একইভাবে হতাশা ঝড়ে পড়েছে ওই স্কুলেরই শিক্ষিকা বাবলি রবিদাসের গলায়। যিনি সমসাময়িক হিন্দি সাহিত্য নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করেছেন ৷ আসানসোলের ডিশেরগড়ের বাসিন্দা বাবলি ভেবেছিলেন কলেজে অধ্যাপনা করবেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু 2016 সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন। প্রথমে অন্য স্কুলে তারপর 2029 সালে এই স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন। তবে পুনরায় পরীক্ষায় বসতে চান বাবলি রবিদাস। সফল হয়ে আবার স্কুলের চাকরিতেই ফিরবেন তিনি।

তিনি বলেন, ''বিচারব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস উঠে গিয়েছে ৷ এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হল। এবার কেউ শিক্ষকতার পেশায় আসার আগে 10বার ভাববে। সরকারি চাকরিও যে নিরাপদ নয়, সেটাই সামনে এল ৷ মাঝপথে এভাবে আমাদের অযোগ্য তকমা দিয়ে ছেঁটে ফেলা হল ৷ এটা মেনে নেওয়া কি সম্ভব ?''

BASANTI DEVI GOENKA VIDYA MANDIR
রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী গোয়েঙ্কা বিদ্যা মন্দির। (নিজস্ব চিত্র)

রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী গোয়েঙ্কা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষিকা প্রিয়া কুমারী। তিনি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে একটি প্রাইমারি স্কুলে টিচার ইনচার্জ ছিলেন। সেই চাকরি ছেড়ে এই হাইস্কুলে আসেন। এখন অসহায় অবস্থা তাঁর। তিনি বলেন, "দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও ন্যায়বিচার হল না। চাকরিহারা হলাম আমরা। এই অবস্থায় পশ্চিম বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়বে। নিজের সাবজেক্ট নিয়ে চর্চায় থাকব বলে বাড়ি ছেড়ে এত দূরে চাকরি নিয়েছিলাম। আমি যে প্রাইমারি স্কুলে ছিলাম, সেখানে থাকলে এতদিন প্রধান শিক্ষকা হয়ে যেতাম।"

রানিগঞ্জের ওই স্কুলে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। একই সঙ্গে 12 জন শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। বাকি 16 জন শিক্ষিকাকে নিয়ে কীভাবে স্কুল চলবে, তা ভেবেই অস্থির প্রধান শিক্ষিকা শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "হিন্দি, ইংরাজি, ইতিহাস, ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষিকা ছিলেন। এদের চলে যাওয়ায় ভৌতবিজ্ঞান ও ইতিহাসের আর কোনও শিক্ষিকাই থাকল না স্কুলে।"

রানিগঞ্জ, 12 এপ্রিল: শিল্পাঞ্চলের হিন্দি মাধ্যম স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী গোয়েঙ্কা বিদ্যা মন্দির। আর এই বিদ্যালয়ে শিল্পাঞ্চলের সবচেয়ে বেশী সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে ৷ চাকরি খুঁইয়েছেন মোট 12 জন শিক্ষিকা। প্রতিদিনের অভ্যাসে প্রথম প্রথম তাঁদের কয়েকজন নিয়মিত স্কুলে এসেছিলেন। কিন্তু এখন আর আসছেন না। ফলে স্কুল পরিচালন করতে সমস্যায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ ৷

স্কুলে মোট 28 জন শিক্ষিকা ৷ তার মধ্যে 12 জনের চাকরি গিয়েছে ৷ বাকি 16 জনকে নিয়ে কীভাবে স্কুল চালাবেন ভেবে উঠতে পারছেন না প্রধান শিক্ষিকা। অন্যদিকে চাকরি হারানো শিক্ষিকারা নিজেদের যোগ্য বলেই দাবি করেছেন। শুধু তাই নয়, অনেকের দাবি অতীতের ভালো চাকরি ও ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিয়ে শিক্ষকতার পেশা বেছেছিলেন তাঁরা।

28 জন শিক্ষিকার মধ্যে 12 জনের চাকরি গিয়েছে এই স্কুলের (ইটিভি ভারত)

এই স্কুলের শিক্ষিকা খুশবু দাসের চাকরি গিয়েছে ৷ তিনি উত্তর 24 পরগনার বাসিন্দা। ভিনরাজ্যে চাকরি করতে চাননি। শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন এ রাজ্যেই । তাই ছেড়ে দিয়েছিলেন অসমের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের চাকরির সুযোগ। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন তিনি ৷ শিক্ষিকার দাবি, স্কুলের চাকরি পাওয়ার পরে স্বাস্থ্য দফতরের চাকরি হয়েছিল তাঁর। কিন্তু শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন। ছাত্রাছাত্রীদের ইংরেজির পাঠ দিতে চেয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সেই চাকরিতে আগ্রহ দেখাননি ৷

তিনি বলেন, "আমাদের কী দোষ ছিল ? আমরা তো যোগ্য। অযোগ্যদের বাঁচাতে যোগ্যদের বলি দেওয়া হল। ভেবেছিলাম সুপ্রিম কোর্টে ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু যোগ্য হয়েও এটা আমাদের প্রাপ্য ছিল ! বাড়ি থেকে 250 কিলোমিটার দূরে ভিন শহরে পড়ে থেকে স্কুলে চাকরি করছি 2029 সাল থেকে। আজ হঠাৎ কিছু দোষ না-করেই আমাদের চাকরি চলে গেল ?"

একইভাবে হতাশা ঝড়ে পড়েছে ওই স্কুলেরই শিক্ষিকা বাবলি রবিদাসের গলায়। যিনি সমসাময়িক হিন্দি সাহিত্য নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করেছেন ৷ আসানসোলের ডিশেরগড়ের বাসিন্দা বাবলি ভেবেছিলেন কলেজে অধ্যাপনা করবেন। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু 2016 সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন। প্রথমে অন্য স্কুলে তারপর 2029 সালে এই স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন। তবে পুনরায় পরীক্ষায় বসতে চান বাবলি রবিদাস। সফল হয়ে আবার স্কুলের চাকরিতেই ফিরবেন তিনি।

তিনি বলেন, ''বিচারব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস উঠে গিয়েছে ৷ এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হল। এবার কেউ শিক্ষকতার পেশায় আসার আগে 10বার ভাববে। সরকারি চাকরিও যে নিরাপদ নয়, সেটাই সামনে এল ৷ মাঝপথে এভাবে আমাদের অযোগ্য তকমা দিয়ে ছেঁটে ফেলা হল ৷ এটা মেনে নেওয়া কি সম্ভব ?''

BASANTI DEVI GOENKA VIDYA MANDIR
রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী গোয়েঙ্কা বিদ্যা মন্দির। (নিজস্ব চিত্র)

রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী গোয়েঙ্কা বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষিকা প্রিয়া কুমারী। তিনি ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে একটি প্রাইমারি স্কুলে টিচার ইনচার্জ ছিলেন। সেই চাকরি ছেড়ে এই হাইস্কুলে আসেন। এখন অসহায় অবস্থা তাঁর। তিনি বলেন, "দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও ন্যায়বিচার হল না। চাকরিহারা হলাম আমরা। এই অবস্থায় পশ্চিম বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা পুরো ভেঙে পড়বে। নিজের সাবজেক্ট নিয়ে চর্চায় থাকব বলে বাড়ি ছেড়ে এত দূরে চাকরি নিয়েছিলাম। আমি যে প্রাইমারি স্কুলে ছিলাম, সেখানে থাকলে এতদিন প্রধান শিক্ষকা হয়ে যেতাম।"

রানিগঞ্জের ওই স্কুলে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। একই সঙ্গে 12 জন শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে। বাকি 16 জন শিক্ষিকাকে নিয়ে কীভাবে স্কুল চলবে, তা ভেবেই অস্থির প্রধান শিক্ষিকা শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "হিন্দি, ইংরাজি, ইতিহাস, ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষিকা ছিলেন। এদের চলে যাওয়ায় ভৌতবিজ্ঞান ও ইতিহাসের আর কোনও শিক্ষিকাই থাকল না স্কুলে।"

Last Updated : April 12, 2025 at 12:00 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.