কলকাতা, 9 জুন: কয়েক বছর আগেও ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের তুলনায় পিছিয়ে থাকা উজবেকিস্তান, জর্ডানের মত দেশগুলি সম্প্রতি বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেছে ৷ পক্ষান্তরে যেন আরও অতলে যাচ্ছে ভারতীয় ফুটবল ৷ অবস্থা এতটাই খারাপ যে, চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়া সুনীল ছেত্রীকে অবসর ভেঙে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে ৷ এর পিছনে এক এবং একমাত্র দায়ী করা যেতে পারে দেশের ফুটবল পরিকাঠামোকে ৷ যার দায়ভার বর্তায় অবশ্যই ফেডারেশনের উপর ৷ এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য যে, ভারতের ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেশের ফুটবল লিগগুলোতে রেফারিংয়ের জঘন্য মানকেও অনেকাংশে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা ৷
রেফারিংয়ের জঘন্য মান যেন দেশীয় ফুটবলে পরিকাঠামো অভাবেরই পরিচায়ক ৷ দেশের সর্বোচ্চ লিগ আইএসএলে খারাপ রেফারিংয়ের শিকার হয়ে ফেডারেশনের কাছে পাতার পর পাতা চিঠি লিখেছে বহু ক্লাব ৷ দাবি জানানো হয়েছে ভিডিয়ো অ্য়াসিস্ট্যান্ট রেফারির ৷ কিন্তু উদাসীন ফেডারেশন ৷ ভিএআর প্রযুক্তি ব্যয়বহুল অজুহাতে দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে তাঁরা ৷ তাহলে উপায় ? VAR-এর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মত একটি প্রযুক্তি রূপায়ণ করে এআইএফএফের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ৷ আরও ভালো করে বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় অধ্য়াপক এবং ছাত্র ৷ যে প্রযুক্তির পোশাকি নাম 'অ্য়াডভান্সড রিভিউ টেকনোলজি' বা ART ৷
এর প্রথম ধাপে কেবল গোললাইন প্রযুক্তি নিয়েই কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক প্রণিবেশ মণ্ডল এবং আশিস পাল ৷ ভার প্রয়োগে অক্ষমতার মঝে যা ভারতীয় ফুটবলে টাটকা বাতাস আনতে প্রস্তুত ৷ উল্লেখ্য, গত একবছর ধরে রিসার্চের পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীদের গবেষণালব্ধ এই নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে বল গোললাইন অতিক্রম করেছে কি না, তার অনেকাংশে নির্ভুল নির্ণয় সম্ভব। আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত বলেছেন, কলকাতা লিগের প্রিমিয়র ডিভিশনে সুপার সিক্সের খেলায় এই প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হবে। এই প্রযুক্তি সফল হলে আগামিদিনে অফসাইড, পেনাল্টির ক্ষেত্রেও কাজ শুরু হবে ৷ বিশ্ববিদ্যালয়কৃত এই প্রযুক্তি অত্যন্ত কম খরচসাপেক্ষ ৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরও ফুটবল সংক্রান্ত এটাই প্রথম কাজ।
ইতিমধ্যে ফিফারও দ্বারস্থ হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্য়াপক প্রণিবেশ মণ্ডল বলছেন, "ভার টেকনোলজির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য আমরা এই অ্যাডভান্সড রিভিউ টেকনোলজির উদ্ভাবন করিনি। ফুটবলের সার্বিক সাহায্যই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। প্রথম ধাপে আমরা গোললাইন বিতর্ক দূর করার কাজটি নির্ভুল করতে চাই। এদেশের ফুটবলের নিরিখে আর্ট বিরাট প্রভাব ফেলতে পারবে বলেই বিশ্বাস ৷ আমরা পুরো কাজটি দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে, খরচ সাধ্যের মধ্যে রেখে করেছি ৷ ভিএআর উন্নত টেকনোলজি। আমাদের প্রযুক্তিতে সেই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা গেলে একই ফল দেবে।"

ফিফার অনুমোদন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "ফিফা আমাদের কিছু মানদণ্ড বেধে দিয়েছে। আমরা তা পূরণ করতে পারব বলে বিশ্বাস করি। সেই মেধা, প্রযুক্তি আমাদের রয়েছে ৷" এই প্রযুক্তির সঙ্গে জুড়ে থাকা আরেক অধ্যাপক আশিস পালের কথায়, "এই (আর্ট) প্রযুক্তি কেবলমাত্র গোললাইন বিতর্কই দূর করবে না। ভবিষ্যতে ফুটবল মাঠের যে কোনও বিতর্ক নিরসনে সাহায্য করবে। শুধু ম্যাচ নয়, ক্লাবগুলো অনুশীলনেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। কোথায় কী ভুল হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করতে পারবে। ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিতে এই প্রযুক্তি তৈরি করেছি আমরা ৷ সবচেয়ে আগে যে ব্যাপারটি আমরা এক্ষেত্রে মাথায় রেখেছি তা হল খরচ।"
সবমিলিয়ে VAR-কে টেক্কা দেওয়া নয়, বিকল্প পথের সন্ধান দিতে দেশীয় ফুটবলের উন্নতিতে হাত বাড়িয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। আইএফএ রাজি। ফিফার লক্ষণরেখা পার করার অপেক্ষায় ফুটবল পাগল একদল বাঙালি গবেষক। যাদবপুরের সৃষ্টি কি ফের জায়গা করে নেমে বিশ্বের মানচিত্রে ? উত্তর দেবে সময় ৷