কলকাতা, 30 এপ্রিল: বৈভব সূর্যবংশীর বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশীর কলার টিউনটা ভীষণ সুন্দর। যা তাঁর ছেলেকে নিয়ে গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় তৈরি হওয়া রূপকথার যথার্থ ট্যাগলাইন। "তুঝে সূরজ কাহু ইয়া চন্দা/ তুঝে দীপ কাহু ইয়া তারা/ মেরা নাম করেগা রোশন/ জাগ মে মেরা রাজ দুলারা।" 35 বলে করা বৈভবের সেঞ্চুরি আইপিএলে ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম। নতুন প্রতিভার অন্বেষণের খবর ছিল। কিন্তু এহেন ব্য়াটিং বিস্ফোরণ চমকে দিয়েছে ক্রিকেটবিশ্বকে। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে খেলার সময় বৈভবের প্রতিভার সন্ধান পেয়েছিলেন ভিভিএস লক্ষণ। সম্ভাবনাময় কিশোরকে দলে নেওয়ার কথা রাজস্থান রয়্যালস কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে জানান 'ভেরি ভেরি স্পেশাল'। লক্ষ্মণের কথামতই গতবছর নিলামে বৈভবকে দলে নেয় রয়্য়ালস শিবির ৷ এরপরেরটা ইতিহাস ৷
বৈভবের কোচ মণীশ ওঝা বলছেন, "গত দু'বছর ধরে লক্ষ্মণ ওকে গড়ে তুলেছেন। এখন বৈভব রাহুল দ্রাবিড়ের অধীনে আরও পরিশীলিত।" তবে কিশোর অ্য়াথলিটদের নিয়ে ক্রীড়াবিশ্বে বারবার আইনি সমস্যা তৈরি হয়েছে ৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যায় স্পেনের ইউরো জয়ের নায়ক লামিন ইয়ামালের কথা। জার্মানিতে শিশুশ্রম আইনের কড়াকড়িতে সতেরোর কিশোরকে 2024 ইউরোতে খেলিয়ে সমস্যায় পড়েছিল স্পেন। প্রতিশ্রুতিমান এই মিডফিল্ডারকে খেলালেও অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময়ের আগেই তুলে নিতে বাধ্য হতেন স্পেনের কোচ। জার্মান শ্রম আইনে কিশোরদের রাত আটটার পর কোনও কাজে লাগানো যায় না। ইয়ামালকে ফুটবলার হিসাবে কয়েকঘণ্টা ছাড় দেওয়া হয়েছিল ৷ তারপরেও যদি মাঠে থাকতেন ইয়ামাল, তাহলে 30 হাজার ইউরো (ভারতীয় মুদ্রায় 30 লক্ষ টাকা) জরিমানা দিতে হত স্পেনের ফুটবল সংস্থাকে।
শিশুশ্রমের ক্ষেত্রে ভারতীয় আইন কি বলছে: ভারতের শ্রম আইনেও কিশোরদের (14-18 বছর) সন্ধে সাতটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত কোনওরকম কাজে নিযুক্ত করাই বেআইনি। ব্যতিক্রম হিসাবে রয়েছে পারিবারিক ব্যবসা, বিনোদন জগত (বিশেষ করে সিনেমায় চাইল্ড আর্টিস্ট হিসাবে অভিনয়) ইত্যাদি। যদিও খেলার ক্ষেত্রে তেমন কিছু বলা নেই। বয়সভিত্তিক যে কোনও স্পোর্টসেই কিশোররা অংশগ্রহণ করে। সেখানে পারিশ্রমিক হিসাবে না-হলেও তাদের পকেটমানি গোত্রে কিছু দেওয়া হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময়ই সেগুলো তাদের বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়াটাই দস্তুর।
এখন তাই প্রশ্ন বৈভব সূর্যবংশীর ক্ষেত্রে কী হবে? তাঁর ব্যাটিং বিক্রমের প্রশংসা এখন আসমুদ্র-হিমাচলে। তাঁর ব্যাটিং নৈপুণ্যের প্রশংসায় রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোর। তিনি বলছেন, "দুর্দান্ত একটা ইনিংস। গত কয়েক মাস ধরে নেটে বৈভবকে খেলতে দেখেছি। আমরা জানি ও কী করতে পারে। কিন্তু এত দর্শকের সামনে খেলাটা সহজ নয়। শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ, ম্যাচের চাপ সামলে এই শতরান করাটা বেশ কঠিন। বৈভবকে তাঁর কৃতিত্ব দিতেই হবে।"
Moment tha bhai! 💗 pic.twitter.com/qvSWuOPWIb
— Rajasthan Royals (@rajasthanroyals) April 29, 2025
আইপিএল নিলামে ক্রিকেটারদের নেওয়া হয় তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। তাঁদের মূল্য বা পারিশ্রমিক কাজের নৈপুণ্যের ভিত্তিতে ঠিক হয়। রাজস্থান রয়্যালস অনূর্ধ্ব-14 বৈভবের জন্য নিলামে এক কোটির বেশি টাকা খরচ করেছিল। যার মূল্য হয়তো আগামীতেও এভাবে চোকাবেন চোদ্দর কিশোর ৷ রাঠোর আরও বলেন, "বৈভব সাংঘাতিক প্রতিভাধর। টেকনিক্যালিও দুর্দান্ত। বল মারার সময় একটা বাড়তি শক্তি তৈরি করে। সোমবারও সেটা দেখিয়ে দিয়েছে। বৈভবের এই ইনিংস নিয়ে অনেক কথা বলা যায়। 14 বছরের একটা ছেলে এভাবে খেললে অবাক তো হতেই হবে। চার মাস আগে ট্রায়ালে দেখেছিলাম ওকে। সেই সময় থেকেই জানি ও বাকিদের চেয়ে আলাদা। আমাদের উপর দায়িত্ব ছিল ওকে এই মঞ্চের জন্য প্রস্তুত করা। কৃতিত্ব বৈভবের। ও চাপের মুখেও দারুণ মানসিক কাঠিন্য দেখিয়েছে। দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছে।"
সবমিলিয়ে যা বাধাহীনভাবে জার্মানিতে পারেননি ইয়ামাল, ভারতে তা নিশ্চিন্তেই পারলেন বিহারের তাজপুরের ডঃ মুক্তেশ্বর সিনহা মডেস্টি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র বৈভব। চরম ব্য়স্ততার মধ্যেও বাবা সঞ্জীব রঘুবংশী টেলিফোনে এক লাইনে বলেন, "দিওয়ালি ছয় মাস আগেই চলে এসেছে।" অর্থাৎ, যেদিন নিলামে রাজস্থান রয়্য়ালস তাঁকে ডেকে নিয়েছিল ৷ তাঁর এই ছোট্ট উত্তর আদতে ক্রীড়া প্রতিভার অসাধারণ উত্তরণের স্মারক। ইয়ামাল থেকে বৈভব, প্রতিভার সামনে আইনের কচকচানি বড্ড ক্লিশে হয়ে যায়।