জলপাইগুড়ি, 8 এপ্রিল: 2026 সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট ৷ এখনও বাকি প্রায় বছরখানেক ৷ তা সত্ত্বেও পৃথক রাজ্যের দাবি আবার মাথাচাড়া দিল উত্তরবঙ্গে ৷ এবার সরব হয়েছেন গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্য়াসোসিয়েশনের (জিসিপিএ) সাধারণ সম্পাদক বংশীবদন বর্মন ৷ তিনি পৃথক কোচবিহার রাজ্যের দাবি তুলেছেন ৷ আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবি পূরণ করলে বিজেপিকে সমর্থনের কথা এখন থেকেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ৷
কিন্তু যদি কেন্দ্রের কাছ থেকে দাবি আদায় না হয়, সেক্ষেত্রে বিকল্প পথ খোলা রাখার কথাও জানিয়েছেন বংশীবদন ৷ জিসিপিএ-র এই নেতার দাবি, রাজবংশীদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি বাঁচাতে যদি রাজ্য সরকার বড় কোনও পদক্ষেপ করে, তাহলে ভোটে তাঁরা তৃণমূলের সঙ্গেই থাকবেন ৷
জলপাইগুড়িতে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বংশীবদন বলেন, ‘‘আগামী 2026 সালে আমাদের যে রাজ্য দেবে, আমরা তাকেই ভোট দেব । বিজেপি রাজ্য দিলে আমরা বিজেপির গুণগান গাইব । যদি দিদি স্কুলে দেয়, তাহলে দিদিকে জেতাব । 2026 সালের বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের জন্য যে ভাববে আমরা তার সঙ্গে থাকব ৷’’
উত্তরবঙ্গ সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁদের বক্তব্য, এখন যেটা কোচবিহার জেলা, শুধু সেটা নিয়েই বংশীবদন রাজ্য গঠনের কথা বলছেন না ৷ তিনি উত্তরবঙ্গের একটা বড় অংশকে নিয়ে এই রাজ্য তৈরির কথা বলছেন ৷ এর মধ্যে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুরও রয়েছে ৷ কারণ, উত্তরবঙ্গের এই অংশেই মূলত রাজবংশী ভাষাভাষীর মানুষ থাকেন ৷ এতদিন তাঁরা বিক্ষিপ্তভাবে ভোট দিয়েছেন ৷ সেই অংশকে এক ছাতার তলায় এনে আন্দোলনে নামতে চাইছেন বংশীবদন ৷
সেই কারণেই এখন থেকেই তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলনে নেমে পড়েছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন । দলমত নির্বিশেষে আলাদা রাজ্যের দাবিতে এক হওয়ার বার্তা দিয়েছেন তিনি ৷ জলপাইগুড়িতে এই নিয়ে সভা হয়েছে ইতিমধ্যে ৷ আগামিদিনে অন্য জেলাতেও এই ধরনের সভা হবে ৷
রাজবংশীদের উদ্দেশ্যে সভায় অনুরোধ করে বংশীবদন বর্মন বলেন, ‘‘ভূমিপুত্র রাজবংশী বিভ্রান্ত না হয়ে দলমত নির্বিশেষে একমত হয়ে দিশা ঠিক করে ভারতভুক্তি চুক্তি মোতাবেক রাজ্য চাই । রাজবংশী ভাষা চাই৷ এই দাবিতে এগিয়ে এসো আন্দোলন শুরু করতে হবে । ভারতভুক্তি চুক্তি কার্যকরী করাই আমাদের মূলদাবি ।’’
এই গ্রেটার নেতার দাবি, 1949 সালে ভারত সরকারের সঙ্গে কোচবিহারের রাজার একটি চুক্তি হয়েছিল ৷ সেই চুক্তি অনুযায়ী কোচবিহারের ভারতভুক্তি হয় ৷ সেই চুক্তিতে কোচবিহারকে সি ক্যাটাগরির রাজ্য করার বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে ৷ তিনি চান সেই দাবিই পূরণ করুক কেন্দ্রীয় সরকার ৷
বংশীবদন বর্মন বলেন, ‘‘এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হল আমার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া । আমরা বৃহত্তর কোচবিহারের ভূমিপুত্র ৷ কোচবিহারকে সি ক্যাটাগরির রাজ্য করার চুক্তি রয়েছে । কোচবিহারের রাজা কোচবিহারের রাজ্যের জন্য চুক্তি করে গিয়েছেন । সেই মোতাবেক কোচবিহার রাজ্য হওয়া উচিত ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কিন্তু এতদিন কেউ কিছু করেনি । এর আগে কোনও সংগঠন এই ভারতভুক্তি চুক্তির দাবি তোলেনি । আমরাই তুলে ধরেছি । রাজবংশীরা কথা বললে একটা সময় বলেছে মাওবাদী-উগ্রবাদী । গুলি করে মারা হয়েছে । এই অধিকার আর চুক্তির কথা এতদিন কেউ কিছু বলেনি । তৃণমূল, কংগ্রেস, বাম কেউ কিছুই বলেনি । কোনও রাজনৈতিক দল কোচবিহার রাজ্যের চুক্তি কথা বলে না ।’’
সেই কারণে দাবি আদায়ে সকলকে এক হওয়ার কথা বলেছেন তিনি ৷ পাশাপাশি বংশীবদনের দাবি, ‘‘আমাদের ভাগ করে তারা ভোট নিচ্ছে মাত্র । 2021 সালের ভোটে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসে আকার ইঙ্গিতে বলে দিয়েছিল রাজ্য দেব । কিন্তু বিধায়ক-সাংসদ জিতলেও আমাদের কথা ভুলে গেলেন । উত্তরবঙ্গের আজ এইমসও নেই । সেটাই দিল না । উত্তরবঙ্গের এইমস দক্ষিণবঙ্গে নিয়ে গেল কেউ প্রতিবাদ করল না ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘2012 সালে রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি করল রাজ্য সরকার । তখন কিন্তু প্রতিবাদ কেউ করেনি । 2017 সালে কামতাপুরি ভাষা অ্যাকাডেমি করল । আমি বারবার বলেছিলাম রাজবংশী ও কামতাপুরি ভাষা একই, নাম আলাদা । সমস্যা মেটাতে কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির সঙ্গে মিলে 2019 সালে আমরা ভূমিপুত্র ঐক্যমঞ্চ করেছিলাম, ভেদাভেদ না থাকার জন্য । কিন্তু তা পরে বাস্তবায়িত হয়নি ।’’
তাই আলাদা-আলাদা দাবি না তুলে রাজবংশীদের এক হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন তিনি ৷ এদিকে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আশুতোষ বর্মা বলেন, ‘‘আগামীতে কী হয়, সবাই দেখবে । আজ আমাদের মানুষরা সবাই বুঝতে পারছেন না । যখন মানুষ বুঝতে পারবেন, তখন আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাবই । তাই আমরা উত্তরবঙ্গ জুড়েই সভাসমিতির কাজ শুরু করেছি । আমরা এবার আন্দোলনে নামব। মানুষকে বোঝাচ্ছি ।’’