কলকাতা, 9 জুন: বন্ধুত্ব শত্রুতায় পর্যবসিত হওয়ার পরেও ফের আবার মিত্রতার খোলসে হাত ধরাধরি । মোহনবাগানে এখন ফিলগুড আবহাওয়া । নির্বাচন নয়, যুযুধান দুই পক্ষ হাত মিলিয়ে আগামী তিনবছর একযোগে সবুজ মেরুন প্রশাসন চালানোর অঙ্গীকার করলেন ।
সোমবার ছিল মোহনবাগান নির্বাচনের মনোনয়নের শেষ দিন । সৃঞ্জয় বসু এবং তাঁর গোষ্ঠী মনোনয়নপত্র জমা দেন । দেবাশিস দত্তর গোষ্ঠীও তাদের মনোনয়ন জমা দেন । সচিব পদে একমাত্র মনোনয়ন সৃঞ্জয় বসু । দেবাশিস দত্ত মনোনয়ন জমা দেননি । বাইশ সদস্যের নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে আসতে চলেছেন দেবাশিস । কার্যত তিন দশক ধরে সভাপতি হিসেবে পদে টুটু বসু থাকার পরে সবুজ মেরুন সভাপতির পদে পালাবদল ।
কয়েকমাস ধরে মোহনবাগান নির্বাচন ঘিরে গড়ে ওঠা ঢক্কানিনাদ এখন মূষিক প্রসবে প্রমাণিত । একদা বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদের কিনারায় পৌঁছেও শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেল পর্দার আড়ালে থাকা তৃতীয় পক্ষের উদ্যোগে বা নির্দেশে । যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করলেন দেবাশিস দত্ত এবং সৃঞ্জয় বসু । পাশে বসেছিলেন শৌমিক বসু ।
সৃঞ্জয় বসু বলছেন, "সব জায়গায় গণতন্ত্র থাকা উচিত । গণতন্ত্র না হলে সদস্যদের সঙ্গে যোগসূত্র থাকবে না । এই সদস্যদের সঙ্গে জনসংযোগ তৈরি করা । দুই পক্ষই নির্বাচন করেছি । কোনও বিরোধী পক্ষ না থাকলে গণতন্ত্র থাকত না । কোথাও একটা লাগাম দেওয়া উচিত । এই দুটো কমিটি আগেও একসঙ্গে কাজ করেছি । ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য মাঝে আলাদা হয়েছিলাম । আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হয় । দুই পক্ষ এতদূর এগিয়ে আগে কখনও এক হয়নি । মোহনবাগানের সেরা একাদশ গড়েছি । একসঙ্গে মিলেছি । 22 জনের টিম । শ্রেষ্ঠ মোহনবাগান টিম ।"
কেন এই বিলম্বিত বোধোদয় ?
নতুনভাবে সচিব পদে বসতে চলা সৃঞ্জয় বসুর কথায়, "সব কিছুরই সময় আসে উপলব্ধি করার । এই সিস্টেম যদি ভালো কাজ করে ।"
প্রায় একই সঙ্গে দেবাশিস দত্তর সংযোজন, "বিলম্বিত হওয়াতে সুবিধা হয়েছে সদস্যদের বক্তব্য আমরা শুনতে পেয়েছি । কোনায় কোনায় আমরা প্রচার করেছি । ফলে তারা কী চাইছে সেটা বুঝতে পেরেছি । তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনের চেষ্টা করব ।"
কবে থেকে সমঝোতার বল গড়ানো শুরু ?
সৃঞ্জয় বলছেন, "দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার এই কথাটা অনেকদিন ধরেই চলেছে । আমি একটা পয়েন্ট নিয়ে বলেছি । দেবাশিস দা একটা পয়েন্ট বলেছে । টুবলাই (শৌমিক বসু) বলেছে । এভাবেই রফাসূত্র সামনে এসেছে ।"
মোহনবাগান নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক প্রভাবের কথা সামনে এসেছে । বিষয়টি কথার প্যাঁচে আড়াল করার চেষ্টা করলেন মোহনবাগানের নতুন সভাপতি হতে চলা দেবাশিস দত্ত । বললেন, "মোহনবাগান ক্লাব সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান । মোহনবাগান ক্লাব সমাজের অংশ । সব মানুষই কিছু না কিছু ভাবে উদ্যোগ নিয়েছিল । রাজনৈতিকভাবে দেখতে চাই না । একসঙ্গে ব্যবসা করি । সবাই মোহনবাগানী ।"
সিপিএম ঘনিষ্ঠের বাদ পড়া প্রসঙ্গে :
বাইশ জনের যে কমিটি মনোনয়ন জমা পড়েছে তাতে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় ঘোষের (বাপ্পা) নাম নেই । তাঁর বাদ পড়ার পিছনে রাজনৈতিক অঙ্ক কাজ করেছে বলা হচ্ছে । বিষয়টি মানতে রাজি নন দেবাশিস দত্ত । বলছেন, "বাদ কেউ যায়নি ।"
প্রায় একই সঙ্গে নতুনভাবে সচিব পদে বসতে চলা সৃঞ্জয় বসু বলছেন, "2018 সাল পর্যন্ত এই মোহনবাগান দলের অংশ ছিল বাপ্পা । মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলে সিপিএম-তৃণমূল দেখা উচিত নয় ।"
তাহলে টুটু বসুর জমানার বিদায় মোহনবাগানে ?
দেবাশিস দত্ত বলছেন, "টুটুদা চিরকাল অভিভাবক । টুটুদা পদে থাকে কী না থাকে তাতে আসে যায় না ।"
কার্যকরী কমিটি :
সাধারণ সচিব - সৃঞ্জয় বসু
সহকারী সচিব - সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়
কোষাধ্যক্ষ - সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়
অর্থ সচিব - সুরজিৎ বসু
মাঠ সচিব - শাশ্বত বসু
ফুটবল সচিব - স্বপন বন্দ্যেপাধ্যায়
ক্রিকেট সচিব - সম্রাট ভৌমিক
হকি সচিব - শ্যামল মিত্র
অ্যাথলেটিক্স সচিব - পিন্টু বিশ্বাস
টেনিস সচিব - সিদ্ধার্থ রায়
যুব ফুটবল সচিব - শিল্টন পাল