কলকাতা, 12 এপ্রিল: বন্ধুত্বের আড়ালে আইএসএল ফাইনালের উত্তাপ ছড়ালেন হোসে মোলিনা এবং জেরার্ড জারাগোজা ৷ শনিবার সন্ধ্যায় আইএসএল ফাইনালে মুখোমুখি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং বেঙ্গালুরু এফসি। লিগ টেবিলে একনম্বর এবং তিন নম্বরে থাকা দুই দলের আইএসএল কাপ জয়ের দ্বৈরথ।
যুবভারতীতে আইএসএল ফাইনাল ঘিরে পারদ চড়তে শুরু করেছ । টিকিটের হাহাকার তুঙ্গে। চলতি মরশুমে ইতিমধ্যে দুই দল পরস্পরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছিল। ডুরান্ড কাপে নির্ধারিত সময়ে দুই দলের লড়াই 2-2 গোলে শেষ হলে টাইব্রেকারে বাজিমাত করছিল সবুজ-মেরুন ৷ আইএসএলে ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরু এফসি জিতলেও কলকাতায় মোহনবাগান বাজিমাত করেছিল। এবার সেই যুবভারতীতেই আইএসএল ফাইনাল।
ফাইনালের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মোহনবাগান হোসে মোলিনা বলেনন, “আগে কি হয়েছে, আমি জানি না। সেদিকে তাকাচ্ছি না। আমি একশো শতাংশ উজার করে দিয়ে আইএসএল কাপ জিততে চাই । এটাই দলের কাছে বাড়তি মোটিভেশন।” প্রায় একই সঙ্গে যোগ করেন, “আমরা সবার ওপরে রয়েছি । এটাই ছেলেদের মোটিভেট করবে ৷ চলতি মরশুমে আমাদের আরও একটি ট্রফি জয়ের জন্য ঝাপাতে হবে। প্রতিপক্ষ হিসেবে বেঙ্গালুরু এফসি শক্তিশালী। আমরা ওদের সম্মান করি।”
ফাইনালের আগে পুরো দল ফিট বলে জানানো হয়েছে সবুজ-মেরুনের তরফে। অর্থাৎ মনবীর সিংকে প্রথম থেকে খেলানোর সম্ভাবনা বাড়ছে ৷ গতবছরও আইএসএল ফাইনালে উঠলেও কাপ জয় হয়নি। মোলিনা জানান, জয় ছাড়া তাঁদের মাথায় অন্য কিছু নেই। চলতি আইএসএলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের দাপুটে পারফরম্যান্সের নেপথ্যে স্ট্রাইকার ছাড়াও মিডফিল্ডার এবং ডিফেন্ডারদের নিয়মিত গোলের মধ্যে থাকা। যা প্রতিপক্ষকে সবসময় অস্বস্তিতে রেখেছে । বিশেষ করে অধিনায়ক শুভাশিস বসু একটা সময় গোল দেওয়ার ক্ষেত্রে জেমি ম্যাকলারেনকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিলেন। রক্ষণ সামলে শুভাশিসের গোল করার মুন্সিয়ানার প্রশংসায় সবুজ-মেরুন হেডস্যর।

অধিনায়ক হিসেবে লিগ শিল্ড জয়ের পরে আইএসএল কাপ জয়ের হাতছানি। প্রথমবার ক্লাবের বিরল কৃতিত্বের নজির সৃষ্টির আগে শুভাশিস বলেন, "টানা তিন বছর তারা ফাইনাল খেলছে দল । এবার খালি হাতে ফিরতে রাজি নয়। তার জন্য নিঙড়ে দিতে চাই ।"
প্রতিপক্ষ শিবিরে আত্মবিশ্বাসী মনোভাবের পাল্টা হিসেবে হুঙ্কার বেঙ্গালুরু এফসি-র। কোচ জেরার্ড জারাগোজা অধিনায়ক গুরপ্রীত সিংকে পাশে নিয়ে বলেন, “মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে খেলা সবসময়ই চ্যালেঞ্জের । এইবছর ওরা দলগতভাবে দারুণ ফুটবল উপহার দিয়েছে ৷ আমরা তিন বছর ওদের বিরুদ্ধে খেলেছি । কলকাতা আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে গিয়েছে । ফাইনালে আমরা সেরাটা নিঙড়ে দিয়ে জয় তুলে নিতে চাই ।”

গত বছরের 0-4 গোলে পরাজয়ের স্মৃতি এখনও টাটকা বেঙ্গালুরু এফসি-র সাজঘরে ৷ প্রতিপক্ষ দলে ম্যাকলারেন, জেসন কামিন্স, গ্রেগ স্টুয়ার্টের মত ফুটবলার থাকলেও বেঙ্গালুরু কোচের নীল নকশায় সবুজ-মেরুন ব্রিগেডকে থামানো ছক ৷ কোচের কথার সুর অধিনায়ক বেঙ্গালুরু এফসি অধিনায়ক গুরপ্রীত সিংয়ের গলায়। ভারতীয় ফুটবলে যাত্রা কলকাতা থেকেই শুরু করেছিলেন তিনি। সেকথা মাথায় রেখে গুরপ্রীত জানান, যে কোনও চ্যালেঞ্জ সামলাতে তাঁরা তৈরি।

দুই দলের তারকার ভিড়ে আরও একজন অক্লান্ত নেতা রয়েছেন। তিনি সুনীল ছেত্রী। চল্লিশেও তাঁর পারফরম্যান্সে মরচে পড়েনি ৷ তাঁর স্কোরিং বুট এখনও ঝলকায় ৷ বিদায় বেলায় সুনীল যে জ্বলে উঠতে মরিয়া, তা বলাই যায়। তাই, বন্ধুত্বের আড়ালে আইএসএল ফাইনালের উত্তাপ ছড়াল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট এবং বেঙ্গালুরু এফসি।