শিলিগুড়ি, 8 অগস্ট: "হাতে ধরে আমাকে দফতরের কাজ শিখিয়েছিলেন বুদ্ধদা । কীভাবে ফাইল লিখতে হয়, ছোট ভাইয়ের মতো দেখিয়ে দিতেন", বৃহস্পতিবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণের পর স্মৃতির পাতা উলটে ইটিভি ভারতকে এই কথাই শোনালেন শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য ।
এ দিন সকালেই প্রয়াত হন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএমের প্রাক্তন পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ৷ দলে দীর্ঘদিনের অগ্রজ সহযোদ্ধার প্রয়াণের খবর পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে যান অশোক ভট্টাচার্যর । মনও ভারাক্রান্ত৷ তার মাঝেও তিনি শোনালেন বুদ্ধদেব সম্পর্কে নানা কথা ৷
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও খুব ছিমছাম জীবনযাপন করতেন বুদ্ধদেব । শিলিগুড়ি এলেই উঠতেন তৎকালীন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যর বাড়িতে । খেতেন খুব সাধারণ খাবার । অশোকবাবুর প্রয়াত স্ত্রী রত্না ভট্টাচার্যকে নিজের বোনের মতো দেখতেন ৷ অশোকবাবুর বাড়িতে উঠলে বোন রত্নার হাতে রান্না করা খাবারই খেতেন । আজও সেইসব স্মৃতি এতটুকুও ম্লান হয়নি অশোক ভট্টাচার্যর মন থেকে । শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র বলেন, "আমাদের বাড়িতে একটা ব্যাগ নিয়ে আসতেন । একটা পাঞ্জাবী সঙ্গে নিয়ে আসতেন । আজকের পশ্চিমবঙ্গ তাঁকে ছাড়া ভাবাই যায় না । এটা শুধু দলের ক্ষতি না, সারা রাজ্য সারা দেশের ক্ষতি ।"
1977 সালে প্রথম মন্ত্রী হয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । অশোক ভট্টাচার্যর সঙ্গে তাঁর সংগঠনের পথ চলা 1967 সাল থেকে । তখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দার্জিলিং জেলার সংগঠনের দায়িত্ব দিয়েছিল দল । সেই থেকেই পাহাড়ের সমস্যা, নকশাল সব দক্ষতার সঙ্গে সামলেছিলেন তিনি । 1991 সাল থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সঙ্গে অশোক ভট্টাচার্যর মন্ত্রিসভায় পথ চলা শুরু হয় । তখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী এবং অশোক ভট্টাচার্য ওই দফতরেরই প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ৷
সেই থেকেই দফতরের কাজ নিজ হাতে অশোক ভট্টাচার্যকে শিখিয়েছিলেন বুদ্ধদেব । এরপর 1996 সালেও দ্বিতীয় দফায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ডেপুটি হিসেবে ছিলেন অশোক ভট্টাচার্য । 2000 সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী হলে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের পূর্ণমন্ত্রী হন অশোক ভট্টাচার্য ।
তিনি জানালেন, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তরবঙ্গ সফরে এসে একবার অশোকের বাড়িতে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । রাতে শোওয়ার আগে জানলার পাশে নিজের পাঞ্জাবী ও ঘড়ি রেখেছিলেন ৷ সকালে উঠে দেখেন দু’টোই চুরি গিয়েছে । পরের দিন অগত্যা তাঁর পাঞ্জাবী পরেই কাজে বেরিয়ে ছিলেন বুদ্ধদেব ।
এক বছর আগেও কলকাতায় গিয়ে বুদ্ধদেববাবুর সঙ্গে দেখা করে তার শারিরীক পরিস্থিতির খবরাখবর নিয়েছিলেন অশোক ভট্টাচার্য । এদিন সকালে আচমকা এখন খবর পাবেন তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি ।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন শিলিগুড়িতে তৃতীয় মহানন্দা সেতু, শিলিগুড়ির ফ্লাই ওভার, ফাঁসিদেওয়ায় আনারস প্রসেসিং সেন্টারের মতো একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য । 2007 সালে দার্জিলিংয়ের ম্যালে সভাও করেছিলেন ।