
অপরাজিতা বিল আটকে ধর্ষকদের পরোক্ষ সমর্থন কেন্দ্রের, তোপ তৃণমূলের
দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ সেই নিয়ে বিজেপির আক্রমণের জবাবে পালটা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগল তৃণমূল৷

Published : October 12, 2025 at 3:58 PM IST
কলকাতা, 12 অক্টোবর: দুর্গাপুরে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় শোরগোল পড়েছে রাজ্যজুড়ে। এই নিয়ে বিরোধীরা তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ শুরু করেছে৷ রাজ্যে পর পর নারী নির্যাতনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কাঠগড়ায় তুলেছে বিরোধীরা৷ তবে চুপ করে বসে নেই শাসক দল৷ তারাও পালটা তোপ দেগেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে৷ তৃণমূলের দাবি, অপরাজিতা বিল আটকে রেখে ধর্ষকদের পরোক্ষে সমর্থন করছে কেন্দ্রীয় সরকার৷
উল্লেখ্য, গত বছর 9 অগস্ট সকালে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় এক চিকিৎসক পড়ুয়ার মৃতদেহ৷ তদন্তের পর জানা যায় যে ওই পড়ুয়াকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে৷ এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ারকে আমরণ কারাবাসের নির্দেশ দেয় আদালত৷
আরজি কর ধর্ষণ-কাণ্ডের পর উত্তাল হয়ে ওঠে কলকাতা৷ আন্দোলন শুরু করেন চিকিৎসকরা৷ পথে নামে নাগরিক সমাজও৷ সেই সময় বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কড়া আইন করার জন্য অপরাজিতা বিল পাশ করানো হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে৷ সেই বিল এখনও আইনে রূপান্তরিত হয়নি৷
দুর্গাপুরে কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার পর বিরোধীরা যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব, সেই সময় ওই বিলকেই হাতিয়ার করে পালটা তোপ দাগল বাংলার শাসক দল৷ এই নিয়ে তৃণমূলের সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করা হয়েছে৷ সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের জন্য কঠোরতম নিন্দা এবং কঠোরতম আইন প্রণয়নের প্রয়োজন। তবুও নরেন্দ্র মোদির সরকার কর্তব্যের চেয়ে বিলম্বকে বেছে নিয়েছে। অপরাজিতা ধর্ষণ বিরোধী বিল প্রস্তাবিত হওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পর, বিজেপি কেন্দ্রে তা আইনে রূপান্তরিত করার জন্য কিছুই করেনি। এটা রাজনৈতিক পছন্দের মারাত্মক পরিণতি৷’’
ওই পোস্টে আরও লেখা হয়েছে, ‘‘যখন ক্ষমতার বলয় নিয়ন্ত্রণকারী রাষ্ট্র পদক্ষেপ করতে অস্বীকার করে, তখন তা অপরাধীদের অপরাধ করার উৎসাহ যোগায়৷ সেই নীরব সমর্থন, সম্মতির সমান নীরবতা, সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত আমাদের কন্যা, বোন এবং মায়েদের উপর নির্যাতনে উৎসাহিত করেছে। প্রকৃত সংস্কারকে বাধা দিয়ে ‘নারী সুরক্ষা’ সম্পর্কে হইচই করা আসলে রাজনৈতিক দেউলিয়া হয়ে যাওয়াকে প্রকাশ করে৷’’
ওই পোস্টের সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যও জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ গত 28 অগস্ট কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়৷ সেই কর্মসূচির মঞ্চ থেকে এই বিল নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা৷ সেই সংক্রান্ত ভিডিয়ো সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে বাংলার শাসক দল৷
সেই ভিডিয়োতে অভিষেককে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমরা সেদিনও বলেছিলাম যে আমরা চাই দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক৷ আমাদের রাজ্যের সরকার মন্ত্রিসভায় পাশ করিয়ে, বিধানসভায় পাশ করিয়ে অপরাজিতা বিল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছিল৷ যাতে এরকম নারকীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি বাংলা-সহ দেশের অন্য কোনও জায়গায় না-ঘটে৷ আজকে একবছর হয়ে গিয়েছে৷ সেই অপরাজিতা বিল বিজেপি বা আমাদের রাজ্যের রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর পরও সেই বিলে, তার অনুমোদন এখনও পাওয়া যায়নি৷’’
প্রসঙ্গত, সোশাল মিডিয়া মারফত তৃণমূল বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও শনিবার দিনভর বিজেপির নেতারা বারবার দুর্গাপুর ধর্ষণ-কাণ্ড নিয়ে সরব হয়েছেন৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “দুর্গাপুরের এই নৃশংস ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক কলঙ্ক। মহিলা কমিশন কেন নীরব? রাজ্যের নারীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।” একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার ও কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গকে ধর্ষক ও অপরাধীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল করে তুলেছেন।” তিনি স্মরণ করিয়েছেন, “আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের পর ফের দুর্গাপুরে একই রকম মর্মান্তিক ঘটনা - রাজ্যে নারীদের কোথাও নিরাপত্তা নেই। গ্রাম হোক বা শহর, কলেজ হোক বা হাসপাতাল, বিপদ সর্বত্র।”
বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “দুর্গাপুরে এই নৃশংসতার পরে রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। মানুষ দ্রুত বিচার ও জবাবদিহি চাইছেন। এই ঘটনা মমতার সরকারের ব্যর্থতার স্পষ্ট প্রমাণ।” তিনি এই ঘটনার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এই ঘটনার তদন্তে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে৷ নির্যাতিতার বয়ানও রেকর্ড করা হয়েছে৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে ফরেনসিক দল৷ রবিবার অভয়া মঞ্চের একটি প্রতিনিধি দল দুর্গাপুরে পৌঁছেছে। সংগঠনের সদস্যরা নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন এবং তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেবেন। একই সঙ্গে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদারও দুর্গাপুরে পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, “বাংলায় নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। পুলিশ ও প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রেই সংবেদনশীল ভূমিকা নিচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

