কলকাতা, 12 মে: 'যুদ্ধ নয়, বরং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের সমস্যার সমাধান ঘটুক । রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শান্তি ফিরুক ।'
এই দাবিতে আগামিকাল (মঙ্গলবার) শহর কলকাতায় মিছিলের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট । সেই মিছিলে সকলকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে । উল্লেখযোগ্যভাবে সেই মিছিলে যোগ দিচ্ছে সিপিআইএমএল লিবারেশন ও এসইউসিআই ।
সোমবার যৌথ বিবৃতি দিয়ে একথা স্বীকারও করে নেওয়া হয়েছে রাজ্য বামফ্রন্টের তরফে । সেখানে বলা হয়েছে, সিপিআই(এম), সিপিআই, ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি, সিপিআই (এমএল) লিবারেশন, এসইউসিআই(সি), আরসিপিআই, এমএফবি, ওয়ার্কাস পার্টি, বলশেভিক পার্টি অংশ নেবে ।
বামফ্রন্টের ওই বিবৃতিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে চলা পরিস্থিতি নিয়েই বক্তব্য পেশ করা হয়েছে ৷ সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী হামলা হতে পারে এমন খবর আগে থেকেই ছিল, তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন ? কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত রাজ্য, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে । তাই এই সব প্রশ্নের জবাব কেন্দ্রীয় সরকারকেই দিতে হবে । ভারত ও পাকিস্তান দু’টি দেশের জনগণই যুদ্ধ চায় না । তাই উভয় দেশের প্রতিনিধিদের কূটনৈতিক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে ।
পাকিস্তান যে সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা, সেটাও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ এই কাজকে বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানের উপর সর্বাত্মক চাপ দেওয়া উচিত বলেই মনে করে বামফ্রন্ট ৷ কিন্তু সেটা করতে গিয়ে দু’টি পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সংঘাত না-হওয়ায়ই ভালো বলে বামেরা মনে করে ৷ তাদের মতে, এর জেরে অনেক বড় বিপদ হতে পারে ৷
বামেদের বক্তব্য, অতীতেও সামরিক অভিযান হয়েছে ৷ তার পরও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হয়নি ৷ তাই রাজনৈতিক পথে সমাধান করা উচিত ৷ সেই কারণে সর্বদলীয় বৈঠকে বামদলগুলি সন্ত্রাসবাদ দমনে পদক্ষেপ করতে বলেছিল ৷ কিন্তু যুদ্ধের পক্ষে কোনোভাবে সায় দেয়নি ৷
বামফ্রন্টের বিবৃতিতে পহেলগাঁওয়ে হামলার প্রসঙ্গ তোলা হয়েছে ৷ ওই হামলার প্রতিবাদ যে কাশ্মীরের মানুষ করেছিলেন, সেকথাও উল্লেখ করা হয়েছে ৷ অপারেশন সিঁদুরের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করা হয়েছে ৷ বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, এই সামরিক সংঘাত উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল । বামপন্থীরা স্বভাবতই উত্তেজনা বৃদ্ধি না করার জন্য ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিল । এখন দু'দেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি হয়েছে । বামপন্থীরা এই সংঘর্ষবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে ।
কিন্তু সংঘর্ষবিরতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘অনধিকার চর্চা’ বলে মনে করে বামফ্রন্ট ৷ তাদের বক্তব্য, কাশ্মীরের প্রশ্ন নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনও তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে কথা না বলা, মধ্যস্থতা না করা ভারতের দীর্ঘদিনের অবস্থান । ভারত সরকার ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলি এই প্রশ্নে একমত । সিমলা চুক্তির মর্মবস্তুও তাই । এই অবস্থায় ভারত এমন মার্কিন মধ্যস্থতা মেনে নিচ্ছে কেন, তার উত্তর কেন্দ্রীয় সরকারকেই দিতে হবে ।