কলকাতা, 28 মার্চ: দু'চোখে স্বপ্ন নেইমারের মত ফুটবলার হওয়ার ৷ বয়সভিত্তিক দলে (অনূর্ধ্ব-15) লাল-হলুদ জার্সিতে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে শিশির সরকার ৷ ইস্টবেঙ্গল সিনিয়র দলে যখন গোল করার ফুটবলারের অভাব, তখন যুব লিগে 10 ম্যাচে 15 গোল করে ফেলেছেন বৈঁচির এই প্রতিভাবান স্ট্রাইকার। গোলের বন্যা শিশিরের পায়ে। ইস্টবেঙ্গলের আগামীতে আশার আলো। গতবছর অনূর্ধ্ব-13 দলে ইস্টবেঙ্গলে ট্রায়াল দিতে এসেছিল শিশির। সেখানে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে সুযোগ পায় অনূর্ধ্ব-15 দলে। আপাতত ফাল্গুনী দত্তর কোচিংয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স করে ইয়ুথ আই লিগে মেলে ধরেছে সে।
বৈঁচি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলা শুরু করা শিশিরের চোখে একরাশ স্বপ্ন ৷ সে বলে, "নেইমারের খেলা আমার ভালোলাগে। আমি কখনও উইংয়ে খেলি। আবার কখনও স্ট্রাইকারে। ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সুনীল ছেত্রী আমার আদর্শ ৷" গত শতাব্দীর শেষদিকে কলকাতা ময়দানে শিশির ঘোষ নামের কিংবদন্তি বাঙালি স্ট্রাইকার মাঠ মাতিয়ে রেখেছিলেন। তিনিও এসেছিলেন হুগলি জেলা থেকে। হাওড়া লাগোয়া এই জেলার ভালো ফুটবলার উপহার দেওয়ার রীতি রয়েছে। শিশির সরকার সে তালিকায় নয়া সংযোজন ৷ ফুটবল আঁকড়ে জীবনের রাজপথে চলার স্বপ্ন দেখা কিশোরের মাঠের বাইরের জীবনটা অবশ্য স্বচ্ছল নয়। বাবা দেবেন্দ্র সরকার কৃষক। মা গৃহবধূ। শিশিরের এক বোনও রয়েছে। ফুটবলার হতে চেয়েও না-পারা বাবা দেবেন্দ্র সরকারের অধরা স্বপ্নপূরণের বাহন ছেলে শিশির।
শিশিরের কথায়, "বাবা এককালে ভালো ফুটবল খেলতেন। কিন্তু বড় ফুটবলার হতে পারেননি। আমি বাবার স্বপ্নপূরণ করতে চাই। লাল-হলুদ জার্সিতে খেলতে চাই। দেশের হয়ে খেলতে চাই ৷" খেলার জন্য নিয়মিত স্কুলে যাওয়া হয় না নবম শ্রেণির ছাত্র শিশিরের ৷ ইস্টবেঙ্গল ক্লাব অনূর্ধ্ব-15 দলটির জন্য যাদবপুরে থাকার ব্যবস্থা করেছে। যাদবপুরে তাঁর জন্য কোনও গৃহশিক্ষক নেই। শিশির বলে, "নোটস দেখে পড়াশোনা করি। কোনও কিছু আটকে গেলে শিক্ষকদের কাছ থেকেই জেনে নিই। খেলার পাশাপাশি পড়াশোনাটা জরুরি। তাই প্র্যাকটিসের পরে বা ফাঁকা সময়ে পড়াশোনা করি ৷"
ইস্টবেঙ্গল সিনিয়র দল সাম্প্রতিক সময়ে বড় সাফল্য পেতে ব্যর্থ। আইএসএলে প্রথম ছ'য়ে প্রবেশের স্বপ্ন আবারও অসফল হয়েছে। অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গলের জুনিয়র ব্রিগেড বয়সভিত্তিক ফুটবলে নজরকাড়া পারফরম্যান্স করে চলেছে। এমনকী মেয়েদের দলও দাপট দেখাচ্ছে। নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর তাগিদ এখন ইস্টবেঙ্গলজুড়ে। সিনিয়র দল চলতি মরশুমে সুপার কাপে ফের চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে কি না, সময় বলবে। তবে জুনিয়র পর্যায়ে একাধিক শিশির ইস্টবেঙ্গলের আঁতুড়ঘরে বেড়ে উঠছে। যাদের মহীরুহ হওয়া সময়ের অপেক্ষা। তাই মশাল আপাত ম্রিয়মাণ হলেও জোরালোভাবে প্রজ্জ্বলনের অপেক্ষায়।