নবগ্রাম, 25এপ্রিল: শ্রীময়ীর সঙ্গে বিয়ের জের এবার রাজনীতির আঙিনাতেও টের পেলেন কাঞ্চন মল্লিক ৷ বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও আজ তাঁকে প্রচার গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । গ্রামের মহিলারা কাঞ্চনকে দেখে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বলেই তাঁকে তিনবারের শ্রীরামপুরের সাংসদ প্রচারে রাখতে চাইছেন না বলে খবর ।
এ ব্যাপারে কল্যাণ বলেছেন, কাঞ্চনকে দেখে গ্রামের মহিলারা রিয়্যাক্ট করছেন ৷ তাই ব্যক্তি মানুষের জন্য সমষ্টিগত মানুষকে কষ্ট দিতে পারবেন না তিনি । যদিও কাঞ্চনের প্রশ্ন, "এ সব তাঁকে কারা বলছে জানি না ৷ এখনও পর্যন্ত আমার বিপক্ষে গিয়ে কেউ বিক্ষোভ দেখায়নি।" যদিও বিজেপি এই ঘটনাকে শাসকদলের গৃহযুদ্ধ বলে কটাক্ষ করেছে ৷
বৃহস্পতিবার কোন্নগর নবগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ভোট প্রচার ও জনসংযোগে বেরিয়েছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । কোন্নগর স্টেশন রোডে তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে থেকে শুরু হয় প্রচার । সেখানেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুড খোলা গাড়িতে উঠতে দেখা যায় উত্তরপাড়ার বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিককে । তখনই জনসমক্ষে তাঁকে নিয়ে প্রচার করতে বারণ করে দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । কর্মীদের সামনেই কাঞ্চন মল্লিককে নেমে যেতে বলেন তিনি । আর সেই অপমান সহ্য করতে না-পেরে কাঞ্চন মল্লিক গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে দলীয় কর্মীর বাইকে চড়ে এলাকা থেকে বেরিয়ে যান । তারপর থেকে তাঁকে আর প্রচারে দেখা যায়নি ৷
পরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "উনি মনক্ষুণ্ণ হয়েছেন কি হননি আমি জানি না । আমি ওঁকে নিয়ে আগেও প্রচার করেছি । উনি আমার সঙ্গে যখন প্রচারে বেরোচ্ছেন গ্রামের মহিলারা কিন্তু ভীষণ রিঅ্যাক্ট করছেন । আমি ওঁকে আগেই বলে দিয়েছিলাম গ্রামে এসো না । আর শুধু আমার সঙ্গেই প্রচারে কেন থাকছে ? একজন বিধায়ক সে তো নিজেও প্রচার করতে পারে, সেটা তো করছে না । আমাকে নির্বাচন করতে হচ্ছে ৷ মানুষের মন যা আছে তা তো বুঝতে হবে । আমি ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়, আমি সমষ্টিগত মানুষের জন্য । কোনও ব্যক্তিবিশেষের আনন্দ বা সুখের জন্য সমষ্টিগত মানুষকে কষ্ট দিতে পারব না ।"
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই স্ত্রী পিংকির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শ্রীময়ী চট্টরাজকে বিয়ে করেছেন অভিনেতা-বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক । তৃতীয় বিয়ে নিয়ে কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছে বিধায়ককে ৷ সেই নিয়ে নানা মিমও হয়েছে । মুঠোফোনের দৌলতে এসেছে নানারকম প্রতিক্রিয়া । যা নিয়ে উত্তরপাড়ায় তাঁর বিধানসভা এলাকার মানুষের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে । সেই সমস্ত কথা ও নানা গুঞ্জন কানে আসে তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের । সেই কারণেই তিনি কাঞ্চনকে তাঁর সঙ্গে প্রচারে রাখতে চাননি ৷
নবগ্রামের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অপূর্ব মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, "কাঞ্চন মল্লিক থাকলে মহিলাদের ভোট কম পড়তে পারে । উনি মহিলাদের সমালোচনার মধ্যে রয়েছেন । তাই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছেন কাঞ্চন যাতে প্রচারে না-থাকেন ।"
কানাইপুরে তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান দিলীপ যাদবের দাদা আচ্ছা লাল যাদব আবার এ ব্যাপারে কাঞ্চনের পাশে দাঁড়িয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দল প্রার্থী করেছে । কিন্তু কাঞ্চন জনপ্রতিনিধি ৷ একজন বিধায়ক । তাঁকে সর্বসাধারণের সামনে অপমান করার কারও অধিকার নেই । অফিসে বারণ করে দিতে পারতেন । আমাকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অপমান করেছেন আমি প্রতিবাদ করেছি । কর্মীদের সম্মান জানিয়ে তাঁকে এই নির্বাচন বিতরণী পাড় হতে হবে । এর প্রতিফলন তৃণমূল কংগ্রেসের উপরই পড়বে ।
এ ব্যাপারে বিজেপি প্রার্থী কবীর শঙ্কর বসু শাসকদলকে কটাক্ষ করে বলেছেন, "তৃণমূলের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে । তৃণমূলের সব কর্মী সমর্থকই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের খারাপ ব্যবহারে বিরক্ত । নবগ্রামে প্রচারে এসে কাঞ্চন মল্লিকের সঙ্গেও অন্যথা হয়নি । মানুষকে আহ্বান করব, যিনি নিজের দলের নেতা-কর্মীদের সম্মান করেন না, তিনি ভোটারদের কী সম্মান করবেন ? কী কাজ করবেন আপনাদের জন্য !"
আরও পড়ুন: