কলকাতা, 11 এপ্রিল: শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর, বস্তিবাসীদের সংকটের সঙ্গেই বেকারত্ব, চাকরিহারাদের সমস্যা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আওয়াজ উঠবে আগামী 20 এপ্রিলের বাম ব্রিগেড সমাবেশে । চাকরি দুর্নীতির প্রতিবাদকে সামনে রেখে ব্রিগেড সফল করতে, প্রচার থেকে সমাবেশে হাজির হওয়ার ডাক দিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় । এদিন ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাংবাদিক সম্মেলনে যুবদের উদ্দেশে এই বার্তা দেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক । তাঁর সঙ্গেই ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তী ।
প্রায় 26 হাজার চাকরি হারানো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের কথা তুলে ধরে ইতিমধ্যেই পথে নেমেছে বামেরা । তবে এই ইস্যুকে শুধুই পথেঘাটে নয়, আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশেও নিয়ে যেতে চাইছে সিপিআইএম । চাকরি দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ব্রিগেড সভায় আওয়াজ তোলার ইঙ্গিত দিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ।

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে চাকরি দুর্নীতি নিয়ে তিনি একাধিক প্রশ্ন তোলেন ৷ সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির ভূমিকা নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি । মীনাক্ষীর কথায়, "যোগ্য ও অযোগ্য শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই দুটো শব্দ ব্যবহার করাটাই আমাদের কাছে বড় লজ্জার বিষয় । নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সরকার করবে, আর তাতে দুর্নীতি হলে দায় এড়াবে এটা হতে দেব না ।" শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, "দুর্নীতির টাকা একসঙ্গে খেয়ে এখন তো ঢেঁকুর তুলতে হবে ।"
মীনাক্ষীর কথায়, "দুর্নীতি হয়েছে দেশের অনেক ক্ষেত্রে । রাজ্যে দুর্নীতি প্রতিযোগিতায় নেমেছে সরকার । চক্র চালাচ্ছে রাজ্যের সরকার । স্কুল, কলেজ সিলেকশন কমিশন সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি । পরীক্ষার দিন, টাইম, খাতা দেখা, ইন্টারভিউ সব তুমি করবে আর দুর্নীতি হলে আমি কিছু জানি না । সরকারি চাকরির পরীক্ষা । সরকারের একটা নিয়োগের সহজ নিয়ম আছে । সেটা করলে এত কাণ্ড হত না । যোগ্য অযোগ্য এই দুটো শব্দ ব্যবহার রাজ্যের মানুষের কাছে লজ্জার । 100 দিনের কাজ থেকে কলেজ, স্কুল, দমকল-সহ একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি । প্রায় 22 লাখ ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল ।"
মীনাক্ষীর প্রশ্ন, "21 লাখ 74 হাজার পরীক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ হয়েছে, তার মানে একটা মাপকাঠি ছিল । সেটা কেন বলছ না । টাকার লোভে গোটা রাজ্যে বেকারদের রাস্তায় বসাল । টাকা নিয়ে ওরা অযোগ্যদের নিয়োগ করবে । আজ যাঁরা সরকারে, তাঁরা জলে আগুন লাগানো নেতানেত্রী । তাঁদের মুখে অযোগ্য কথা উঠছে কেন ? তার মানে অযোগ্য ছিল । যাঁদের অযোগ্য বলছো, তাঁরা অযোগ্য হল কী করে ? আমি সাদা খাতা দিলে তুমি পাশ করালে কী স্বার্থে ? কেউ ঘুষের টাকা নিয়ে গেলে সেটা নেওয়ার লোক ছিল নিশ্চয়ই । সরকার দেখিয়ে দিল মেধার জায়গা নেই । যোগ্যরা বিপদে । আন্দোলন করছে রাস্তায় তাঁরা । আন্দোলনকারীরা ঘুষখোরদের উপর ভরসা কেন করবে ? মুখ্যমন্ত্রী ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন নেতাজি ইনডোরে ।"
এদিন বিজেপিকেও তীব্র কটাক্ষ করে মীনাক্ষী বলেন, "রাজ্যের বিজেপির নেতারা এই চাকরিহারাদের নিয়ে হইহই করছে । দুর্নীতি নিয়ে সরব শুভেন্দু অধিকারী । 2016 সালে তুমি তো ঘুরে বেড়াতে মমতার আঁচল ধরে । জেলায় গেলে শুনতে পাওয়া যায় তখন মালদা, মুর্শিদাবাদ তোমার দায়িত্বে ছিল টাকা তোলার । তখন সেই টাকা খেয়ে এখন ঢেঁকুর তুলছো । বিরোধী দলের ভূমিকা কী ? মুকুল রায় ছিল, কৃষ্ণ কল্যাণী ছিলেন পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে, তখন কেন বলেননি ?"
মীনাক্ষী আরও বলেন, "রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার 8000 স্কুলে তালা দিয়েছে আগেই । মদের দোকান খুলিয়েছে । যাঁরা যোগ্য তাঁরা মান সম্মান নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন । রাস্তায় দাঁড়িয়ে মারপিট করে চাকরি আদায় করবেন ? এই জন্য ওঁরা শিক্ষিত হয়েছিলেন ! যাঁরা যোগ্য তাঁদের চেয়ারে ফেরত পাঠাতেই হবে । নাহলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে তছনছ হয়ে যাবে । আগে স্কুলসংখ্যা বেড়েছিল, এখন বন্ধ হচ্ছে, ছাত্রছাত্রী নেই । এরা যাচ্ছে ভিন রাজ্যে কাজ করতে । আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বারবার বাংলায় আসছেন । ওঁদের স্কুল খুলছেন । রাজ্য অনুমোদন দিচ্ছে । উত্তর থেকে পশ্চিমের জেলায় এই স্কুল বাড়ছে । উগ্রতা শেখাচ্ছে । আসলে লেখাপড়া কম হলে বেকার বাড়বে, সস্তায় শ্রম কেনা যাবে । বেগার খাটানো যাবে ।"