কলকাতা, 16 মার্চ: সোমবার বিধানসভায় হুমায়ুন কবীরের ভাগ্য নির্ধারণ হতে চলেছে । দল তাঁকে নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ৷
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয় । বিজেপি নেতার বক্তব্য ছিল, তাঁদের দল ক্ষমতায় এলে তৃণমূলের মুসলিম বিধায়কদের বিধানসভা থেকে চ্যাংদোলা করে বের করে দেওয়া হবে । আর তাঁর এই মন্তব্যের পরই ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর সরব হন এবং বলেন, "শুভেন্দু অধিকারীকে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না ।" এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা, যা এখন তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেও অস্বস্তি তৈরি করেছে ।

এই পরিস্থিতিতে সোমবার বিধানসভায় ভাগ্য পরীক্ষা হুমায়ুন কবীরের । ইতিমধ্যেই তাঁকে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে দল এবং তিনি তার জবাবও দিয়েছেন । তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি তাঁর অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও সরবেন না । জাতি ও ধর্মের প্রশ্নে তাঁর অবস্থান দলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এই বিধায়ক । তিনি জানিয়েছেন, দলের সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, তিনি নিজের অবস্থানে অনড় থাকবেন ।
অন্যদিকে, যত সময় এগোচ্ছে এবং নির্বাচন যত কাছে এগিয়ে আসছে, ততই বাংলার রাজনীতিতে ধর্মকে কেন্দ্র করে মেরুকরণের পরিস্থিতি স্পষ্ট হচ্ছে । শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের বিরুদ্ধে তৃণমূলের মুসলিম নেতৃত্বের একাংশ সরব হলেও, দল এই অবস্থানকে সমর্থন করছে না । হুমায়ুন কবীর, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী-সহ তৃণমূলের মুসলিম নেতাদের কড়া প্রতিক্রিয়ার ফলে এই ইস্যুতে রাজনৈতিক বিভাজন আরও প্রকট হয়ে উঠছে ।
তৃণমূলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন এবং সোমবার বিধানসভায় হুমায়ুন কবীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত হতে পারে । যদিও পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি নিজে কেবলমাত্র দলের নির্দেশ পালন করছেন ।
এই পরিস্থিতিতে, রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে, তাহলে তৃণমূল কি হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করব ? নাকি মুসলিম ভোটব্যাংকের সমীকরণ মাথায় রেখে তাঁকে সতর্ক করেই ছেড়ে দেবে ? পাশাপাশি, বিজেপি কি এই ইস্যুকে সামনে রেখে নিজেদের মেরুকরণ রাজনীতিকে আরও তীব্র করবে ?
রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সোমবার বিধানসভায় যা ঘটবে, তা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক গতিপথ অনেকটাই নির্ধারণ করবে । এই ধর্ম-রাজনৈতিক বিতর্কের পরিণতি কোন দিকে যায়, সেদিকেই নজর থাকবে গোটা রাজ্যের ।