কলকাতা, 15 মে: যা ছিল আড়ালে, তা চলে আসছে প্রকাশ্যে। মোহনবাগান ক্লাবের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে গোষ্ঠ পাল সরণিতে এখন আশ্চর্য 'বেনীআসহকলা' ৷ ভোটারের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হলেও মোহনবাগান নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার অপেক্ষায় ময়দান। ইতিমধ্যে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিটির প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম রায় ইঙ্গিত দিয়েছেন ভোট হতে পারে পাঁচ দফায়। যা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ৷
তবে ভোটের তারিখ ঘোষণার মাসদু'য়েক আগে থেকেই ভোটারদের ((খসড়া অনুযায়ী 6,818 জন) মন পেতে লড়াইয়ে যুযধান দু'পক্ষ ৷ বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্তের নেতৃত্বাধীন শাসকগোষ্ঠী বনাম সৃঞ্জয় বসু নেতৃত্বাধীন প্রতিপক্ষ গোষ্ঠী যেভাবে রাজ্যজুড়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছে, তা নজিরবিহীন। প্রসঙ্গত, টুটু বসু মোহনবাগানের সভাপতি পদ ছেড়েছেন এরইমধ্যে ৷ যদিও তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার বিষয়ে একমত হতে পারেনি মোহনবাগানের বিদায়ী কার্যকরী কমিটি। টুটু বসু অবশ্য আসন্ন নির্বাচনে পুত্র সৃঞ্জয়ের (টুম্পাই) পক্ষে রয়েছেন বলে ঘোষণা করেছেন ৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, সৃঞ্জয় বসুকে ভোট দেওয়ার অর্থ টুটু বসুকেই ভোট দেওয়া।
যা পরিস্থিতি, তাতে উত্তপ্ত মোহনবাগান। উত্তাপ বেড়েছে কারণ রাজ্যের শাসক দলের প্রত্যক্ষ 'ওরা-আমরা' মানসিকতা। ফলস্বরূপ ভোট নিয়ে পাড়ায়-পাড়ায় তৃণমূলের মধ্যেই গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা। বিদায়ী সচিব দেবাশিস দত্ত বলছেন, "রাজনীতি করা তো অন্যায় নয়। সমাজের বাকিদের মতো তাই তাঁরাও মোহনবাগানের সাফল্যর জোয়ারে গা ভাসিয়েছেন। যাঁরা প্রচারে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা বেশিরভাগই সদস্য।" বিরোধী শিবিরের সৃঞ্জয় বসুর প্রতিক্রিয়া, "ক্লাবের সাফল্যের আলোয় আমরা সকলেই আনন্দিত গর্বিত। তাই আইএসএলের সাফল্যে যোগ দিয়েছিলাম। তবে ময়দানের রাজনীতিতে রাজ্যের শাসক-বিরোধীদের যোগদান নতুন নয়। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলে আগেও বহু রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁরা সদস্য বা সমর্থক হিসেবে ক্লাব নির্বাচনে নেমেছিলেন। এখনও নামছেন। এ নিয়ে মেরুকরণ করা ঠিক নয়।"
আগামী 8 জুন হাওড়ায় টুটু বসু প্রথমবার প্রচারে নামছেন সশরীরে। যা নিয়ে প্রচার চলছে জোরকদমে। শাসকের 'আমরাই মোহনবাগান'-এর পাল্টা 'তোমাকেই চাই' ব্যানারে ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে গোটা পঞ্চাশেক সভা। ট্রফিজয়ের সেলিব্রেশন কিংবা খুঁটিপুজোর আড়ালেও চলছে নির্বাচনী প্রচার। সেখানে দু’পক্ষের হয়েই মঞ্চে দেখা যাচ্ছে তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়ক, কাউন্সিলর এবং স্থানীয় নেতাদের ৷ খিদিরপুরে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ঘনিষ্ঠ তিন কাউন্সিলর যেমন ভোটারদের ভোট দিতে বলছেন বিরোধী গোষ্ঠীকে। পাশাপাশি ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের নেতৃত্বে বহু কাউন্সিলর শাসক গোষ্ঠীর হয়ে উত্তর কলকাতায় সক্রিয়। হাওড়ায় মন্ত্রী অরূপ রায়কেও দেখা গিয়েছে শাসকের অনুষ্ঠানে। তিনি বর্তমান শাসক গোষ্ঠীর কার্যকর কমিটির সদস্যও বটে।
প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাদা স্বাধীন মল্লিক উত্তর 24 পরগনার তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের কাজে লাগিয়ে সেখানকার ভোট বিরোধী বাক্সে ফেলতে মরিয়া ৷ ভোট আবার নিজেদের বক্সে আনতে নৈহাটির সাংসদ পার্থ ভৌমিকের লোকজনদের সাহায্য নিচ্ছে শাসক গোষ্ঠী। এক্ষেত্রে পার্থ-জ্যোতিপ্রিয় একজোট বলে শোনা যাচ্ছে। মোহনবাগানের সবচেয়ে বেশি ভোট উত্তর কলকাতা এবং হাওড়ায়। উত্তর কলকাতায় অতীন ঘোষ যেমন শাসকের হয়েকাজ করছেন, তেমন সৃঞ্জয় বসুর হয়ে ভোট পরিচালনার দায়িত্বে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় ঘোষ ওরফে বাপ্পা। পাড়ায়-পাড়ায় লোকাল কমিটিকে নামিয়েছেন তিনি। তবে পুরোটাই করছেন বক্তিগত পরিচিতি কাজে লাগিয়ে ৷ ক্লাবের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর হয়ে প্রচারে প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য। যিনি আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্লাব ডায়মন্ড হারবার এফসির সচিব। প্রসূন ব্যানার্জী ক্লাবে যাতায়াত করছেন। তিনি হাওড়ায় সক্রিয়। তিনিও জল মাপছেন। তবে হাওড়ায় এখনও একাধিপত্য টুটু বসুর।
শিল্টন পাল, শিশির ঘোষদেরও দেখা যাচ্ছে দু'পক্ষের নির্বাচনী সভায়। ইতিমধ্যেই সৃঞ্জয় বসু চোদ্দ দফার ইস্তেহার প্রকাশ করেছেন। দেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি। ইস্টবেঙ্গলের তথ্যচিত্র প্রকাশ অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের উপস্থিতিতে মঞ্চে প্রথমে ডাকা হয়েছিল সৃঞ্জয় বসুকে। পরে দেবাশিস দত্তকে। আবার কলকাতার দুর্গাপূজো কমিটিগুলোর মধ্যে আড়াআড়ি ভাগ করিয়েছেন মোহনবাগান শাসকদলের কার্যকরী কমিটির এক সদস্য। জল মাপছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। টুটু বসুদের সমালোচনায় অঞ্জন মিত্র কন্যা ঝুম্পাই মিত্র চৌবে। সবমিলিয়ে মোহনবাগানের শাসক-বিরোধীরা বাদ রাখছেন না কিছুই ৷ সবমিলিয়ে বাগান নির্বাচনে মিশে যাচ্ছে রাজনীতির সাত রং ৷