ছাব্বিশের ভোটের আগে পাহাড়ে ফের সক্রিয় গুরুং, পারবেন কি স্বমহিমায় ফিরতে?
ইতিমধ্যে বিমল গুরুং নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা করেছেন৷ সাক্ষাৎ করেছেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে৷ বিজেপির সঙ্গে জোট করেই লড়াইয়ের ইঙ্গিতও দিয়েছেন৷

Published : October 9, 2025 at 5:00 PM IST
দার্জিলিং, 9 অক্টোবর: কয়েকমাস পরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন৷ সেই ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই রাজ্যের রাজনীতিতে নানারকম সমীকরণ তৈরি হচ্ছে৷ যেমন, দার্জিলিং৷ সেখানে রাজনৈতিক সমীকরণের বদলের আভাস এখন থেকে মিলতে শুরু করেছে৷ কারণ, পাহাড়ে আবার বিমল গুরুংয়ের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে৷
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতির সাম্প্রতিক সব কাজকর্মই এর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন৷ 2021 সালের মতো এবারও তিনি বিজেপির সঙ্গেই থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ কিন্তু তাতে কি পাহাড়ের রাজনৈতিক সমর্থনে কোনও বদল হবে? আবার পুরনো কতৃত্ব কি ফিরে পাবেন মোর্চা সুপ্রিমো? প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিধ্বস্ততার মধ্যেও এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পাহাড়ে৷
গোর্খাল্যান্ডের দাবি ও পাহাড়ের রাজনীতি
দার্জিলিংকে কেন্দ্র করে গোর্খাল্যান্ডের দাবি নতুন নয়৷ একসময় এই দাবিকে পুঁজি করে পাহাড়ের রাজনীতিতে জাঁকিয়ে বসেছিল জিএনএলএফ৷ সেই সময়ে জিএনএলএফ সুপ্রিমো সুবাস ঘিসিংই ছিলেন পাহাড়ের একছত্র ‘অধিপতি’৷ কিন্তু তাঁকে কোণঠাসা করে একসময় পাহাড়ের রাজনীতির শীর্ষে চলে আসেন বিমল গুরুং৷ 2009 সালের লোকসভা ভোটে মূলত গুরুংয়ের মোর্চার সমর্থনেই বিজেপি দার্জিলিং লোকসভা আসনে জয়ী হয়৷
2014 সালেও এর পুনরাবৃত্তি হয়৷ তখন পাহাড়ে গুরুংই শেষকথা৷ 2017 সালে পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে 104 দিনের বনধ হয়। আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের গুলিতে মারা যান সাব ইনিস্পেক্টর অমিতাভ মালিক। তার মৃত্যুর পর থেকেই গা ঢাকা দেন বিমল গুরুং। সেই সময় থেকেই কার্যত পাহাড়ের রাজনীতির উপর গুরুংয়ের রাশ আলগা হতে শুরু করে৷
2021 সালে ফের পাহাড়ে ফেরেন তিনি। সেবার নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করে। কিন্তু তার পরেই ফের তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ছেড়ে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন করেন। যদিও ততদিনে পাহাড়ের রাজনীতিতে অনীত থাপা-বিনয়ং তামাংরা নয়া সমীকরণ তৈরি করে ফেলেছেন৷ 2021 এর বিধানসভা ভোটে পাহাড়ের তিন আসনের মধ্যেই দু’টো আসন দার্জিলিং ও কার্শিয়াং বিজেপির দখলে ও কালিম্পং যায় অনীত থাপার দখলে। দার্জিলিংয়ের আসনে বিজেপির প্রতীকে লড়াই করে জয়ী হন জিএনএলএফের সম্পাদক নীরজ জিম্বা ও কার্শিয়াং আসনটি পায় বিজেপির বিষ্ণু প্রসাদ শর্মা।
একুশের পর যখন জিটিএ নির্বাচনে মোর্চা প্রার্থী দিলেও বিমল গুরুং নিজে অংশগ্রহণ করেননি। তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় সামাজিক কাজ চালিয়ে গেলেও সরাসরি নির্বাচনে অংশ নেননি। জিটিএ নির্বাচনে অজয় এডওয়ার্ডয়ের তৎকালীন হামরো পার্টি, জিএনএলএফ ও বিজেপির সঙ্গে জোট করে লড়াই করে মোর্চা। কিন্তু তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। জিটিএ-র ক্ষমতায় আসে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা।
ছাব্বিশের ভোটের আগে পাহাড়ের রাজনীতির সমীকরণ
পাহাড়ের গত কয়েকটি নির্বাচনের নিরিখে বলা যায় মোর্চা কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে৷ বরং সেখানে এখন অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার আধিপত্য বেশি৷ এই পরিস্থিতিতে সেখানে আবারও প্রাসঙ্গিক হতে মরিয়া বিমল গুরুং ও তাঁর দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা৷ মাস দুয়েক আগে কলকাতায় এসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন বিমল গুরং-রোশন গিরিরা৷ বুধবার বিমল গুরুং দেখা করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে৷
দার্জিলিংয়ে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতেই গত মঙ্গলবার সেখানে আসেন রিজিজু৷ বুধবারও তিনি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন৷ সেই সুযোগেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিমল৷ সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা কিরেন রিজিজুকে জানিয়েছেন বিমল গুরুং। পাহাড়ের তিনটে আসনের মধ্যে অন্তত একটি আসন মোর্চাকে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিমল গুরুং। কিরেন রিজিজুর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে তিনি বলেন, "আমি কিরেন রিজিজুর সঙ্গে দেখা করে পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান ও 11 জনজাতির সমস্যার কথা জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জানাবেন।"
অন্যদিকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার 18তম প্রতিষ্ঠা দিবসে ফের একবার পাহাড়বাসীর কাছে সুযোগের দাবি করেন তিনি। 2026-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার পাহাড়ে প্রতিষ্ঠা দিবসে দার্জিলিংয়ের চৌরাস্তায় সভা করেন। তাঁর ওই সভায় পাহাড়ের বিজেপির একাধিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
এই বিষয়ে বিমল গুরুং বলেন, "এর আগে আমরা সরাসরি কোনও নির্বাচনে যাইনি। কিন্তু পাহাড়ের স্বার্থে আমরা লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হচ্ছি। পাহাড়ে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। টাকার বদলে সব কাজ হচ্ছে। তাই এবার লড়াই হবে। আমরা পাহাড়বাসীর কাছে একটা সুযোগ চেয়েছি। পাহাড়বাসী আমাদের সুযোগ দিলে দেড় বছরের মধ্যে পাহাড়ের নকশা বদলে দেব।"
দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, "বিমল গুরুং আমার রাজনৈতিক গুরু। তিনি প্রথম থেকেই বিজেপির সঙ্গে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। আগামীতে যদি তিনি বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় তাহলে স্বাগত। তবে এই সিদ্ধান্ত নেবে দল। আমরা মোর্চার সঙ্গে আছি।"
ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মুখপাত্র এসপি শর্মা বলেন, "মোর্চার এখন পাহাড়ে কোনও সাংগঠনিক শক্তি নেই৷ তাই এবার বিজেপি, জিএনএলএফ, অজয় এডওয়ার্ডদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে বিমল গুরুং। এতে লাভ হবে না। এসব নির্বাচনের খেলা।"
সময় যত এগোবে, ততই স্পষ্ট হবে যে বিমল গুরুং এবার ভোটে লড়ছেন কি না! তাঁর দল কি সত্যিই বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করবে? এতে পাহাড়ের রাজনীতি কোন খাতে বইবে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হবে৷

