কলকাতা, 4 জুন: মঙ্গলবারই দার্জিলিংয়ের কংগ্রেস নেতা তথা মাটিগাড়ার প্রাক্তন বিধায়ক শংকর মালাকারের তৃণমূলে যোগদানের বিষয়টি একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ৷ বুধবার তৃণমূল ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘাসফুল শিবিরের পতাকা তুলে নিলেন এই বর্ষীয়ান নেতা ৷ তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এবং সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে এদিন তৃণমূল ভবনে এই যোগদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় ৷
অরূপ বিশ্বাস বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতিতে শংকর মালাকারকে দলে নেওয়া হল ৷" প্রসঙ্গত, দলবদলের আগের দিন পর্যন্ত শংকর মালাকার ছিলেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ৷ সঙ্গে এআইসিসি মেম্বারও ছিলেন ৷ তাই তাঁর যোগদানে উত্তরবঙ্গে কংগ্রেসের সংগঠনে বড় ধাক্কা হতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে ৷

তবে, শংকর মালাকারের দলবদল নিশ্চিত জেনে এদিন তৃণমূলে যোগদানের আগেই প্রদেশ কংগ্রেস থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁকে বহিষ্কার করা হয় ৷ অবশ্য এ প্রসঙ্গে শংকর জানান, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁকে বহিষ্কারের আগেই মঙ্গলবার রাতেই সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন ৷ ফলে কংগ্রেসের তরফে এই বহিষ্কার অর্থহীন ৷
দলবদল নিয়ে শংকর মালাকার বলেন, "উত্তরবঙ্গে বিজেপি কখনও আলাদা রাজ্য গোর্খাল্যান্ড, কামতাপুরী ও পৃথক উত্তরবঙ্গের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ৷ দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গের সহজ সরল মানুষগুলিকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছে ৷ এই অবস্থায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে কংগ্রেসে থেকে লড়াই করা যাবে না ৷ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে উত্তরবঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব ৷ সেই কারণেই এই দল বদল ৷

একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, "ক্ষমতা না-থাকলে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়া যায় না ৷ বিধায়ক হিসাবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই আমি এ কথা বলছি ৷ প্রদেশ কংগ্রেস অযোগ্য ৷ এই প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে দিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয় ৷ সেই জায়গা থেকেই দলবদল জরুরি ছিল ৷"

উল্লেখ্য, এ দিন দুপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার সাংবাদিক বৈঠক করে শংকর মালাকারকে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস কমিটির সভাপতি পদ থেকে অপসারণের বিষয়টি জানান ৷ একই সঙ্গে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের রাজনৈতিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে ৷

শুভঙ্কর সরকার বলেন, "সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির তরফে নতুন কোনও নির্দেশিকা না-আসা পর্যন্ত, এই মুহূর্ত থেকে নতুন কমিটিই দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সমস্ত কাজকর্ম পরিচালনা করবে ৷" দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের আহ্বায়ক করা হয়েছে সুবীন ভৌমিককে ৷ তিনজনকে সহ-আহ্বায়ক করা হয়েছে ৷ তাঁরা হলেন অমিতাভ সরকার, জীবন মজুমদার এবং অলোক চক্রবর্তী ৷
শংকর মালাকারের দলবদলের প্রভাব 'ইন্ডিয়া' ব্লকে পড়বে কি, যার জবাবে অরূপ বিশ্বাস বলেন, "আমরা কোনও দল ভাঙাচ্ছি না ৷ যাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে, আমরা তাঁদের বিষয়েই পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি ৷ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কারও জোট নেই ৷ কাজেই এর প্রভাব জোটে পড়তে পারে এমন সম্ভাবনা কম ৷